---
গল্পের নাম: শেষ চিঠি
রফিক সাহেব ছিলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। সারা জীবন ছাত্রদের শিক্ষা দিয়েছেন নিষ্ঠা ও ভালবাসা দিয়ে। কিন্তু বয়সের ভারে এখন একা থাকেন পুরনো একটা গ্রামে, পুত্র-মেয়েরা সবাই শহরে ব্যস্ত জীবনে মগ্ন।
প্রতিদিন সকালবেলা উঠেই তিনি পুরনো একটা কাঠের আলমারি খুলে একটা খামে হাত দেন। সেটি তার স্ত্রীর শেষ চিঠি। মৃত্যুর আগে লেখা সেই চিঠিতে ছিল গভীর ভালোবাসার ছাপ—“তুমি ভালো থেকো, আমি ওপারেও তোমার অপেক্ষায় থাকব।”
এই চিঠি প্রতিদিন তাকে বাঁচার একটা কারণ দিত। ছেলেমেয়েরা যেভাবে তাকে ভুলে গেছে, এই চিঠিই তার কাছে একমাত্র আত্মীয় হয়ে দাঁড়ায়।
একদিন সকালে তিনি হাঁটতে বের হলেন গ্রামের প্রান্তে। হঠাৎ একটি ছোট ছেলে এসে তার পাশে দাঁড়ায়। ছেলেটি ভয়ে ভয়ে বলল, “চাচা, আমার বই নেই, স্কুলে সবাই হাসে…”
রফিক সাহেব মুচকি হাসলেন। তারপর নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে পুরনো বই বের করে বললেন, “এই নাও, এগুলো দিয়ে শুরু করো।”
সেই দিনের পর থেকে রফিক সাহেব আবার ক্লাস নেওয়া শুরু করেন গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য। বাড়ির উঠোনটাই হয়ে ওঠে ক্লাসরুম। ধীরে ধীরে তাঁর জীবন ফিরে পায় নতুন অর্থ।
একদিন হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সবাই মিলে তাকে হাসপাতালে নেয়। সেখানে ছেলেমেয়েরা আসে শহর থেকে। দেখে অবাক হয়—একটা গ্রামের শত শত শিশু তাদের বাবাকে ‘স্যার’ বলে ডাকে, চোখে জল ধরে না সবার।
রফিক সাহেব মৃদু কণ্ঠে বলেন, “জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন ভালোবাসা, তা পরিবারে হোক বা সমাজে।”
শেষ চিঠিটি তখনো তাঁর বালিশের নিচে। মৃত্যুর আগে চোখ বুজে মনের মধ্যে বললেন, “আমি ভালো আছি, তোমার অপেক্ষায় থাকব ওপারে…”
---
Raj000
Verwijder reactie
Weet je zeker dat je deze reactie wil verwijderen?