#মন_পাঁজরে_তুই
#আরেব্বা_চৌধুরী
#পর্বঃ ০২
-রাখ তোর ভালোবাসা, এখন এটা বল তোর গার্লফ্রেন্ডকে যে দেখালি না কাল কাকে উঠায় নিয়া আসবো?(আবইয়াজ)
-ভাই বিয়ের দিন কনে সাজে কে?(রাকিব)
-যার বিয়ে সে।(আবইয়াজ)
-কয়টা কনে থাকে?
-একটা।
-তাহলে কাকে উঠিয়ে আনতে হবে?
-কনে কে।
-এই তো বুঝে গেলি ভাই আমার তাহলে এতো প্রশ্ন করিস কেনো?(রাকিব)
-থাক দেখা লাগবে না আমার, কাল যাকে উঠায়া নিয়া আসবো তাকেই বিয়ে করবি তুই।(আবইয়াজ)
-এই তুই কি যাকে তাকে উঠিয়ে নিয়ে আসবি নাকি?
-পাগল নাকি আমি? কনেকেই নিয়ে আসবো।
-দেখিস ভাই সাবধানে।(রাকিব)
-ওকে তাহলে কাল দেখা হচ্ছে বাই।
বাড়িটি খাঁন বাড়ি নামে পরিচিত, আহনাফ খাঁন ও রাজিয়া খাঁনের জমজ দুই ছেলে ফাইয়াজ খাঁন ও আবইয়াজ খাঁন নিয়ে তাদের ছোট্ট সংসার।
দুই ছেলেই কোনো কাজের না সারাদিন বাইক নিয়ে ঠইঠই করে ঘুরে বেড়ায় আর দিন শেষে বাসায় ফিরে দুজনের ঝগড়া লেগেই থাকে। জমজ হওয়ায় দুই ছেলেকে আলাদা করে বাছাই করা মুশকিল বাইরের কেউ দুজনকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে পারবে না।
দুই ছেলেকে আলাদাভাবে চেনার জন্য রাজিয়া খাঁন ফাইয়াজের ডান হাতের পিঠে একটা তিল বসিয়ে দিয়েছিলেন।
দুজনকে আলাদা ভাবে সনাক্ত করার একমাত্র উপায় ফাইয়াজের হাতের এই তিল।
বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে ফাইয়াজ, ধড়াম করে পিঠের উপর কিছু একটা এসে পড়লো।
ওমাহ বলে ককিয়ে উঠলো সে, মাথা উঁচিয়ে দেখলো পিঠের উপর পিঠ ঠেকিয়ে আবইয়াজ চ্যাপ্টা হয়ে শুয়ে আছে।
-সর, আমার উপর থেকে সর! তাই তো বলি একশো কেজি ওজনের চালের বস্তা আমার উপরে এসে পড়লো কি করে।(ফাইয়াজ)
-ফাইয়াজ তোর জন্য একটা ভাবি নিয়ে আসবো ভাবছি।
-ফাটিয়ে একটা থাপ্পড় দিবো বেয়াদব আমি তোর বড় হই।(ফাইয়াজ)
-তো! তো কি হয়েছে? তুই আমার এক মিনিট বিশ সেকেন্ডের বড়, এটাকে কি কেউ বড় বলে?(আবইয়াজ)
-ওয়েট ওয়েট। তুই এটা কি পড়েছিস?(ফাইয়াজ)
-কেনো দেখতে পাচ্ছিস না তোর শার্ট পড়ে আছি।(আবইয়াজ)
-সব কিছুতেই বেশি বেশি করে ফেলিস তুই, আমার সব কিছুতেই তোর হাত দেওয়া লাগবে কেনো?
-তুই যেমন আহনাফ খাঁনের ছেলে আমিও তেমন আহনাফ খাঁনের ছেলে আর এগুলা আসে কোথা থেকে? বাপের গোডাউন থেকে সো এগুলোর উপর তোর যেমন অধিকার আছে তেমনই আমারও আছে।
-তোর কি মনে হয় না আবইয়াজ তুই বেশি বেশি করে ফেলিস?
-নাহ, একটুও নাহ।
-বের হ আমার রুম থেকে আর কখনো যদি দেখি এই রুমে পা রেখেছিস তাহলে পা ভেঙে হাতে ধরিয়ে দেবো।(ফাইয়াজ)
-হ্যাঁ তুই ভাঙবি আর আমি বসে বসে দেখবো।
-কি করবি তুই?
আবইয়াজ গিয়ে ফাইয়াজের খাটের উপর শুয়ে পড়লো।
-তুই রুমে আসতে বারণ করছিস না? দেখ আমি তোর খাটের উপর শুয়ে আছি এবার কি করবি কর।
-এ আম্মু।(চিৎকার করে উঠলো ফাইয়াজ)
-আমি কি রাজিয়াকে ভয় পাই? ডাক দে তোর বোনকে।
-তোর মতো বেয়াদবকে আম্মু কেমনে পেটে ধরছে আমার মাথায় আসে না।
-এখানে বেয়াদবির কি দেখলি? মাই চাচার মেয়ে ইজ মাই চাচাতো বোন,, মাই মামার মেয়ে ইজ মাই মামাতো বোন,, দ্যান মাই নানার মেয়ে ইজ মাই নানাতো বোন।
-চুপ থাক, বেয়াদব একটা হইছে।
-তাহলে শোন তোরে আমার ভবিষ্যৎ বাণী শুনাই।
-কি?
-ভবিষ্যতে আমার শাশুড়ী এসে আম্মুর সামনে দাঁড়িয়ে বলবে, মিসেস রাজিয়া খাঁন আপনি একটা বেয়াদব, জন্ম দিছেন আরেকটা বেয়াদব।
-তোর এসব ভবিষ্যৎ বাণী শোনার একটুও ইচ্ছে নেই আমার।
-আরে শোন না।
-তুই কি এখান থেকে যাবি আবইয়াজ?
-আচ্ছা যা ঘুমা, আমিও গিয়ে ঘুমাই বেশি খেয়ে ফেলছিলাম। খাবার হজম হচ্ছে না তাই তোর সাথে একটু ঝগড়া করে নিলাম এবার ভাল্লাগছে।
ঘামে দুর্গন্ধযুক্ত শার্টটা খুলে ফাইয়াজের মুখের উপর ছুড়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো আবইয়াজ।
-আবইয়ায়ায়ায়ায়ায়াজ।
ফাইয়াজের চিৎকার চেঁচামেচিতে তোয়াক্কা না করে নিজের রুমে এসে দরজা আটকিয়ে হাত পা ছড়িয়ে খাটের উপর শুয়ে রইলো আবইয়াজ।
সকালে ঘুম ভাঙলো ফোন কল আসার শব্দে, ঘুম ঘুম চোখে কল রিসিভ করে কানে তুললো আবইয়াজ।
-স্লা তুই ঘুমাতে ঘুমাতেই ওইদিকে বিয়ের কাজ শেষ হয়ে যাবে।(রাকিব)
-ঘুমাচ্ছি ভাই প্যারা দিস না।
-ভাই আজকে আমার গার্লফ্রেন্ডকে উঠিয়ে নিয়ে আসার কথা না?
-তাকে বল না নিজে নিজে চলে আসতে।
-তুই কাল এক কথা বললি আর আজ সুর পালটে ফেললি।
-চিল্লাস না আসতাছি। বলেই কল কেটে দিলো আবইয়াজ।
থ্রি-কোয়াটার প্যান্টের সাথে সাদা টি-শার্ট পড়ে এলোমেলো চুল হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বেরিয়ে গেলো আবইয়াজ, ড্রয়িং রুম থেকে ফের দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসলো সে।
আয়নায় ভালো করে একবার নিজেকে দেখে নিলো।
-এই ফকিরের বেশে কি কেউ বিয়ে বাড়ি যায়? যেহেতু বিয়ে বাড়ি সেহেতু অনেক সুন্দরী মেয়ে থাকবে আর আমি কিনা এভাবে যাবো।
দ্রুত ফাইয়াজের রুমের দিকে পা বাড়ালো আবইয়াজ, ওর আলমারি থেকে ভালো দেখে একটা শার্ট-প্যান্ট নিতে হবে।
দরজা ভেতর থেকে আটকানো। মানে ফাইয়াজ এখনো ঘুমাচ্ছে, বার কয়েক দরজায় ধাক্কা দিলো আবইয়াজ।ফাইয়াজ দরজা খুললো না।
এবার চিৎকার করে উঠলো, ফাইয়াজ আম্মু কেমন যেনো করেছে।
আবইয়াজের কান্না ভেজা গলা শুনে
বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলো আবইয়াজ।
আদি, রাকিব, সাদিন, রিফাত সবাই এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে আছে এখন শুধু আবইয়াজ আসার পালা।
রাকিবের কপালে চিন্তার ছাপ।
-তোরা পারবি তো ভাই?(রাকিব)
-উঠিয়ে নিয়ে আসতে না পারলেও বিয়ে ঠিকই ভেঙে দিয়ে আসতে পারবো এতো টেনশন নিস না।(রিফাত)
-আমরা বরং খাওয়ার পর্ব আগে সেরে ফেলবো পরে কনে উঠিয়ে নিয়ে আসবো, নাহলে হৈ-হুল্লোড় পড়ে গেলে আর খেতে পারবো না।(আদি)
-তোর শুধু খাই খাই আদি, যাচ্ছি একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজে।(রিফাত)
ইতিমধ্যে বাইক দিয়ে চারপাশ ধুলোর সাগর বানিয়ে সবার সামনে এসে দাঁড়ালো আবইয়াজ।
রাকিব আবইয়াজের দিকে তাকিয়ে বার কয়েক চোখের পাতা ফেললো।
-এএএএএ ভাই তুই মেয়ে