গল্প: শেষ বিকেলের চিঠি

রোদটা ঠিক ম্লান হয়ে আসছিল, গাছের পাতায় পড়ে আলোটা যেন ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাচ্ছিল। গ্রামের শেষ প্রান্তে পুরোনো একটি টিনের ঘর, জানালার পাশে বসে রোজিনার চোখ ছিল দূর আকাশে। হাতে চেপে ধরা একটি হলুদ খামে মোড়ানো চিঠি।

পাঁচ বছর আগে, সেই এক সন্ধ্যায় শহরের পথে পা রেখেছিল রোজিনা। স্বপ্ন ছিল, লেখাপড়া শেষ করে বড় চাকরি করবে, মায়ের কষ্টের জীবনটা বদলে দেবে। কিন্তু শহর বড় নিষ্ঠুর। চাকরির চেষ্টায় একরকম হাল ছেড়ে দিয়েছিল, ঠিক তখনই পরিচয় হয় সাকিবের সঙ্গে। সাকিব বলেছিল, “তোমার চোখে যে আগুন দেখি, সেটাই একদিন তোমায় উড়িয়ে নিয়ে যাবে।”

ভালোবাসাটা নিঃশব্দে গড়ে উঠেছিল। কিন্তু বাস্তবতা প্রেমের চেয়েও কঠিন। একদিন হঠাৎ সাকিবের চাকরি বদল, আর সাথেই যোগাযোগের ছেদ। রোজিনা বুঝেছিল, কিছু সম্পর্ক কেবল স্মৃতির মধ্যেই বেঁচে থাকে।

আজ হঠাৎ এই চিঠি। সাকিব লিখেছে—
"রোজি, জানি অনেক দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু জানো, তোমার মুখটা আমার বুকপকেটের ছবিতে এখনো আগের মতোই জ্বলজ্বল করে। ফিরে যেতে পারি না, কিন্তু তোমার কাছে ক্ষমা চাই। তোমার স্বপ্নের মানুষটা হতে পারিনি বলে..."

রোজিনা চোখ বন্ধ করল। চিঠিটা বুকের কাছে ধরে রাখল কিছুক্ষণ। তারপর ধীরে ধীরে জানালার পাশ থেকে উঠে দাঁড়াল। চিঠিটা পুড়িয়ে দিল মৃদু আগুনে। আরেকবার হাঁটবে, কিন্তু এবার শুধু নিজের জন্য। এইবার সে কারো অপেক্ষা করবে না।

#sifat10