শেষ ট্রেন
রাত তখন প্রায় সাড়ে এগারোটা। শহরের শেষ ট্রেন ধরার জন্য হন্তদন্ত হয়ে দৌড়াচ্ছে অর্ণব। অফিসের বাড়তি কাজ, তারপর রাস্তায় জ্যাম—সব মিলিয়ে তার মাথা গরম। ট্রেনটা মিস হলে শহরে ফেরার উপায় নেই। শেষ ট্রেন মানেই একমাত্র ভরসা।
ছুটতে ছুটতে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছেই দেখলো, ট্রেন ছাড়তে শুরু করেছে। হুঁশ ফেরার আগেই শেষ বগিতে লাফিয়ে উঠে গেলো সে। ভেতরে উঠে খানিক দম নিতে নিতে আশেপাশে তাকিয়ে থমকে গেলো—সারা ট্রেনে সে ছাড়া আর কেউ নেই! না কোনো যাত্রী, না কোনো গার্ড। বাতি নিভু নিভু করে জ্বলছে, জানালার বাইরে অন্ধকার ছুটে চলেছে।
হঠাৎ এক বৃদ্ধের গলা—“এই ট্রেনে উঠলে নামার উপায় নেই বাবা…”
অর্ণব চমকে উঠে পাশ ফিরলো। এক বয়স্ক লোক এক কোণায় বসে আছে। চোখে অদ্ভুত চাহনি। গলার স্বর ছিলো গভীর, যেন বহু বছর ধরে না বলা কোনো কথার ভার।
অর্ণব বললো, “আপনি কে? কন্ডাক্টর কোথায়?”
লোকটি হেসে বললো, “এই ট্রেন আবার চলেছে বিশ বছর পর। শেষবার যখন চলেছিল, আমি ছিলাম। তুমি নামতে পারবে না আর…”
ট্রেনটা এবার যেন গতি বাড়ালো। বাইরে আর স্টেশন দেখা যাচ্ছে না, শুধু একরাশ ধোঁয়া আর অন্ধকার।
অর্ণব জানালায় মুখ বাড়িয়ে দেখলো, তার প্রতিবিম্ব নেই! হঠাৎ মনে হলো, ট্রেনটা চলছে কিন্তু কোথাও পৌঁছাচ্ছে না। যেন সময়ের বাইরে একটা যাত্রা।
পরদিন সকালে, স্টেশনের কর্মীরা দেখে বিস্মিত—রাতের শেষ ট্রেন তো তোশীপুর স্টেশনে ঢুকেছে, অথচ কেউ নামেনি। শেষ বগিতে একা পড়ে ছিল অর্ণব। কিন্তু তার চোখ স্থির, দেহ ঠান্ডা। মুখে অদ্ভুত এক প্রশান্তি।
তার পাশে পড়ে ছিল একটা ছেঁড়া টিকিট, পেছনে লেখা—“শেষ ট্রেন সবসময় শেষ হয় না, কিছু ট্রেন চিরকাল চলে, যাত্রীদের নিয়ে অজানার পথে।”
#sifat10