কিস্সা গল্প: বটতলার বুড়ি
গ্রামের প্রবেশপথে বিশাল একটা পুরনো বটগাছ। গাছটার বয়স কেউ ঠিকমতো বলতে পারে না। লোকমুখে শোনা, এটি দেড়শ বছরের পুরনো। সেই গাছের নিচে প্রতিদিন বিকেল হলেই দেখা যায় এক বৃদ্ধা নারীকে—রোদে পোড়া মুখ, সাদা কাঁচাপাকা চুল, গায়ে মলিন শাড়ি। হাতে এক ছেঁড়া ঝোলা ব্যাগ। কারো কিছু দিলে নেয়, না দিলে চুপচাপ বসে থাকে। আর মাঝে মাঝে ফিসফিস করে কিছু বলে—"তুই ভালো থাকিস, বাছা…"
শিশুরা ভয় পায় তাকে, কেউ কেউ বলে, “ও বটতলার পেত্নী।” তবে গ্রামের কিছু বয়স্ক মানুষ জানে, সে একসময় ছিলো জমিদার বাড়ির মেয়ে—রাধারাণী। পড়াশোনা জানা, গান জানা, সুন্দরী আর সাহসীও ছিলো। অথচ তার জীবন এমন হলো কেন?
বলা হয়, যুবক বয়সে সে ভালোবেসেছিলো এক শিক্ষককে—গরিব, অথচ চরিত্রবান। কিন্তু রাধারাণীর বাবা ছিলেন রাগী জমিদার। তিনি ভালোবাসাকে লাঞ্ছনা মনে করেছিলেন। গোপনে রাধারাণী বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল প্রেমিকের সঙ্গে। কিন্তু রাতে তার প্রেমিক হারিয়ে যায়। কেউ বলে, তাকে মেরে ফেলা হয়; কেউ বলে, সে ভয়ে পালিয়ে যায়।
রাধারাণী আর কখনো বাড়ি ফেরেনি। ধীরে ধীরে সে পরিণত হয় এই বটতলার বুড়িতে। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে সে চুপ করে, কখনো কখনো শুধুই বলে—“সে আসবে… কথা দিয়েছিলো…”
সেই থেকে বটতলার নিচে তার ঠাঁই। বৃষ্টি, রোদ, ঝড়—সব পেরিয়ে সে বসে থাকে প্রতিদিন। গ্রামের ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে শহরে চলে যায়, নতুন প্রজন্ম আসে, কিন্তু বুড়ি থেকে যায় এক জায়গায়। যেন এক জীবন্ত প্রতীক্ষা।
একদিন বিকেলে, হঠাৎ দেখা গেলো বটগাছের নিচে আর বুড়ি নেই। তার জায়গায় পড়ে আছে একটা পুরনো ছবি—এক তরুণ-তরুণীর, হাতে হাত রেখে তোলা ছবি। পেছনে লেখা—“প্রতীক্ষা শেষ হবে, যখন সময় থেমে যাবে।”
সে কি অবশেষে চলে গেলো তার প্রিয়জনের কাছে?
#sifat10