বন্ধ জানালা
তিথি সদ্য শহরে নতুন ফ্ল্যাটে উঠেছে। বাড়িটা পুরনো হলেও ভাড়া কম, তাই সে বেশি ভাবেনি। তার ঘরের এক পাশে একটা জানালা আছে, যেটা সবসময় বন্ধ—জং ধরা, খোলা যায় না। ফ্ল্যাট মালিক বলেছিলো, “ওটা খুলতে নেই, পুরনো কাঠ নড়বড়ে, পড়ে যেতে পারে।”
তিথি প্রথমে আমল দেয়নি। কিন্তু কয়েকদিন পর থেকেই কেমন অস্বস্তি লাগতে শুরু করলো। প্রতিরাতে ঘুমাতে গেলে মনে হয়, কেউ যেন জানালার ও পাশে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে। জানালা দিয়ে আলো আসেনি কখনো, শুধু অন্ধকার। আবার কখনো মাঝরাতে জানালার কাছ থেকে ভেসে আসে এক ফিসফিসানি—“তুই কি আমাকে দেখতে পাবি?”
তিথি ভয় পায়, কিন্তু সাহস করে একদিন জানালার পাটে হাত দেয়। ধুলো ঝরতে থাকে, কাঠে ছ্যাঁকা খায় আঙুল। হঠাৎ সে দেখে, জানালার কোণে আঁকা ছোট একটা প্রতিকৃতি—এক কিশোরী, চোখে বিষণ্নতা। নিচে লেখা—“মীনু, ১৯৮৩।”
পরদিন তিথি নিচের বৃদ্ধ দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করে। লোকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “এই ঘরে এক মেয়ে থাকতো… অনেক বছর আগে। একদিন জানালার পাশেই আত্মহত্যা করেছিলো। বলে, তার আত্মা জানালার ওপাশে রয়ে গেছে। তাই জানালাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়। যে খোলে, সে নাকি স্বপ্নে দেখতে পায় তাকে—আর তারপর…”
সেই রাতে তিথির ঘুম ভাঙে গা শিউরে ওঠা এক শব্দে—জানালার খড়খড়ানি। কিন্তু সে তো বন্ধই ছিলো! আলো জ্বালিয়ে দেখে, জানালাটা সামান্য ফাঁক হয়ে আছে। আর জানালার কাচে জমে থাকা ধুলোর মাঝে লেখা—“তুই দেখতে পারিস তো, তিথি?”
তিথি আর এক মুহূর্তও না ভেবে ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যায়। সেই জানালা আজও বন্ধ, কিন্তু মাঝে মাঝে কেউ বলে, ফিসফিস করে শোনা যায় এক কিশোরীর প্রশ্ন—“তুই কি দেখতে পাবি আমাকে?”
#sifat10