ভাঙা ঘড়ি
আয়ান পুরনো জিনিসের সংগ্রাহক। একদিন শহরের প্রান্তের এক জীর্ণ বাজার থেকে সে কিনে আনে একটা অদ্ভুত প্রাচীন ঘড়ি—ধাতব ফ্রেম, কালচে ডায়াল, আর ভেতরে লেখা “১৯০১”। ঘড়িটা থেমে আছে, সময় দেখায় রাত ২টা ১৯ মিনিট। দোকানি বলেছিল, “চালু হয় না, কিন্তু ওটা সাজাতে ভালোই।”
ঘরে এনে আয়ান ঘড়িটা দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয়। কিন্তু পরদিন রাতে, ঘুমের মাঝে হঠাৎ ঘড়ির টিকটিক শব্দে তার ঘুম ভাঙে। অবাক হয়ে দেখে, ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে… সময় ঠিক ২টা ১৯ বাজছে।
সে ভাবলো, বুঝি ব্যাটারির সংযোগে আপনা থেকেই কাজ শুরু করেছে। কিন্তু পরদিনও, ঠিক একই সময়ে ঘড়িটা টিকটিক করে জেগে ওঠে। এবার টিকির সাথে সাথে সে শুনতে পায় দরজায় ধীরে ধীরে আঘাতের শব্দ… ধুপ… ধুপ…
আয়ান সাহস করে দরজা খোলে, কিন্তু কেউ নেই। করিডরে নিঃঝুম রাত, নিঃসঙ্গ বাতি জ্বলছে। পরদিন সে ঘড়িটা খোলার চেষ্টা করে, ভেতরে একটা ছোট কাগজ পায়। তাতে লেখা—“যখন ঘড়ি চলে, তখন অতীত জেগে ওঠে।”
আয়ান এরপর থেকে প্রতিদিন রাতে ২টা ১৯-তে জেগে ওঠে। আর দেখতে পায়, ঘরের আয়নায় এক যুবক দাঁড়িয়ে—চোখে রক্তজবা রঙের ছায়া, ঠোঁটে শূন্য হাসি। এক রাতে সে নিজেই বলে ওঠে, “তুই আমার সময় চুরি করেছিস…”
ঘড়িটা আয়ানের জীবনে বিভ্রান্তি আনতে থাকে। সে খেতে পারে না, ঘুমোতে পারে না। একদিন সে ঘড়িটা ফেলে ভেঙে দেয়, ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের বাতি নিভে যায়। আর শেষবারের মতো সে শুনতে পায়—“সময় থেমেছে, এখন তোর পালা।”
সেই রাতের পর থেকে আয়ান নিখোঁজ। তার ঘরে শুধু একটা থেমে থাকা ঘড়ি, যেটা আজও ২টা ১৯-এ নিজে থেকেই কাঁটা ঘোরায়। আর মাঝে মাঝে, আয়নার ভেতরে দেখা যায় একটা ছায়া… তাকিয়ে আছে চুপচাপ।
#sifat10