নীরা একা থাকে। বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে। শহরের কোলাহল থেকে দূরে নিজের ছাদে বাগান করে দিন কাটায়। টবে টবে সাজানো গাঁদা, রজনীগন্ধা, টগর, কেয়া—তার সন্তানের মতো।
প্রতিবেশীরা বলে, “আপনার ছেলে-মেয়ে নেই? এমন সুন্দর বাগান শুধু একাকীত্ব থেকেই হয়।” নীরা হেসে বলে, “আছে তো, কিন্তু ওরা কান দেয় না।”
প্রতিদিন সকালে নীরা ছাদে উঠে গাছগুলোর সঙ্গে কথা বলে। “তুই কেমন আছিস গাঁদা? আজ একটু বেশি হেসেছিস মনে হয়।” কিংবা “টগর, তোকে কাল রাতে ঝড় খুব নাচিয়েছে না?”
নিচতলার বাচ্চারা মাঝে মাঝে চুপি চুপি উঠে আসে ছাদে। নীরা তাদের বলে, “গাছের ডাল ভেঙো না। গাছও ব্যথা পায়, জানো?” বাচ্চারা অবাক হয়ে ভাবে, গাছও কাঁদে নাকি!
একদিন এক কিশোরী ছাদে এসে দাঁড়ায়—মুখে অভিমানের ছাপ। বলে, “আমার মা বলে, আপনি পাগল। কিন্তু আমি জানি, আপনি ঠিক।”
নীরা মুচকি হেসে বলে, “তুই জানিস কেন?”
মেয়েটি বলে, “কারণ আমি বুঝি, গাছেরা কথা বলে। আর আমি যখন দুঃখ পাই, আমার একটা টগর গাছও কাঁদে।”
নীরা ওর কাঁধে হাত রাখে। তারপর বলে, “তুই মাঝে মাঝে আসিস। ওরা তোদের ভালোবাসা চায়। আর তোকে কিছু শিখিয়ে দেবে, যা মানুষও দিতে পারে না।”
সেই দিন থেকে ছাদবাগানে নতুন একটি ফুল ফোটে। তার নাম রাখে ‘মৈত্রি’। কারণ সেদিন একা নীরা আর একা থাকে না।

hanif ahmed Romeo
Kommentar löschen
Diesen Kommentar wirklich löschen ?