কালো বেড়াল
দেবীনগরের শেষ প্রান্তে ছোট একটা কুঁড়েঘরে থাকত হরিমণি বুড়ি। সে ছিল নিঃসন্তান, নিঃসঙ্গ, কিন্তু রোজ সন্ধ্যায় তার উঠোনে আসত এক কালো বেড়াল। বুড়ি পাটায় পিষে দুধ বানাত আর বেড়ালটাকে খাওয়াত, মাথায় হাত বুলিয়ে বলত, “তুইই আমার একমাত্র সঙ্গী।”
গ্রামের লোকজন বলত, “ওটা জ্বীনের পেট, রাতে বাড়ি বাড়ি ঘোরে।” কেউ আবার বিশ্বাস করত, ওই বেড়ালটা আসলে মানুষ ছিল, যার ওপর কোন এক অভিশাপ পড়ে গেছে। হরিমণি এসব কানে তুলত না, সে বেড়ালের চোখে নিজের হারিয়ে যাওয়া ছায়া খুঁজে পেত।
এক রাতে ঝড় ওঠে। হাওয়ার মধ্যে বেড়ালটা আসে না। হরিমণি অপেক্ষা করে করে ঘুমিয়ে পড়ে। মাঝরাতে আচমকা দরজা ঠেলে ঘরে ঢোকে ছায়ামতো এক মানুষ। গায়ের ছায়া কালো, চোখে বেড়ালের মতো দীপ্তি। সে মৃদু স্বরে বলে, “তোমার দয়া আমায় বাঁচিয়েছে। আমি ছিলাম অভিশপ্ত, শত বছর ধরে পশুরূপে ঘুরছিলাম। আজ তোমার ভালোবাসা আমাকে মুক্ত করল।”
হরিমণি কিছু বলার আগেই ছায়াটা মিলিয়ে যায় ঝড়ের রাতে। পরদিন উঠোনে বেড়ালের পায়ের ছাপের পাশে দেখা যায় মানুষের পায়ের ছাপ। এরপর আর কখনও সেই বেড়াল বা ছায়া ফেরে না।
আজও কেউ ওই পথ দিয়ে গেলে বলে—“ভালোবাসা শুধু মানুষকেই বদলায় না, অভিশাপকেও ভাঙতে পারে।”
#sifat10