10 w ·Translate

রাতের বাস

শহরের শেষ বাস সারারাত চলত না। তাই যারা রাতে আটকে যেত, তাদের জন্য অজানা একটা ভয় থেকে যেত। একদিন নাহিদ নামের এক তরুণ অফিস কর্মী কাজ শেষে বাস মিস করল। রাত হয়ে গেছে, এবং তার কাছে আর কোনো সড়ক বাহন নেই। বাসস্ট্যান্ডের এক কোণে দাঁড়িয়ে সে অপেক্ষা করল, হয়তো শেষ কোনো বাস আসবে।

হঠাৎ ঘন কুয়াশার মধ্যে থেকে এক অদ্ভুত, পুরনো ডিজাইনের বাস ধীরে ধীরে এসে থামল। বাসের জানালা সব ধুলোয় ঢাকা, চালক দেখা যাচ্ছিল না। নাহিদ কিছু ভাবতে পারল না, ভেবে উঠল হয়তো অন্য কোনো বাস।

কৌতূহলবশত সে উঠল সেই বাসে। কিন্তু বাসের ভেতর সম্পূর্ণ ফাঁকা, চেয়ারগুলো যেন কারো জন্য প্রস্তুত নয়। বাস চালু হল, কিন্তু চালককে দেখতে পাওয়া গেল না।

বাস চলতে থাকল শহরের গলি পেরিয়ে, যেখানে কখনো সাধারণ যানজট থাকে না। নাহিদ হতবাক হয়ে দেখল, বাসটি শহর থেকে বেরিয়ে ক্রমশ অজানা অন্ধকার পথে ঢুকছে। চারদিকে নীরবতা, শুধু বাসের টায়ারের আওয়াজ।

বাসের ভেতর বাতাস একদম ঠাণ্ডা, যেন শীতলতা নাহিদের শরীরে প্রবাহিত হচ্ছে। সে অনুভব করল, বাসের ভিতর তার স্মৃতির ভাঁজ খুলে যাচ্ছে, পুরনো ভুল, হারানো মুহূর্তগুলো যেন বাসের দেয়ালে ঝলকাচ্ছে।

হঠাৎ নাহিদ দেখতে পেল বাসের সামনে এক বিশাল ক্যানভাসের মতো কালো পর্দা, যেখানে তার জীবনের সমস্ত ছবি দ্রুত চলতে শুরু করল। বাস থামল, দরজা খুলল, কিন্তু বাইরে ছিল এক অন্ধকার শুন্যতা, কোন রাস্তা নেই, কেবল শূন্যতা।

নাহিদ বুঝল, বাসটি তার জীবনকালের শেষ যাত্রা। বাস থেকে নামার দরজা বন্ধ, আর সে আটকে গেল সেই অনন্ত পথে।

পরদিন কেউ বাসটি আর দেখেনি, আর নাহিদের সন্ধান মেলেনি।

শহরের লোকেরা বলে, “যারা রাতে সেই বাসে ওঠে, তারা ফিরে আসে না, কারণ বাসটি সময় ও বাস্তবতার সীমানা পার করে দেয়।”

#sifat10