মৌরীফুল 6

বড়দের রোম্যান্টিক গল্প, ধারাবাহিক/ পার্ট-০৬

[পার্ট 05, শেষ অংশ হতে.....]

 

 

সুশীলার রকম-সকম দেখিয়া বউটির খুব হাসি পাইতে লাগিল। সে বলিল— এত ঘোমটা কীসের ভাই? তুমি আর আমি ছাড়া তো আর কেউ এদিকে নেই, নাও এসো, ঘোমটা খোলো, একটু গল্প করি।

এই কথা বলিয়া বউটি নিজেই সুশীলার ঘোমটা খুলিয়া দিল—সুশীলার সুন্দর মুখের দিকে চাহিয়া সে যেন মুগ্ধ হইয়া গেল; রং যদিও ততটা ফরসা নয়, কিন্তু কালোর উপর অত শ্রী সে কখনো দেখে নাই, নদীর ধারের সরস সতেজ চিক্কণ শ্যাম-কলমিলতারই মতো একটা সবুজ লাবণ্য যেন সারা মুখখানায় মাখানো। মুখখানি দেখিয়াই সে এই নিরাভরণা পাড়াগাঁয়ের মেয়েটিকে ভালোবাসিয়া ফেলিল। জিজ্ঞাসা করিল—উনি বসে আছেন কে ভাই, শাশুড়ি?

—হ্যাঁ।

–এসো, আর একটু সরে এসো ভাই, দুজনে গল্প করি আর দেখতে দেখতে যাই। তোমার বাপেরবাড়ি কোথায় ভাই?

সুশীলার ভয় কাটিয়া যাইতেছিল, সে বলিল—সে হল শিমলে।

—কোন শিমলে? কলকাতা শিমলে?

কলকাতায় শিমলে আছে নাকি? কই তাহা তো সুশীলা কোনোদিন শোনে নাই। সে বলিল—আমার বাপেরবাড়ি এখান থেকে বেশি দূর নয়, পাঁচ-ছ ক্রোশ পথ, গোরুরগাড়ি করে যেতে হয়।

নদীর ধারে যবখেত, সর্ষেখেত, বুনো গাছপালা দেখিয়া বউটি খুব খুশি। এসব সে পূর্বে বড়ো দেখে নাই, আঙুল দিয়া একটা মাছরাঙা পাখি দেখাইয়া বলিল— বাঃ বড়ো সুন্দর তো! ওটা কী পাখি ভাই?

–ওটা তো মাছরাঙা পাখি, তুমি দেখোনি কখনো?

বউটি বলিল—ভাই, আমি কলকাতার বাইরে অ্যাদ্দিন পা দিইনি, খুব ছেলেবেলায় একবার বাবার সঙ্গে চন্দননগরে বাগানবাড়িতে যাবার কথা মনে আছে, তারপর এই আসছি—তুমি আমায় একটু দেখিয়ে নিয়ে চলো। এটা কীসের খেত ভাই?

সুশীলা দেখিল তাহার সঙ্গিনী আঙুল দিয়া নদীর ধারের একটা মৌরীর খেত দেখাইতেছে—প্রথমটা সে সঙ্গিনীর চোখ-ঝলসানো রং, অদৃষ্টপূর্ব দামি সিল্কের শাড়ি, ব্লাউজ এবং চিকচিকে নেকলেসের বাহার দেখিয়া যে ভয় অনুভব করিতেছিল, তাহার অজ্ঞতা দেখিয়া সুশীলার সে ভয় কাটিয়া অজ্ঞ সঙ্গিনীর উপর একটু স্নেহ আসিল—কলিকাতায় মাছরাঙা পাখি, মৌরীখেত, এসব সামান্য জিনিসও নাই নাকি? সুশীলা হাসিয়া বলিল—তুমি ফুলের গন্ধ দেখে বুঝতে পারো না ভাই? ও তো মৌরীর খেত। কেন, আমাদের বাপেরবাড়ির গাঁয়ে কত তো মৌরীর খেত আছে—মৌরীর শাক কখনো খাওনি? কলকাতায় বুঝি নেই?

কলিকাতার বউটি বুঝাইয়া দিল যে কলিকাতার অতীত ইতিহাসের সে খবর রাখে না, বর্তমান অবস্থায় সেখানে মৌরীখেত প্রভৃতি থাকা সম্ভবপর নয়, তবে ভবিষ্যতে কী হয় বলা যায় না।

ঘণ্টাখানেক পরে যখন নৌকা শিবতলার ঘাটে গিয়া লাগিল, তখন তাহাদের দুজনের মধ্যে অনেক ঘনিষ্ঠ রকমের কথাবার্তা হইয়া গিয়াছে। সঙ্গিনীর মুখে স্বামীর আদরের গল্প শুনিয়া সুশীলার মনের মধ্যে একটা গোপন ব্যথা জাগিয়া উঠিল—সেটা সে অনবরত চাপিবার চেষ্টা করে, তবু কী জানি সেটা ফাঁক পাইলেই মাথা তোলে। প্রথম বিবাহের পর তাহার স্বামীও তো তাহাকে কত আদর করিত, রাত্রে ঘুমাইতে না-দিয়া নানা গল্পে ভুলাইয়া জাগাইয়া রাখিত, সুশীল পান খাইতে চাহিত না বলিয়া কত সাধ্যসাধনা করিয়া পান মুখে তুলিয়া দিত— সেই স্বামী তাহার কেন এমন হইল? তাহার বুকটার মধ্যে কেমন হু হু করিয়া উঠিল।

দুজনে তাহারা খানিকক্ষণ গাছের ছায়ায় নদীর ধারে এদিকে-ওদিকে বেড়াইল, কী সুন্দর দেখায় চারিদিক!…নীল আকাশ সবুজ মাঠের উপর কেমন উপুড় হইয়া আছে!…ওমা, পানকৌড়ির ঝাঁক চরের উপর বসিয়া বসিয়া কেমন ঝিমায়!…


Fahad Alim

19 Blog indlæg

Kommentarer

📲 Download our app for a better experience!