মৌরীফুল 9

বড়দের রোম্যান্টিক গল্প, ধারাবাহিক/ পার্ট-০৯

[পার্ট ০৮, শেষ অংশ হতে.....]

 

 

মোক্ষদা ঠাকরুনকে বউটি বড়ো ভয় করে তিনি থাকিলে জিনিসপত্র তো দেনই না, যদি বা দেন তাহা বহু মিষ্ট বাক্যবর্ষণ করিবার পর। তবু বউটির আসিতে হয়, কী করিবে, অভাব। সুশীলা তাহাকে মোক্ষদা ঠাকরুনের হাত হইতে বাঁচাইয়া গোপনে এটা-ওটা যখন যাহা দরকার সাধ্যমতো সাহায্য করিত। সামান্য একবাটি তেল লইয়া গেলেও হুঁশিয়ার মোক্ষদা ঠাকরুন তাহা কখনও ভুলিতেন না —গলা টিপিয়া কড়া-ক্রান্তিতে তাহা আদায় করিয়া ছাড়িতেন।

সুশীলা ছিল অগোছাল ও অন্যমনস্ক ধরনের মানুষ, সে ধার দিয়া অতশত মনেও রাখিত না, বা সামান্য তেল-নুন ধার দিয়া আদায় করিবার কোন চেষ্টাও করিত না—শোধ দিতে আসিলে অনেক সময় বলিত—ওই তুই আবার দিতে এলি কেন ভাই ছোটো বউ, ওর আবার নেব কী? যা, ও তুই নিয়ে যা ভাই।

সুশীলা আপন মনে খানিকক্ষণ বকিয়া বউটির দিকে চাহিয়া বলিল—তারপর, তোর রান্নাবান্না?

বউটি বাটিটা আঁচল দিয়া ঢাকিয়া রাখিয়াছিল, বাহির করিয়া কুণ্ঠিতভাবে বলিল —সেদিনকার সেই তেল নিয়ে গিয়েছিলাম দিদি, তা আমাদের এখনও আনা হয়নি। আজ রাঁধবার তেল নেই—একসঙ্গে দু-দিনের দিয়ে যাব—সেইজন্যে…

সুশীলা বলিল—আচ্ছা, নিয়ে আয় দেখি বাটি। দেখি কী আছে, আমাদেরও বুঝি তেল আনা হয়নি।

পাত্রে যতটুকু তেল ছিল সুশীলা সবটুকু এই কুণ্ঠিতা দরিদ্রা গৃহলক্ষ্মীটিকে ঢালিয়া দিল। বউটি চলিয়া যাইবার সময় মিনতিপূর্ণ দৃষ্টিতে চাহিয়া বলিল—লক্ষ্মী দিদি, দাও রান্না চড়িয়ে…

সুশীলা বলিল—তুই পালা দেখি—আমি ওদের মজা না-দেখিয়ে আজ আর কিছুতেই ছাড়ছি নে…

বেলা বারোটার সময় মোক্ষদা ঠাকরুন আসিয়া দেখিয়া-শুনিয়া হইচই বাধাইয়া দিলেন। প্রকৃতই ইহাতে রাগ হইবার কথা। একটু পরে রামতনু আসিলেন, তিনি ব্যাপার দেখিয়া দালানে গিয়া আপন মনে তামাক টানিতে শুরু করিলেন। ঝগড়া ক্রমে খুব চাগাইয়া উঠিল, মোক্ষদা উচ্চৈ:স্বরে সুশীলার কুলজি গাহিতে লাগিলেন।

সুশীলাও যে খুব শান্তশিষ্ট, এ অপবাদ তাহাকে শত্রুতেও দিতে পারিত না, কাজেই ব্যাপার যখন খুব বাধিয়া উঠিয়াছে, এমন সময় কোথা হইতে কিশোরী আসিয়া হাজির হইল—যদিও আজ তাহার ফিরিবার কথা ছিল না, তবুও কাজ মিটিয়া যাওয়াতে সে আর সেখানে অপেক্ষা করে নাই। মোক্ষদা ছেলেকে পাইয়া হাঁকডাক আরও বাড়াইয়া দিলেন। কিশোরী এত বেলায় বাড়ি আসিয়া এ অশান্তির মধ্যে পড়িয়া অত্যন্ত চটিয়া গেল—তাহার সমস্ত রাগ গিয়া পড়িল স্ত্রীর উপর। হাতের গোড়ায় একখানা শুকনো চেলা-কাঠ পড়িয়াছিল, সেইটা লইয়াই লাফাইয়া সে রান্নাঘরের দাওয়ায় উঠিল।

সুশীলা তখনও বসিয়া বাটনা বাটিতেছিল—স্বামীকে শুকনা কাঠ হাতে লইয়া বীরদর্পে রান্নাঘরে লাফাইয়া উঠিতে দেখিয়া ভয়ে তাহার মুখ শুকাইয়া গেল—আত্মরক্ষার অন্য কোনো উপায় না-দেখিয়া হাত দুটা তুলিয়া নিজের দেহটা আড়াল করিবার চেষ্টা করিল—কিশোরী প্রথমত স্ত্রীর খোঁপা ধরিয়া এক হেঁচকা টান দিয়া তাহাকে মাটিতে ফেলিয়া দিল, তারপর তাহার পিঠে কয়েক ঘা চেলা-কাঠের বাড়ি মারিয়া তাহার গলা ধরিয়া প্রথমে এক ধাক্কা মারিল রান্নাঘরের দাওয়ায় এবং তথা হইতে এক ধাক্কা দিল একেবারে উঠানে। ধাক্কার বেগ সামলাইতে না-পারিয়া সুশীলা মুখ থুবড়িয়া উঠানে পড়িয়া গেল—মার আরও চলিত, কিন্তু রামতনু তামাক খাইতে খাইতে ছেলের কাণ্ড দেখিয়া হাঁ হাঁ করিয়া আসিয়া পড়িলেন।


Fahad Alim

19 Blog indlæg

Kommentarer

📲 Download our app for a better experience!