বিসর্জন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কালজয়ী নাটক, যা সমাজ, ধর্ম, এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের দ্বন্দ্বকে তুলে ধরে। গল্পটির কেন্দ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিসর্জন বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য সৃষ্টি, যা ধর্মান্ধতা, মানবিক মূল্যবোধ, এবং ব্যক্তিগত দ

বিসর্জন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি কালজয়ী নাটক, যা প্রেম, ত্যাগ, এবং মানবতার গভীরতম অনুভূতিগুলিকে স্পর্শ করে। এটি মূলত একটি সামাজিক ও দার্শনিক কাহিনী যা মানব জীবনের জটিলতাকে তুলে ধরে। নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলো হল রঘুপতি, জয়া এবং আপর্ণা। কাহিনীর পটভূমি রচিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ও ধর্মীয় সংঘাতের প্রেক্ষাপটে, যেখানে ব্যক্তি ও সমাজের দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

 

গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র রঘুপতি একজন কট্টর ধর্মগুরু। তিনি ধর্মীয় আদর্শে অটল এবং ধর্মীয় শুদ্ধতা রক্ষার জন্য জীবনের অন্য সমস্ত সম্পর্ককে উপেক্ষা করতে প্রস্তুত। অন্যদিকে, জয়া এবং আপর্ণা হল রঘুপতির আশ্রিত এবং তাদের জীবনের নানা দিক রঘুপতির সিদ্ধান্ত দ্বারা প্রভাবিত হয়। নাটকের প্রধান উত্তেজনা তৈরি হয় যখন রঘুপতির ধর্মীয় বিশ্বাস এবং মানবিক সম্পর্কের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

 

জয়া একটি সাহসী এবং শক্তিশালী নারী চরিত্র, যে রঘুপতির প্রতি একনিষ্ঠ থাকলেও মানবিকতাকে প্রাধান্য দিতে চায়। আপর্ণা একটি কোমল হৃদয়ের চরিত্র, যে প্রেম এবং আবেগের মধ্য দিয়ে জীবনের গভীরতাকে বুঝতে চায়। এই দুই চরিত্রের মধ্য দিয়ে নাটকটি মানব সম্পর্কের সূক্ষ্মতা এবং নারীর শক্তিমত্তাকে তুলে ধরে।

 

নাটকের এক পর্যায়ে দেখা যায়, রঘুপতির কট্টর ধর্মীয় বিশ্বাস জয়া এবং আপর্ণার জীবনকে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দেয়। এখানে ত্যাগের প্রশ্ন আসে—ব্যক্তিগত সুখ এবং সম্পর্ক রক্ষার জন্য কে কতটা ত্যাগ করতে পারে? জয়া তার ভালোবাসা এবং মানবিকতাকে রক্ষার জন্য যে আত্মত্যাগ করে, তা নাটকের মূল থিমকে আরও গভীর করে তোলে।

 

রবীন্দ্রনাথ তাঁর অসামান্য লেখনীর মাধ্যমে নাটকের প্রতিটি দৃশ্য ও চরিত্রে জীবনের গভীরতম সত্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর বর্ণনার কৌশল, সংলাপের গভীরতা, এবং চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ নাটকটিকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়।

 

বিসর্জন কেবল একটি নাটক নয়, এটি মানবিক অনুভূতি, ধর্মীয় কট্টরতা, এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের এক অমূল্য কাব্যিক চিত্র। এই নাটকটি দেখায় যে ধর্ম বা সমাজের নিয়মের ঊর্ধ্বে মানবতার স্থান কতটা গুরুত্বপূর্ণ। গল্পের শেষ পরিণতি পাঠক বা দর্শককে ত্যাগ ও তিতিক্ষার গভীর উপলব্ধি দেয়।

 

এই নাটকটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন এবং এর মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছেন কিভাবে ত্যাগের মাধ্যমে মানুষ সত্য ও শান্তির সন্ধান পেতে পারে। বিসর্জন সেই চিরন্তন সত্যের এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা, যা যুগ যুগ ধরে মানবসমাজকে অনুপ্রা

ণিত করবে।

 


Dipto Hajong

71 Blog des postes

commentaires

📲 Download our app for a better experience!