ক্যাম্পাসের তিন নম্বর গেটে মালিহাকে প্রথম দেখেছিল সামি। হাতে সিগারেট, চড়া গলায় এক লোককে কঠিনভাবে ধমকাচ্ছে।
কৌতূহলবশত এগিয়ে গিয়ে ঘটনা জানা গেল, মালিহাকে সিগারেট টানতে দেখে লোকটা পাশ থেকে বলেছে, ‘মেয়েমানুষ এভাবে বিড়ি খায়? গজব পড়বে। ’
মালিহা রেগে গিয়ে লোকটাকে বকছে।
দৃশ্যটা সামি মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখল। ১০ মিনিট পর সবাই চলে গেলে সে হঠাৎ করে বুঝতে পারল, আরেকবার এই রাগান্বিতার বিরক্ত মুখ না দেখলে তার জীবন বৃথা।
মালিহার খোঁজ নিতে গিয়ে সামি চমকে গেল। ইউনিভার্সিটির সবচেয়ে লাফাঙ্গা গ্রুপের সঙ্গে মেয়েটার ওঠাবসা। দিনের বেশিরভাগ সময় এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত ছেলেগুলোর সঙ্গে পড়ে থাকে মালিহা। এ রকম ছেলেদের সঙ্গে কথা বলবে, এটা সামি কোনো দিন ভাবতেও পারত না। অথচ শুধু মালিহার সঙ্গ পেতেই দলটিতে ভিড়ে গেল সে।
তিনমাসের মধ্যে দলটিতে সামির একটি শক্ত জায়গাও হয়েছে। আড্ডায় না গেলে দল থেকে ফোন আসে। সামিও সময় দেয় ওদের।
একদিন সন্ধ্যার আড্ডার সবাই আগে চলে যাওয়ায় সামি হঠাৎ মালিহাকে একা পেয়ে গেল। ফটোগ্রাফারদের মতো এটাই তো ‘পারফেক্ট মোমেন্ট টু ক্যাচ’।
মালিহা জানালার বাইরে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শান্ত দিঘির মতো মালিহার চোখের দিকে তাকিয়ে সামি বলল, ‘শোন, অনেক দিন ধরে তোকে একটা কথা বলতে চাই। ’
মালিহা এক মুহূর্ত তার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেলল। বলল, ‘জানি কী বলবি। গাঞ্জুট্টি মেয়ের প্রেমে পড়েছিস তাই না?’
সামি থতমত খেয়ে বলল, ‘আমার চোখ দিয়ে নিজেকে দেখলে এভাবে বলতি না। তুই খুবই চমত্কার একটা মেয়ে। এত মেধাবী, এত মায়াবতী! এসব নেশা দিয়েও সেটা ঢেকে রাখতে পারিস না। ’
মালিহা গভীর চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমার ভেতরটা কেন জানি সবসময় খালি খালি লাগে। সেই শূন্যতা কিছু দিয়ে পূরণ হয় না। শুধু নেশা করলেই একটু ফুরফুরা লাগে। আর বাসাটা এত ডিপ্রেসিং লাগে...। ’
—‘আমাকে একটা সুযোগ দে, তোকে দেখাবো জীবনে আনন্দে থাকার অনেক উপকরণ আছে। ’
তিন মাস পর এক রাতে মালিহা সামিকে ‘I wish I could see you’ টেক্সট করে ঘুমিয়ে পড়ল। আধাঘণ্টা যেতে না যেতে সামির রিংটোনে ঘুম ভেঙে গেল।
‘মালিহা বারান্দায় আস’
মালিহা আধা ঘুম চোখে হতভম্ব হয়ে দেখল সত্যি রাত ৩টায় সামি বাইকে তার বাসার সামনের রাস্তায়।
বাসার স্লিপার পরেই স্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে এলো মালিহা। বাসার সবাই গভীর ঘুমে। সামি ভাবেনি, মালিহা সত্যি নিচে নেমে আসবে। সে অবাক হয়ে বলল,
‘কী করলে এটা? ধরা খেলে কী অবস্থা হবে তোমার?’
—৮টার আগে কেউ ঘুম থেকে উঠবে না। আর উঠলেই বা কী? এই রাতটা আমি হারাব না। চল। আজকে পালাব—বলেই মালিহা বাইকে চেপে বসে।
সারা রাত দুজন বাইকে ঢাকা চষে বেড়ালো। ভোররাতে বাইক ছুটে চলল আরিচার দিকে। আরিচা ঘাটের একটা হোটেলে পরোটা-ডিমভাজি খেতে খেতে মালিহা বলল ‘তুই কি জানিস গত তিন মাসে উইড করা তো দূরে থাক, আমি একটা সিগারেটও খাইনি!’
সামি ঝলমল মুখ করে মালিহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।
—আমার এখন আর খালি খালি লাগে না। তুই আমার জীবনের সব অপূর্ণতা দূর করে দিয়েছিস। ’
সামি মালিহার দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে থাকে।
মালিহা বলতে থাকে ‘বেঁচে থাকা আগে ঝামেলা ভাবতাম, তুই আছিস বলে জীবনটা এখন অন্যরকম লাগছে। ’
সামির হাতটা বুকে চেপে ধরে মালিহা বলল, ‘No matter what happens, always hold onto our love.’
দূপুরে বাড়িতে ফিরে মালিহা দেখে বাড়ির ভিতর সব আত্মীয় স্বজন জড়ো হয়েছে। তার দিকে চোখ যেতেই চিত্কার করে উঠলো কাজের মেয়ে ময়না। ‘আপারে পাওয়া গেছে’ বলে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেললো সে। সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মালিহাকে দেখছে।
বাবাই প্রথম এগিয়ে এলেন। রাতে কোথায় ছিলি? এই বাড়ির মেয়ে হয়ে আজ সবার মান সম্মান পথের ধুলোয় মিলিয়ে দিলি!!!
নিরুত্তর মালিহা সবার সামনেই নিজের রুমে চলে গেলো।
কিন্তু সমস্ত ঘরটিকে লণ্ডভণ্ড করেছে কে!!!