গল্প :- অবহেলা না ভালোবাসা

পর্ব :- ০১

--রিয়া আজকে একটু দেখা করতে পারবা..?

অনেকদিন ধরে আমাদের কোনো দেখা সাক্ষাত হয় না.?(আমি)

--ও স্যরি

পর্ব :- ০১

 

--রিয়া আজকে একটু দেখা করতে পারবা..?

 

অনেকদিন ধরে আমাদের কোনো দেখা সাক্ষাত হয় না.?(আমি)

 

--ও স্যরি কাব্য আজকে দেখা করতে পারছি না। অন্যদিন দেখা হবে কেমন.?

 

আজকে আমার ম্যাথম্যাটিক্স-২ এসাইনম্যান্ট আছে।(রিয়া)

 

--আচ্ছা ঠিক আছে অন্যদিন নাহয় দেখা করবো। ভালোভাবে এসাইনম্যান্ট করো।(আমি)

 

--হুম....(রিয়া)

 

এইটুকু কথা বলেই রিয়া ফোনটা রেখে দিলো। একটাবারও খোঁজ নিল না আমি কেমন আছি?

 

সে এরকম তো ছিলো না। তাহলে কী আমি তাকে আজও চিনতে পারি নি। আমারি কি ওকে চিনতে কোথাও ভুল হয়েছে। এসব ভাবছিলাম আর টেইলর সুইফ এবং এলি গোল্ডউইং-এর গান শুনছিলাম।

 

ও আপনাদের তো আমাদের পরিচয় টা দেয়া হলো না । আমি কাব্য আহমেদ(নীল) । বাবা-মায়ের আদরের তিনমাত্র সন্তান মানে তৃতীয় সন্তান। অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র আমি। আর এতোক্ষণ যার কথা বলছিলাম, সে হচ্ছে রিয়া।

 

রাহিয়া চৌধুরী রিয়া। বাড়ি চট্টগ্রাম আমার আম্মুর বান্ধাবীর মেয়ে। সেই সূত্রে ওর সাথে আমার পরিচয়। পরিচয় থেকে ভালোলাগা। আর ভালোলাগা থেকে

 

ভালোবাসা।♥

 

 

 

ওর সাথে আমার রিলেশনশিপটা এসএসসির পর

 

থেকেই। কিন্তু বর্তমানের রিয়া আর অতীতের

 

রিয়ার সাথে অ‍ামি আর মিল খুঁজে পাই না। রিয়া আগে আমার অনেক কেয়ার নিতো, আর অভিমানটাও আহ্লাদী সুরে ভাঙ্গাতো। কিন্তু এখন সে অনেক ব্যস্ত। হয়তো তার লেখাপড়া নিয়ে। তাই হয়তো সময়

 

দিতে পারছে না। যাইহোক ওর ভালোটা আমিও চাই। তাই সবকিছু মেনে নেই। কিন্তু আমার ছোট ছোট আবদার গুলোও কী পূরণ করতে পারে না। খুব বেশী কিছুতো চাই নি। শুধু আমাকে একটু সময় দিবে। তাও ওর এটুকু সময় হয়ে উঠে না তারপরও আমি রিয়াকে অনেক বেশী ভালোবাসি।♥

 

 

 

মাগরিবের আযানের সুর ভেসে আসলো পাশের মসজিদ থেকে। গানটা বন্ধ করে উঠে আস্তে আস্তে বাসার উদ্দ্যেশে হাঁটতে লাগলাম। আর আনমনে ভাবতে লাগলাম ফেলে আসা দিনগুলো। এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে এলাম। এসে ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম। একটা থ্রিডি ডিজাইন করতে হবে। আম্মু এসে চা দিয়ে গেলো। চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ ফোন আসলো একটা নাম্বার থেকে। যার কোড সংখ্যা নয়টা। আমি

 

পিকআপ করতেই, বললো....

 

--Hello Are You Kabbo Ahammad.?

 

--Yes I'm Kabbo Ahammad (আমি)

 

--Good. You are selection for study in Australia.

 

University of Melbourne.....

 

(ভালো আপনি অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশুনার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে)

 

--Really..?

 

I'm Very Excited. Thanks For your good news.

 

(সত্যি..?

 

আমি অনেক আনন্দিত আপনার সুসংবাদটা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

 

--Oky Good Bye....

 

--Oky Thanks.. 

 

 

 

আমি খবরটা শুনে খুশিতে আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম। আর বললাম...

 

--আম্মু আমি অস্ট্রেলিয়াতে পড়ার চান্স পেয়েছি।

 

আর আমার কথাটা শুনে আম্মু সাথে সাথেই খুশিতে কেঁদে ফেললো। তারপর খুশিতে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো বাবাকে খুশির খবরটা

 

জানাতে। আম্মুরা হয়তো এমনই হয়, সন্তানের

 

আনন্দের সংবাদ শুনে যেমন কাঁদে। তেমনি

 

দুঃখের সংবাদ শুনেও কাঁদে। গুড নিউজ টা শুনে আব্বু ও কেঁদে দিলেন। অজান্তে আমার চোখ থেকেও দু'ফোটা জল গড়িয়ে নিচে পড়লো। আমি এবার বেসিনে গিয়ে চোখে পানির ঝাপটা দিয়ে আসলাম। আর ল্যাপটপটা বন্ধ করে ভাবলাম। রিয়াকে তো গুড নিউজটা জানানো দরকার। আর এমন সময় এসে আম্মু ডিনারের জন্যে ডাকলেন। তাই ভাবলাম খাওয়া দাওয়া শেষে জানাবো।

 

 

 

খাওয়া দাওয়া শেষ করে এসে রিয়াকে ফোন দিলাম। রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ পিকআপ করছে না। প্রায়

 

অনেকবার রিং-এর পর ফোন ধরলো রিয়া।, ধরেই

 

বলতে লাগলো।

 

--এতো বার ফোন দেওয়া লাগে নাকি? জানোনা আমি এই সময়ে ব্যস্ত থাকি।

 

রিয়া অনেক রেগে বললো কথাগুলো। তাই আমি কিছু না বলে চুপ করে আছি...। আমার চুপ করে থাকা

 

দেখে ও আবার বললো...

 

--কী হলো কথা বলছো না কেন ফোন দিয়ে? গাধা কোথাকার। কোন ছাগলের পাল্লায় যে পড়লাম আল্লাহ।

 

আমি চুপচাপ শুধুই ওর বলা কথা গুলো শুনছিলাম আজকে ওর গাধা বলায় অন্য দিনের মতো ভালোবাসা,

 

আর আদর মিশ্রিত ছিলো না। আজকে খুব বিরক্তি ও অবহেলা করে বলেছে রিয়া কথাগুলো। সে আমাকে এভাবে কখনো বলে নি। তারপর আমি ওসব বাদ দিয়ে বললাম.......

 

--স্যরি রিয়া অসময়ে ফোন দেওয়ার জন্যে...।

 

(একটু কান্নাময় কণ্ঠে)

 

--কিহ্ এখন ঢং শুরু করেছো?

 

অভিনয় না করে সোজাসুজি বলো কেন ফোন দিয়েছে...?

 

--দুপুরে খেয়েছিলে.?

 

--না। তুমি খেয়েছো.?

 

--হুম।

 

--আমার বদলে তুমি খেয়েছো। আমার না

 

খেলেও চলবে। (রাগ নিয়েই বললাে)

 

--ওহহহ...!!! আচ্ছা রাত্রে খেয়েছো...?

 

--না।

 

আর আমার খাওয়া নিয়ে তোমার এতো মাথাব্যাথা

 

কেন.?? তুমি তোমার টা নিয়ে ভাবো।(রিয়া)

 

--তুমি তো আমার প্রিয় মানুষটা তাই তোমার কেয়ার না নিয়ে কার কেয়ার করবো বলো!!!!

 

--যত্তোসব ঢং।

 

আমি খাই না খাই তা আমি নিজে বুঝবো। তোমাকে বলে দিতে হবে না। আর আমার যদি এতোই কেয়ার নেও তাহলে পড়ার সময়ে আর ফোন দিবে না।

 

--আচ্ছা ঠিক আছে।

 

তুমি ঠিক ঠাক মতো পড়ো, খাওয়া-দাওয়া করবে।

 

ঠিক মতো ঘুমাবে না হলে শরীর খারাপ করবে। তখন আবার ভালোকরে পড়তে পারবে না ওকে।।।।

 

(কান্না আটকিয়ে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কথা গুলো বললাম)

 

তারপর রিয়া আমার কথাগুলো শুনে আমাকে ছাগল বলে ফোন রেখে দিলো।

 

রিয়ার সাথে কথা বলার পড়েই সাথে সাথে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে ট্যাপ ছেড়ে কিছুক্ষণ খুব কাঁদলাম। কেনোনা শুনেছি কাঁদলে নাকি মানুষের মন হালকা হয়। কিন্তু আমার মনটা এতো কাঁদার পড়েও হালকা হচ্ছিলো না। তখন আমার মনে হচ্ছিলো কেউ আমার বুকে পা দিয়ে চাপ দিয়ে ধরে রেখেছে। তারপর খুব কান্না করলাম রাত্রে। আর কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লাম।

 

সকালে আম্মুর ডাকে ঘুম থেকে উঠলাম। তারপর ব্রেকফাস্ট করে, উঠে নিজের কাগজপত্র সবকিছু রেডি করলাম। জমা দিতে হবে। খুব বেশী দিন সময় নেই আর আমার হাতে। কিন্তু এই সুখবরটাও রিয়াকে এখনো জানাতে পারলাম না। ওর কথা মনে পড়তেই আবারো আমার চোখ দিয়ে পানি চলে এলো মনে হলো গতকাল রাত্রের কথা।

 

তারপরেও এতো কিছুর পরেও আমি রিয়াকে ফোন দিয়ে ওর খোঁজ খবর নিতাম।

 

ওর খাওয়া-দাওয়া,পড়া-শোনার খবর নিতাম।

 

কিন্তু ও?

 

ও ওর মতোই নির্লিপ্তি থাকতো। আর আমার সাথে তেমন খুব একটা ভালোভাবে কথা বলতো না। তখন আমার ওর কাছে নিজেকে খুব নিঃস্ব মনে হতো।

 

এখন আর রিয়া রাত্রে আমায় ফোন দেয় না। ও হয়তো ব্যস্ত থাকে ওর পড়াশোনা নিয়ে। কিন্তু আমার রাত্রে ও কী খাওয়া-দাওয়া করেছে কিনা জানতে ইচ্ছে করতো খুব।

 

মাঝে মধ্যে ফোনও দিয়ে দিতাম। আর ও খুব বকতো আমার, মনে হয় আমি ওর কাছে কোনো গুরুত্বই বহন করছি না। আমার খুব কষ্ট হতো তখন। বুক ফেটে কান্না আসতো। ছাদে বসে খুব কাঁদতাম। ভালোবাসার শুরুটা আবেগ-এ হলেও পরিণতিটা যে অবহেলায় হয়, আজ তা বুঝতে পারলাম'ওর কাছ থেকে। 

 

ছাদে বসে আমি অনেক জোরে জোরে কান্না করলাম। আর উপর ওয়ালা কে বলতে লাগলাম যে।

 

:-হে আল্লাহ্ কী অপরাধটা ছিল আমার যার জন্য


Bablu islam

204 בלוג פוסטים

הערות