অবহেলিত রং

রং কে কখনো মানুষ অবহেলা করতে পারে না।

 

 

তখন বাজে রাত ২ টা। চারিদিক অন্ধকার, এরই মধ্যে একটি বাচ্চার কান্নার শব্দ। বাচ্চাটি কেঁদেই চলেছে। কিছুতেই থামছে না, যত সময় যাচ্ছে কান্নার শব্দ বেড়েই চলেছে। এক ভদ্রলোক খুব বিরক্তি নিয়ে বের হয় রুম থেকে, দেখতে পায় তাদের সামনের রুম থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। বাচ্চা টা অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে। রুমের সামনে যেতেই দেখলো দরজা টি খোলা, ভিতরে প্রবেশ না করে দরজাতেই নক করে কিন্তু কারো কোনো শব্দ নেই। শুধু বাচ্চা টি কান্না করছে, লোকটি আর কিছু না ভেবে দরজা খুলতেই দেখে খুব অন্ধকার। লাইট নিভানো, লোকটি তার ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে লাইট এর সুইচ দেয়। ততক্ষণে পুরো বিল্ডিং এর মানুষ আর দারোয়ান এসে পড়েছে। রুমের লাইট জালাতেই দেখতে পায়, বিছানায় ছোট্ট একটি বাচ্চা শুয়ে কান্না করছে। সেই বাচ্চাটি ছাড়া রুমে আর কেউ নেই, এর মধ্যে একজন বলতে থাকে আরে ভাবি কোথায় গেছে? এত রাত করে? বাচ্চা টি কে একা ফেলে? কথাটি বলেই বাচ্চা টিকে কোলে তুলে নিয়ে সাথে থাকা ফিডার টি মুখে দেয়। তখন ভদ্র লোকটি বলে, কারোর কাছে ওনার নাম্বার থাকলে ফোন দিন। ওখানে থাকা একজন ফোন দেয়, ফোন বন্ধ রয়েছে। তখন তাদের উপরের ফ্লাটের এক মহিলা তার বাচ্চা নিয়ে অনেক কান্নাকাটি করতে করতে নিচে নামে। সবাই সেদিকে তাকিয়ে, জিজ্ঞেস করতে থাকে যে সে কান্না করছে কেন? সে মহিলা তখন কান্না থামিয়ে বলতে থাকে তার স্বামী পালিয়ে গেছে, এই ভাবির সাথে। ভাবির সাথে প্রেম ছিলো। আমি বাধা দিয়েছি, আমাকে মেরে পালিয়েছে ঘন্টা খানেক হলো। আমি জ্ঞান হারিয়ে পড়েছিলাম, সবেমাত্র জ্ঞান এসেছে আমার। তখন ভদ্র লোকটি দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করে এই বাচ্চাটির বাবা কোথায়? তখন এক মহিলা বলে উঠে ওর বাবা তো বিদেশ, তখন ভদ্র লোকটি বলে ওনাকে ফোন দিয়ে বিষয় টি জানান। তখন দারোয়ানের কাছে থাকা নাম্বার টি বের করে ফোন দেয়,,,, ফোন টি ধরতেই দারোয়ান সব খুলে বলে যে তার বউ বাচ্চাটি ফেলে পালিয়েছে। এই কথা শুনা মাত্র ইমরান এর হাত থেকে ফোন টা পড়ে যায়।

 

সাথে সাথে জেসমিন (তার বউ) কে কল দেয়, ফোন টি বন্ধ রয়েছে। ইমরান এখন কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। তার বাচ্চা ওদিকে একা পড়ে আছে সাথে কেউ নেই, সবে মাত্র নুরের (ইমরান এর ছেলে) ৭ মাস পার হয়েছে। সে এখন এখান থেকে যেতেও পারবে না। কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। তখনই মনে হয় তার মায়ের কথা। আবার ভাবতে থাকে কিভাবে ফোন দেবে তার মায়ের কাছে? তার মা কি তার কথা শুনবে? তার মা কি তার একমাত্র নাতির কথা শুনে নাতি কে আনতে যাবে? তার মা এখনো তার উপর রেগে আছে? এসব ভেবেই চোখ থেকে টপ টপ করে পানি ঝরতে থাকে। তখনই ভাবে যা হয় হবে, মা কে ফোন দেবো। দুই বার রিং হতেই তার মা রিছিভ করেই শুনতে পায় ইমরান কানছে, তার মা ভয় পেয়ে যায়, কিছু হয় নি তো? মা জিজ্ঞেস করে, কি হয়ছে ইমরান কান্না করছিস কেন? তখন ইমরান বলে উঠে মা, তোমার নাতি একলা পরে রয়েছে। মা তুমি যাবে না তোমার নাতি কে আনতে? তখন ইমরানের মা জিজ্ঞেস করে তোর বউ কোথায়? তাকে বল। তখন ইমরান কান্না করতে করতে বলে মা, জেসমিন পালিয়ে গেছে, একজনের সাথে। কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না জেসমিন এর সাথে। তোমার নাতি একা পড়ে আছে মা। সমস্ত রাগ ভেঙে নাতির কথা ভেবে আর ছেলের কান্না শুনে বলে যাবো আমি, তুই ঠিকানা দে ইমরান। কান্না থামায় ঠোঁটের কোনে এক চিলতি হাসি ফুটে উঠে ইমরান এর। ইমরান ঠিকানা দেয়। তখন ফজর এর আজান দিচ্ছিলো, ইমরানের মা নামাজ পরে সকাল সকাল সেই ঠিকানায় রওনা দেয়। এর পর সকাল ৯ টা বাজে তখন এসে ইমরান এর মা সেই ঠিকানা তে পৌঁছায়। ভিতরে ঢুকতে যাবে তখনই মনে হয় রোদেলার কথা। আর ভাবতে থাকে আমি কি ঠিক করছি? আমার নাতি কে নিতে এসে? এসব ভাবতে ভাবতে দারোয়ান এর সাথে দেখা। তখন দারোয়ান কে বাচ্চা টির কথা জিজ্ঞেস করাতে, দারোয়ান তাকে জিজ্ঞেস করে কে আপনি? তখন ইমরানের মা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে আমি ওর দাদি হই। নিয়ে চলুন ওর কাছে আমায়, এই কথা শুনে দারোয়ান মাথা নারিয়ে হাটতে থাকে। বাচ্চা টার নাম ও জানতো না ইমরানের মা। বাচ্চা টার কাছে যেতেই ইমরানের কল, কাদো কাদো হয়ে বলছে মা, নুর কে পেয়েছো? তখন ইমরানের মা বুঝতে পারে, তার নাতির নাম নুর। তখন ইমরান এর মা বলে হুম পেয়েছি কল টা এখন রাখ। ইমরান কেটে দেয়। বাচ্চা টাকে কোলে নিতেই এক ভদ্র মহিলা বলে উঠে আপনি ওর দাদি হন? ইমরানের মা মাথা নারায়। তখন মহিলাটি বলতে থাকে, ঠিক আছে আপনি বসুন। কিছু খেয়ে নুর কে নিয়ে যায়েন, আর নুর এর জন্য এই ফিডারে আমি তরল সুজি ভরে দিবো। তখন ইমরান এর মা বলে থাক মা তোমার এত কষ্ট করতে হবে না, (সারা রাত বাচ্চা টাকে আগলে রেখেছিলো মহিলাটি) তোমাকে তো কষ্ট দিচ্ছি মা। তখন মহিলাটি বলে না কষ্ট হয়নি, কথাটি বলে ইমরান এর মা কে কিছু খাবার দেয়,(রুটি ভাজি)। খাওয়ার পর তারা বের হবে তখন ইমরান ফোন দেয়।

 

ইমরানের মা কল ধরতেই ইমরান বলে, মা তুমি নুর কে নিয়ে যাও। আমি তাড়াতাড়ি দেশে আসার চেষ্টা করবো। জিনিসপত্র এখানে থাক আমি এসে তোমার কাছে নিয়ে যাবো। ইমরানের মা আচ্ছা বলে রেখে দেয়। মহিলাটির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দেয়। ঘন্টা দুয়েক পর বাড়িতে এসে পৌঁছায়। নুর কান্না করতে থাকে, তখন তাকে ফিডারের সুজি খাওয়ায় তার দাদি। খাওয়া শেষ হতেই ঘুমিয়ে যায় নুর। ঘুমন্ত বাচ্চা টি কে দেখে ইমরান এর মা ভাবে কি নিস্পাপ দাদুভাই টা হয়েছে। কি মায়া ভরা মুখ টুকু। আমার রদু মা (রোদেলা) যদি থাকতো। ইমরান বসে বসে ভাবতে থাকে তার মা কি তাকে মন থেকে ক্ষমা করেছে? কথাটি ভেবেই ফোন দেয় তার মা কে। ফোন ধরতেই জিগ্যেস করে, মা তুমি কি আমায় ক্ষমা করেছো? ইমরান এর মা চুপ হয়ে যায় কি বলবে বুঝতে পারছিলো না। তখন বলে কেন কি হয়েছে? কথাটি বলার পরই চোখ যায় নুরের নিস্পাপ মুখের দিকে। তখন ইমরান কাদো কাদো কন্ঠে বলতে থাকে মা আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আমায় মাফ করে দাও। তখন ইমরান এর মা বলে আমি আমার দাদুভাই কে দেখার পরই সব ভুলে গেছি। তুই আজে-বাজে কিছু ভাবিস না। তখন ইমরান চোখ মুছে আবার জিগ্যেস করে, সত্যি মা? তখন ইমরানের মা বলে শোন বাবা, কাউকে কাদাতে নেই। তার চোখের পানির মূল্য সারাজীবন দিতে হয়। ইমরান বুঝতে পারে তার মা ঠিক কি বলতে চাইছে তাকে। বেশি কথা না বাড়িয়ে ইমরান তারাতাড়ি কল কেটে দেয়। ইমরান বেলকনিতে গিয়ে দারায়। ভাবতে থাকে রোদেলার কথা, রোদেলা যদি আজ থাকতো, কি নিস্পাপ মেয়ে টা। কত টায় না কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা। তার জন্যই কি আজ আমার এমন হলো?এসব ভেবেই চলেছে ইমরান। ইমরানের প্রথম বউ রোদেলা, আজ থেকে বেশকিছু বছর আগে রোদেলা আর ইমরানের বিয়ে হয় পারিবারিক ভাবে, খুব পছন্দ করেছিলো তার মা রোদেলাকে। খুব মিষ্টি একটা মেয়ে কিন্তু গায়ের রঙ কালো ছিলো বলে ইমরান রোদেলাকে ভালোবাসেনি। বিয়ের পর রোদেলা কে কখনো বুঝতে দেয়নি ইমরান, যে তাকে ভালোবাসেনি। খুব খেয়াল রাখতো রোদেলার খুব যত্ন করতো। এভাবে দুইজন এর খুনসুটি তে আস্তে আস্তে দিন যেতে থাকে। ইমরান বাইরের দেশে যাবে তার পাসপোর্ট ভিসা হাতে পায়। সেইদিন সকালে খুব কেদেছিলো ইমরান যেদিন তার ফ্লাইট, রোদেলা কে ছেড়ে বিদায় নিচ্ছিলো দুজন ই খুব কান্না করছিলো। মেয়েটা হয়তো ভেবেছে তাকে ভালো বাসে ইমরান তাই ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে বলে কান্না করছে। ইমরান বিদায় নেয়। পৌঁছে যায় ঠিক মত ইতালিতে, কল দেয় রোদেলাকে তার সাথে কথা বলে। ইমরানের মায়ের সাথে কথা বলে। এর পরদিন সকালে ইমরান কল দেয় তার মায়ের সাথে কথা বলে রেখে দেয়। কিন্তু রোদেলার সাথে কথা বলতো না। রোদেলা ভাবে হয়তো কাজ এর চাপ তাই কথা বলে নাই। এভাবে দিন যেতে থাকে তাও কোনো কথা বলতো না রোদেলার সাথে। রোদেলা খুব কষ্ট পেত তাও কিছু বলতো না। এভাবে মাসের পর মাস কেটে বছর গড়ায় তাও কখনো আর রোদেলার সাথে কোনো কথা বলেনি ইমরান।

 

ইমরান এর মা কথা বলতে বললে বলতো এখন না মা,খুব কাজের চাপ পরে রোদেলার সাথে কথা বলবো। রোদেলা নিরবে কান্না করতো। হঠাৎ কিছু না বলেই ১.৫ বছর পর ইমরান দেশে আসে। তবে সে একা নয়। তার নতুন বউ (জেসমিন) কে নিয়ে। জেসমিন সুন্দরী, তাকে ভালো বেসেই বিয়ে করে নিয়ে এসেছে। ইতালিতে গিয়ে এত সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে দেখে তার গ্রামে থাকা বউ (রোদেলা) টির কথা ভুলেই গিয়েছিলো। বাঙালি মেয়ে জেসমিন কে পেয়ে তার সাথেই প্রেম করে বিয়ে করে। বাড়িতে ঢুকতেই ইমরানের মা জিজ্ঞেস করে মেয়েটি কে? ইমরান মাথা নিচু করে জবাব দেয় তোমার বউমা। ইমরান এর মা রেগে গিয়ে বলতে থাকে আর এক পা ও তুই আমার বাড়ির দিকে এগোবি না। বের হয়ে যা, তোর এই মুখ আমি দেখতে চাই না। জেসমিন এই অপমান সইতে না পেরে মুখ বেকিয়ে বের হয়ে যায়। এমন সময় রোদেলা এসে দেখে ইমরান দাঁড়িয়ে চোখ মুছছে। এগিয়ে যাবে রোদেলা, এমন সময় তার শাশুড়ী তাকে থামিয়ে বলতে থাকে, ইমরান তুই এই মেয়েকে কষ্ট দিয়েছিস। এক সময় বুঝবি, দূর হয়ে যা চোখের সামনে থেকে। ইমরান বের হতেই রোদেলা জানতে চায়, বের করে দেওয়ার কারণ তখন তার শাশুড়ী সব টা খুলে বললে কান্নায় ভেঙে পড়ে রোদেলা। রোদেলা কে বলে কাদিস না মা, আমি আছি তো। এই বাড়িতে ওর কোনো জায়গা নেই। চল মা ঘরে। তখন ইমরান আর জেসমিন ঢাকায় এসে থাকতে শুরু করে। ভালই চলছিলো তাদের দিনগুলো। জেসমিন বেবি কন্সিভ করার পর দেশ ছাড়ে ইমরান, ইতালিতে যায় আবার। মাস এর শুরুতেই টাকা পাঠিয়ে দিতো জেসমিন কে। জেসমিন এর বেবি পেটে থাকা অবস্থায় জেসমিন এর মা সাথে ছিলো। বেবি হওয়ার কয়েক মাস পর জেসমিন এর মা গ্রামে যায়। বাচ্চাটির বয়স যখন ৫ মাস তখন ছাদে যাওয়ার পর তাদের উপর তলার একজন লোক এর সাথে পরিচয় হয় জেসমিন এর। খুব সুন্দর করে কথা বলতো লোকটি জেসমিন এর সাথে, লোকটা বিবাহিত ছিলো। জেসমিন কে গিফট দিতো (শাড়ি, চুড়ি, চকলেট) এসব এ জেসমিন খুব খুশি হয়। আস্তে আস্তে এভাবে দিন যেতে থাকে। তাদের দুজনের গল্প আড্ডা ও বাড়তে থাকে। প্রতিদিন রাতে ছাদে দেখা করে। জেসমিন লোকটির প্রতি দুর্বল হতে থাকে। একসময় লোকটি তাকে সোনার আংটি দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, জেসমিন তখন বলে তোমার বউ? তখন লোকটি বলে কিছু হবে না আমরা পালিয়ে যাবো। তুমি চিন্তা করো না আমরা অনেক সুখে থাকবো। জেসমিন মনে মনে ভাবে, ইমরান এর থেকে তো বড়লোক ই আছে। সুখেই থাকবো ভেবে রাজি হয়। ১ সপ্তাহ পর লোকটির কথা মত জেসমিন তার টাকা পয়সা গয়না নিয়ে তার বাচ্চা কে ফেলে সুখের আশায় পালিয়ে যায় লোক টির সাথে। 

 

(বর্তমান) রোদেলা আসে তার শাশুড়ীর কাছে বাচ্চা টিকে দেখে অবাক হয়ে জানতে চায় বাচ্চাটি কে? তখন ইমরানের মা সব টা বলে রোদেলাকে, রোদেলা মুচকি একটা হাসি দেয় তার কোলেও তার ছোট্ট মেয়ে লিমা। ইমরান এর সাথে ডিভোর্স এর পর রোদেলার মা বাবাও রোদেলাকে ৫০ বছর এর একটা লোকের সাথে বিয়ে দেয়।

 

(রোদেলা আর ইমরানের মায়ের এমন মহব্বত দেখে সবাই অবাক হয়) ইমরানের মা জিগ্যেস করে কেমন আছিস মা তুই? জামাই কেমন আছে? রোদেলা কান্না করতে করতে বলে মা জানো? তুমার জামাই (লিমন) আমাকে মারধর করে, ইমরানের মা রোদেলাকে বুকে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে কাদিস না মা, তখন রোদেলা বলে জানো মা লিমন আগে যেখানে কাজ করতো সেখান কার মালিক এর বউ কে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছিলো, লিমন আর সেই বউ এর এক ছেলে আর এক মেয়ে হয়েছিলো, লিমন খুব লোভি মা, লিমন কে রোজগার করে এনে খেতে দিতে পারতো না বলে লিমন তার আগের বউ টিকে অনেক মারতো, বেল্ট দিয়ে মারতো সেই বউ টি এখন প্যারালাইজড। সে জন্য এখন আমায় বিয়ে করেছে মিথ্যা কথা বলে, তার বাচ্চা আছে বউ আছে, আর বিয়ের সময় বলেছিলো তার ছেলে মেয়ে নেই বউ টা মারা গেছে। আমায় বিয়ে করেছে কারন আমি যেন রোজগার করে এনে দিই তাকে। সব টা শুনে ইমরানের মা বলে কাদিস না মা, সব ঠিক হয়ে যাবে, কথা টি বলে ১০ হাজার টাকা গুজে দেয় রোদেলাকে। আর বলে এটা দিয়ে কিছু দিন তোর হয়ে যাবে, আমি আছি তো চিন্তা করিস না, রোদেলা আরো কেঁদে উঠে বলে, মা লিমন তো জানে তুমি আমার খালা আর তোমার কাছে আসলে তুমি অনেক কিছু দাও সে জন্য তোমার কাছে কয়দিন পর পরই আসতে চায়। আজ বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেছে বলে আসেনি এই জন্য আজই তোমার কাছে এসেছি মা তোমাকে সবটা বলতে। আমি ঘেন্না করি লিমন কে, কিন্তু লিমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। আমার গায়ের রঙ এর সাথে আমার ভাগ্য কেন এমন মা?চোখ মুছিয়ে ইমরান এর মা বলে আমি যতদিন আছি তুই কোনো চিন্তা করবি না। মানিয়ে নে মা। না হলে লিমার কি হবে? আমার মিষ্টি দাদুভাই এর জন্য সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন। কাদিস না তো, রোদেলা বলে জানো মা তুমি আছো বলে আমি এখনো বেঁচে আছি না হলে, ইমরান এর মা বলে চুপ কর ওইসব মনে করিস না আর। এমন সময় লিমন এর ফোন, রিছিভ করতেই বলে উঠে লিমা কে নিয়ে চলে আসো এখনই, রোদেলা আচ্ছা বলে রেখে দেয়। তার শাশুড়ীর থেকে বিদায় নেয়। রোদেলা যাওয়ার পর ইমরানের মা বসে ভাবতে থাকে, মেয়েটার গায়ের রঙের সাথে তার ভাগ্য টাও কেন এমন? হে খোদা মেয়ে টাকে সুখ দাও, বাকি জীবন যেনো সুখে থাকে, এমন সময় নুর কান্না করে উঠে, খিদে পেয়েছে, নুরের দাদি নুরের খুব যত্ন করতো যেন কোনো ভাবে কষ্ট না পায় সেদিক এ খেয়াল রাখতো। নুরের জন্য সুজি গরম করে খাইয়ে দেয়, নুরের খাওয়া শেষ হতেই ইমরান কল দেয়। রিসিভ করতেই বলে উঠে মা আমি আসছি সামনে মাসে, তোমার নাতি কি করছে? ইমরান এর মা বলে, খাবার খেলো ঘুমাবে এখন। আচ্ছা ঠিক আছে বলে রেখে দেয় কল। এরপরই চোখ যায় দেয়ালে, তেলাপোকা উঠেছে রোদেলার বাধানো ছবিটায়, ঝাড়ু দিয়ে, মেরে ফেলে দেয় তেলাপোকা টা, অনেক শখ করে রোদেলার একটা ছবি বাধিয়েছে। আসতে আসতে দিন এগিয়ে যেতে থাকে। ইমরান দেশে আসে, এসেই ঢাকাই সেই বাসা টায় যায়। সেখানে গিয়ে একটা ছবি দেখে জেসমিন এর। ছবিটি বুকে জড়িয়ে কান্না করে আর বলতে থাকে কেন করলে তুমি এমন? কি কমতি ছিল আমার ভালোবাসায়,আমাদের সন্তান কে ফেলে কেন চলে গেলে? চোখের পানি মুছে, উঠে সব গুছিয়ে ট্রাক ভাড়া করে সব জিনিস পত্র নিয়ে যায় গ্রামে।

 

বাসার ভাড়া মিটিয়ে, এসে দেখে তার মা তার ছেলে কে কোলে নিয়ে তার সাথে হাসতে হাসতে গল্প করছে। ইমরান কে দেখেই আরও খুশি হয়ে যায় ইমরানের মা। ইমরান তার ঘরে জিনিসপত্র রেখে ফ্রেস হয়েই দেখে তার মা তার জন্য খাবার রেডি করে রেখেছে। ইমরান এর পছন্দের খাবার সব। মুচকি মুচকি হাসতে থাকে ইমরান। আর মনে মনে ভাবে এটাই মায়ের ভালো বাসা। 

 

বেশ কিছু দিন পর, প্রতিবেশীরা সবাই বলে ছোট বাচ্চা টার মা দরকার আরেকটা বিয়ে করে নে ইমরান। তখন ইমরান তার মাকে বলে তখন তার মা বলে আমারও বয়স হয়েছে, আর দাদুভাই এর ও মা দরকার। বিয়ে করে নে। আর বাইরে যেতে হবে না তোকে, এবার দেশেই থাকবি। নুর আর মা এর কথা ভেবে রাজি হয় ইমরান। গ্রামের এক গরিব মেয়ে কে বিয়ে করে নিয়ে আনে, সবার সম্মতিতে। মেয়েটির নাম নিলুফা। কিছু দিনেই শাশুড়ীর মন জয় করে নিয়েছে নিলুফা। নুরের খেয়াল রাখা, শাশুড়ীর দেখাশুনা করা। ইমরানকে কাজে সাহায্য করা। খুবই ভালো মেয়ে নিলুফা। মাঝে মাঝে রোদেলা এসে দেখা করে যেত৷ ইমরানের মায়ের সাথে। ইমরান এই বিষয় টা জানতো না। নুর আসতে আসতে বাড়তে থাকে।২ মাস পার হতেই নিলুফা তেঁতুল খেতে চাইতো শুধু তখনই ইমরানের মা বুঝতে পারে তার আরেক নাতিপুতি আসতে চলেছে। তখন ইমরানের মা বলে সুখবর দিলি মা তুই। নিলুফা লজ্জা পেয়ে রুমে চলে যায়। ইমরান বাসায় আসার পর অনেক বার বলার চেষ্টা করেও লজ্জায় বলতে পারছিলো না। ইমরান এর মা ই সুখবর টা ইমরান কে জানালে, ইমরান খুব খুশি হয়। রুমে ঢুকে নিলুর হাত ধরে বলে আমায় জানাওনি কেন? নিলুফা অবাক হয়ে বলে কি জানাবো? সুখবর টা। নিলুফা লজ্জা পেয়ে বাইরে চলে যায়। ইমরান মুচকি মুচকি হাসতে থাকে আর ভাবে কি লজ্জা পাচ্ছে মেয়েটা। ৯ মাস পেরিয়ে ১০ মাস পরতেই নিলুফা ব্যাথায় কান্না করতে থাকে।গভীর রাত তখন। তারাতাড়ি হসপিটালে নেয়ার চেষ্টা করে ইমরান। গভীর রাত বলে হাসপাতালে নিতে একটু সময় লেগে যায়। খুব চিন্তা করতে থাকে ইমরান আর তার মা। নুর কে সহ নিয়ে এসেছে। খুব খারাপ অবস্থা। ডাক্তার চেষ্টা করে, বাচ্চাটা কে সুস্থ ভাবে দুনিয়ায় আনার কিন্তু অবস্থা খুবই খারাপ। বাচঁবে কিনা সন্দেহ, এর কিছুক্ষণ পর মেয়ে হয়। বাচ্চা হওয়ার পর পরই নিলুফা মারা যায়। কিছুক্ষণ পর বাচ্চাটাও মারা যায়। ডাক্তার বাইরে এসে ইমরান কে বলে, সরি আপনারা আনতে খুব দেরি করে ফেলেছেন। আমরা অনেক চেষ্টা করেও কাউকে বাঁচাতে পারিনি, সরি। ইমরান কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে, ইমরান এর মা ইমরানের কাধে হাত রেখে বলে কাদিস না বাবা। উঠ, এটা হয়তো রোদেলার চোখের পানির মূল্য। ইমরান আরো হাউ মাউ করে কান্না করতে থাকে, ইমরান বুঝতে পারে কেউ কাউকে ইচ্ছে করে কাদালে তাকে নিজেও এক সময় কাদতে হয়। কিন্তু তার জন্য দুটি প্রান? 

 


Tanvir Arafat

93 Blog Postagens

Comentários