ধূসর রঙের মেঘ

আকাশ যখন মেঘে ঢেকে যায় তখন আকাশটা দৃশ্যটা এমনই হয়।।

 

 

-এই নীতু শোন, একটু এদিকে আসবি? তোকে একটা কথা বলবো।

 

ছাদে কাপড়গুলো রোদে শুকাতে দিয়ে নীতু ঘুরে তাকালো পাশের বাড়ির ছাদে। নীতু দেখতে পেল, হাসান ভাই এই তীব্র রোদে বই হাতে নিয়ে ওর দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে। এই নিষ্পাপ অপলক তাকানো খুব কম মেয়ের পক্ষেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। নীতুর জন্য তা শূন্যই বলা চলে। একটু পাগল টাইপের লোক হাসান ভাই। নীতুদের এলাকায় "পাগল হাসান" নামেই সবাই চিনে। আড়ালে অনেকেই বলে, হাসানের মাথায় সমস্যা আছে। তীব্র রোদে ছাদে বসে বই পড়া, রাতে ছাদে শুয়ে থাকা, মাঝরাতে রাস্তায় হাঁটা এসবই হাসানকে "পাগল হাসান" নামে ডাকার অন্যতম কারন। অবশ্য নীতুর কাছে হাসানকে কখনই পাগল মনে হয়না। কি সুন্দর চেহারা! কি সুন্দর করে কথা বলে মানুষটা! এমন ভালো মানুষকে পাগল বলে বিশ্বাস করা নীতুর জন্য কঠিন ব্যাপার। সবাই যখন পাগল বলে হাসানকে খেঁপায় তখন নীতুর ভীষণ খারাপ লাগে। দরজা বন্ধ করে আড়ালে কাঁদে নীতু। নীতু জানে না, তার এই কান্নার কারন কি। কিন্তু নীতুর কাছে হাসান ভাই পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ। ভালো মানুষকে নীতুর পাগল ভাবা খুবই কষ্টের ব্যাপার। নীতু এগিয়ে আসে সামনে। দুটি বাড়ির ছাদ একদমই কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। খুব সহজেই এই ছাদ থেকে ওই ছাদে যাওয়া যায়। নীতুর এই মুহূর্তে হাসানের কাছে যেতে ইচ্ছে করছে না। নীতু জানে হাসান ভাই কি বলবে। বলবে, নীতু, তোকে আজ খুবই সুন্দর লাগছে। নীতুর কাছে এই কথাটা শুনতে খুবই ভালো লাগে। প্রতিদিন একবার করে হাসান ভাইয়ের মুখ থেকে শুনলেও নীতুর কাছে কখনো শুনতে খারাপ লাগে না। নীতু চায়, হাসান ভাই তাকে সুন্দর বলুক। নীতু বলল, কি বলবেন, হাসান ভাই?

 

হাসান হাত থেকে বইটা পাশে রেখে বলল, তোকে আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে, নীতু। এই সূর্যের রশ্মির থেকেও তোর রূপের আলোক রশ্মি আমায় ভীষণভাবে পোঁড়ায়। এত সুন্দর কেন তুই?

 

নীতু খুব লজ্জা পেল। লজ্জায় ওর সুন্দর মুখের কোণে লাল আভা ফুটে উঠেছে। এই কথার উত্তরে কি বলবে বুঝতে পারছে না সে।

 

হাসান যেন অন্তর্যামী। নীতুর মনের কথাটা বুঝতে পেরে বলল, তোকে কিছু বলতে হবে না, নীতু। তোর জন্য একটা কবিতা লিখেছি, শুনবি?

 

হাসান ভাইয়ের কবিতার একনিষ্ঠ ভক্ত নীতু। খুব সুন্দর করেই কবিতা আবৃতি করে। নীতুর খুবই পছন্দ। নীতুর মন বলছে, এখানে দাঁড়িয়ে আজ কবিতা শুনেই কাটিয়ে দিবে দীর্ঘ রজনী। নীতু বলল, হাসান ভাই, আমার কাজ আছে। অন্য একদিন শুনবো।

 

হাসান নীতুর কথা বোধহয় শুনতে পেল না। নীচে পড়ে থাকা ছেঁড়া কাগজগুলো থেকে একটি হাতে নিয়ে বলল, আমার হাতের লেখা খুবই বাজে। লেখা সুন্দর হচ্ছে না দেখে লিখছি আর নিচে ফেলে দিচ্ছি। ফেলে দেয়া কাগজ থেকেই তোকে আবৃতি করে শোনাচ্ছি। মনোযোগ দিয়ে শুনবি কিন্তু, নীতু।

 

হাসান কবিতা আবৃতি করছে। নীতু যেন হাসানের কবিতার মোহে আটকা পড়েছে। একমনে শুনছে ছাদের একপাশে দাঁড়িয়ে। একসময় নীচ থেকে মায়ের কন্ঠ শুনে চমকে উঠে নীতু। হাসান তখনও তার কবিতা আবৃতি করেই চলেছে। নীতু একবার সেদিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে পড়ল।

 

শায়েলা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন দরজার সামনে। নীতুকে নিচে নামতে দেখে কোমড়ে হাত দিয়ে বললেন, এই কয়টা কাপড় দিয়ে আসতে এক ঘন্টা লাগে কেন তোর? ছাদে কি করছিলি, নীতু?

 

নীতু তার মাকে এড়িয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে বলল, কিছু না মা। এমনি দেরি হয়ে গেছে।

 

-কিছু বুঝিনা ভেবেছিস? ওই হাসান ছেলেটার সাথে এত কথা কিসের? পাগল মানুষের সাথে কিছু বলার আছে বলে তো আমার মনে হয় না। কিছু বললেই হাসে নয়তো কাঁদে।

 

নীতু তার মায়ের কথার উত্তর না দিয়ে রুমে ঢুকে জোরে দরজা বন্ধ করে দিল।

 

শায়েলা বেগম চেঁচিয়ে বললেন,কি এক মেয়ে জন্ম দিলাম, কিছু বলতেও পারবো না। কিছু বললেই দরজা বন্ধ করে কাঁদবে। আমি মা, আমি বকা দিবো না তো কি পাশের বাসার ভাবি এসে তোকে বকা দিবে? যত জ্বালা সব হয়েছে আমার। আরও কিছুক্ষন একমনে চিৎকার করে শায়েলা বেগম চুপ হয়ে গেলেন। তিনি জানেন, এসব কথা অযথা বলছেন। নীতু এক কানে শুনবে, অন্য কানে বের করে দিবে।

 

মাগরিবের আযানের একটু আগে নীতুর ঘুম ভেঙে যায়। কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে খেয়াল ছিল না। বিছানা থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়ায় নীতু। চোখ দুটো ফুলে আছে। চোখের দিকে তাকিয়ে নীতুর নিজেকে কেমন বোকা বোকা মনে হয়। একটু হলেই কান্না করে কেন? কান্না না করে চুপ করেও তো বসে থাকা যায়। নীতুর মাঝে মাঝে মনে হয়, ওর শরীরে পানির পরিমান ৮০ ভাগ। ১০ ভাগ শুধু চোখের জন্য দেয়া হয়েছে। দরজা খুলে নীতু দেখতে পায়, মা টেবিলে ভাতের প্লেট নিয়ে বসে আছে।

 

নীতুকে দেখতে পেয়ে শায়লা বেগম বললেন, দরজা খুললেন আপনি? আর বকা দিবো না। তোমাকে বকা দিলে আমিও খেতে পারিনা। এখন খেয়ে আমাকে উদ্ধার করো, মা।

 

নীতু মায়ের কথায় হেসে ফেলে। চেয়ারে বসে হা করে খাবার জন্য। শায়েলা বেগম মেয়েকে পরম যত্নে খাইয়ে দেন। খাওয়া শেষ করে বলেন, কোথাও বের হবি নাকি? হাতে ব্যাগ নিয়ে সন্ধ্যায় কোথায় যাবি?

 

-একটু মার্কেটে যাবো, মা। আমার কিছু কিনতে হবে। আমার সঙ্গে সায়মা যাবে, বলল নীতু।

 

শায়লা বেগম কপট রাগ দেখাতে গিয়ে থেমে গেলেন। বললেন, কাল সকালে আমাকে নিয়ে চল। আমিও কিছু কিনবো।

 

নীতু বলল, উফফ, আমার এখনই যেতে হবে। আর সবকিছু মায়ের সাথে কেনা যায় না। আমি এখন আসছি।

 

-আচ্ছা ঘন্টাখানেকের মধ্যে চলে আসবি। তোর বাবা ফোন দিলে আমি কিছু বলতে পারবো না। শায়েলা বেগম একবার দেয়ালে ঝুলানো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মেয়ের পথ চেয়ে দরজা বন্ধ করলেন।

 

নীতু রাস্তায় বেরিয়ে একটু সামনে যেতেই দেখতে পেল ওর বান্ধবী সায়মা আসছে। সায়মার গায়ে একটা খয়েরী রঙের চাদর। ওর বাবা গতমাসে কিনে দিয়েছে। চাদরের কথা মনে হতেই নীতুর মনে পড়ল এই কনকনে ঠান্ডায় সে গরম কাপড় না পড়েই বেরিয়ে পড়েছে। এতক্ষন ব্যাপারটা খেয়ালই করেনি নীতু। নীতুর ওর মায়ের প্রতি ভীষণ রাগ হতে শুরু করল। তার নাহয় খেয়াল ছিল না, কিন্তু বের হওয়ার সময় একবার তো বলতে পারতো, চাদরটা গায়ে জড়িয়ে যা। শুধু পারে বকা দিতে। এখন ঠান্ডায় হাঁটবো কিভাবে?

 

সায়মা এসে বলল, কিরে নীতু, তোর জন্য গরম চলে এসেছে নাকি? আশপাশে তো আম-কাঁঠাল কিছুই চোখে পড়ছে না।

 

-নারে, একদমই মনে ছিল না।তাড়াহুড়ায় বের হয়ে পড়েছি। তোর দিকে তাকাতেই ব্যাপারটা খেয়াল হলো।

 

-তা এই সন্ধ্যায় মার্কেটে যাওয়ার শখ হলো কেন তোর? জানিস কত কষ্টে বাসায় রাজি হয়েছে।

 

নীতু মাথা নিচু করে চাপা স্বরে বলল, কাল হাসান ভাইয়ের জন্মদিন। উনাকে কিছু দিবো ভাবছি।

 

সায়মা নীতুর চিবুক ধরে বলল, দেখি লজ্জাবতী। তাই তো বলি, মন কই থাকে? বাসা থেকে বের হয়েছে, অথচ এই ঠান্ডায় চাদর আনতে মনে থাকে না। প্রেমে পড়লে মনের আর কি দোষ?

 

নীতু হঠাৎ সায়মার দিকে তেড়ে আসতেই সায়মা হাসিতে ফেটে পড়ে ছুটতে শুরু করল সামনে। নীতুও তাড়া করল সায়মাকে। তাদের দেখে কে বলবে, এখনও শৈশবের দূরন্তপনা হারিয়ে যায়নি।

 

হাসান টেবিলে বসে আছে। সামনের জানালাটা খুলে রেখেছে সে। মৃদু ঠান্ডা বাতাসে মাঝেমাঝে জানালার পর্দা নড়ছে। হাসান আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে? তার সামনে সাদা একটা পৃষ্টা পড়ে আছে। কি যেন গোটাগোটা অক্ষরে লেখা। হঠাৎ হাসানের চোখদুটোতে যেন আনন্দের ঝিলিক ফুটে উঠেছে। সে দেখছে, রাস্তায় ঘোড়ারগাড়ি ছুটছে। খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ঘোড়ারগাড়ি। লাল শাড়িতে নববধূ ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। হাসান উঁকি দিয়ে দেখতে পেল, নববধূ মেয়েটি নীতু। নীতুকে লাল শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে। কিন্তু পাশের বর যেন নিজেকে আড়াল করে রেখেছে সাদা রুমালে। হাসানের ভীষণ ইচ্ছে করছে, বর কে দেখার জন্য। বরকে অনেকটা তার মতোই লাগছে। হাসানের মুখে হাসি। সে আস্তে আস্তে বরের মুখ থেকে রুমাল সরাতে চাইছে। কিন্তু হাসান যেন পারছে না। হাসানের চোখদুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। এমন লাগছে কেন? হঠাৎ চেয়ার মেঝেতে পড়ার আওয়াজ শোনা গেল।

 

বাসায় ফিরতে ফিরতে নীতুর বেশ রাত হয়ে গেল। অবশ্য তেমন বকা শুনতে হয়নি। শুধু নীতুর মা জিজ্ঞেস করেছিল, এতক্ষন কি করছিলি? নীতু বলেছিল,সায়মাও কয়েকটা জিনিস কিনেছে। নীতু তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে বিছানায় বসে অপেক্ষা করছে। হাসান ভাইয়ের জন্য একটা শাল কিনেছে। দামটা একটু বেশিই নিয়ে গেছে দোকানদার। নীতুর চারমাসের জমানো সবগুলো টাকাই শেষ। অবশ্য নীতুর সে জন্য মন খারাপ লাগছে না। নীতু ভাবছে, কিভাবে সে এই জিনিস হাসান ভাইকে দিবে? ইশশ, কি লজ্জার ব্যাপার, নীতু দু'হাতে মুখ ঢেকে ফেলল। তারপর ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখতে পেল, আর বেশি সময় হাতে নেই। একটু পরেই ঘড়ির কাটায় বারোটা বাজবে। শালের উপরে রঙিন পেপার দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। নীতু টেবিল থেকে একটা কলম নিয়ে লিখতে বসেছে। ভাবছে, হাসান ভাই লিখবে নাকি হাসান? অনেক ভেবে শেষে নীতু্ লিখেছে, "হাসান ভাই, আপনার জন্য আমার বিশেষ উপহার। প্লিজ, এই শীতে খালি গায়ে থাকবেন না। আমার দেয়া শাল পড়ে তারপর ছাদে বসে কবিতা লিখবেন। কেমন?"

 

ঘড়ির কাটায় বারোটা বাজতেই নীতু রুম থেকে বেরিয়ে বেশ সাবধানে দরজা খুলল। নীতুর বেশ ভয় লাগছে, সঙ্গে চাপা উত্তেজনা। নীতু ভাবছে, এটা হাতে নেয়ার পর হাসান ভাই কি বলবে? উনি কি নীতুকে জড়িয়ে ধরবে? অবশ্য আজকে নীতুর সব পাগলামিই ভালো লাগছে। জড়িয়ে ধরলে ধরবে। নীতু সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আস্তে গেইটের দরজা খুলল। চোখ বন্ধ করে আন্দাজে পা ফেলে কিছুদূর যেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। বেশ আস্তে বলল, শুভ জন্মদিন হাসান ভাই। এটা আপনার জন্য। আপনাকে কেউ কিছু বললে আমার ভীষণ কান্না আসে। আমি দরজা বন্ধ করে কান্না করি। আমি জানি না, কেন এমন হয়? যদি এটাই ভালোবাসা হয়, তবে আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি হাসান ভাই।

 

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে নীতু চোখ খুলল। কিন্তু পুরো ছাদ শূন্যতায় যেন মুড়ে আছে। ছাদের কোণায় একটা কাপড় বাতাসে উড়ছে। নীতু ভীষণ অবাক হলো। এই সময়ে তো হাসান ভাইয়ের ছাদে থাকার কথা। আর হাসান ভাই তো জানে, আজকে আমি আসবো। কিন্তু মানুষটা কোথায় গেল?

নীতু ছাদের কোণায় গিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে শুরু করল। নীতুর ভীষণ শীত করছে। কিন্তু তাকে একবার দেখার জন্য এমন কনকনে শীতের বাতাস অনায়াসে উপেক্ষা করতে পারে নীতু। মাঝরাত পেরিয়ে গেলেও হাসানের দেখা পেল না নীতু। নীতুর ভীষণ কান্না আসছে। নীতু আর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে একসময় বাসায় চলে আসল। রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে পলকহীনভাবে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। একবার যদি হাসান ভাইয়ের দেখা পায়।

 

কোলাহলের আওয়াজ শুনে তন্দ্রাচ্ছন্ন কেটে যায় নীতুর। চারপাশে আলো ফুটেছে। নিচে তাকিয়ে দেখতে পায়,অনেক মানুষের জটলা। একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। নীতুর ভেতরটা কেমন যেন হু হু কে কেঁদে উঠল। দৌঁড়ে গেল কি হয়েছে দেখতে। গেইট থেকে বেরিয়ে নীতু দেখতে পেল পারভিন আন্টি কাঁদছেন। নীতু এগিয়ে এসে বলল, কি হয়েছে আন্টি? কাঁদছেন কেন আপনি?

 

-নীতু রে, হাসানের আবার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কাল রাতে টেবিলে বসে কি যেন লিখছিল দেখে গেলাম। একটু পরে চেয়ার পড়ার আওয়াজ শুনে রুমে এসে দেখি, মেঝেতে পড়ে আছে। জ্ঞান ফিরতেই আর কাউকে চিনতে পারছে না। এখন মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। ভালো থাকিস রে, মা।

 

হাসানের আম্মুর কথা শুনে নীতু সামনে দৌঁড়ে গেল। এত মানুষের ভীড়ে নীতুর প্রিয় হাসান ভাইয়াকে দেখা যাচ্ছে না। গাড়ি বোধহয় ছেড়ে দিবে। হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে ড্রাইভার। ভীড় ঠেলে নীতু সামনে আসতেই দেখতে পেল, হাসান ভাইকে দুজন লোক দু'দিক থেকে ধরে আছে। হাসান ভাই কিছুতেই যাবেনা। নীতু এগিয়ে এসে হাসানের গালে হাত রেখে বলল, হাসান ভাই, আমি তোমার নীতু। আমাকে চিনতে পারছো না? এই হাসান ভাই, তোমাকে দিবো বলে একটা শাল কিনেছি। কিন্তু তোমাকে রাতে ছাদে গিয়ে পাইনি।

 

হাসান একদৃষ্টে নীতুর দিকে তাকিয়ে আছে। যেন কোনো নারীর সৌন্দর্যে কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।

 

নীতু দেখতে পেল, হাসানের গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। হাসান শান্ত হতেই লোক দুইজন তাড়াতাড়ি গাড়িতে নেয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। নীতুর চোখে পানি। শেষবারের মতো হাসান ভাইয়ের মায়াবী মুখখানা দেখছে সে। হাসান হাত বের করে চিৎকার করছে। হাত থেকে একটি কাগজ পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি ছেড়ে দিল আপন গন্তব্যে।

 

নীতু কাগজখানা হাতে নিয়ে দেখতে পেল, উপরে "নীতুর জন্য" লেখা। কৌতূহল সামলাতে না পেরে কাগজখানা খুলে পড়তে শুরু করল-

 

প্রিয় নীতু,

জানিস, তুই অসম্ভব ভালো একটি মেয়ে। আমি জানি, তুই আমাকে পছন্দ করিস। আমিও তোকে খুব পছন্দ করি। আমি তোকে নিয়ে সবসময় একটি স্বপ্ন দেখি। একটা ঘোড়ারগাড়ি ছুটে চলেছে। লাল শাড়ি পড়া নববধূ ভেতরে বসে আছে। সেই নববধূ মেয়েটি কে বল তো? সেই মেয়েটি তুই নীতু। কিন্তু নীতু, তোর পাশে বসা বর লোকটাকে আমি সবসময় ঝাপসা দেখি। এমনটা হয় কেন বল তো? শোন নীতু, আমি জানি আমার মাথায় সমস্যা আছে। আমাকে পাগল বললে তোর ভীষণ খারাপ লাগে। নীতু একটা কথা শোন, পাগলের সাথে পাগলামি করা যায় কিন্তু সংসার করা যায় না। তোর সাথে একটা সুন্দর রাজপুুত্রের বিয়ে হবে, নীতু। ভালো থাকিস...

 

তোর

হাসান ভাই

 

নীতু ছেড়ে যাওয়া গাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে। নীতুর চোখে পানি চিকচিক করছে। শূন্যতায় বুক ফেটে কান্না আসছে। নীতু ভাবছে, এটাই কি ভালোবাসার স্বার্থকতা? যেখানে দুজন মানুষই অনুভব করতে পারবে হারানোর শূন্যতা। পাগল জেনেও নদীর স্রোতের মতো শুধুই ভালোবেসে যাওয়া। হয়তো পাগলামি, ভালোবাসার পাগলামি। 

 


Tanvir Arafat

93 博客 帖子

注释