ক্যানটারভিলে ভূত

অ্যামেরিকান মিনিস্টার মিঃ হিরাম বি. ওটিস ক্যানটারভিলে চেস বাড়িটি কিনে যে নির্বুদ্ধিতার কাজ

অ্যামেরিকান মিনিস্টার মিঃ হিরাম বি. ওটিস ক্যানটারভিলে চেস বাড়িটি কিনে যে নির্বুদ্ধিতার কাজ করেছেন এই কথাটা ঘুরে-পরে সবাই তাঁকে বলেছিল। কারণ বাড়িটি যে ভূতুড়ে সেবিষয়ে কারও কোনো সন্দেহ ছিল না। এমন কি ন্যায়নিষ্ঠ লর্ড ক্যানটারভিলে নিজেও মিঃ ওটিস তাঁর সঙ্গে দরদস্তুর করতে এলে, তাঁরে এ-বিষয়ে সাবধান করে দিয়েছিলেন।

 

লর্ড ক্যানটারভিলে বললেন–আমরা নিজেরাই ওই বাড়িটা বাসের উপযুক্ত বলে মনে করিনি। একবার আমার বিধবা পিতামহী বোলটনের ডাচেস ডিনারের জন্যে পোশাক পালটাচ্ছিলেন। এমন সময় দুটি কঙ্কাল হাত এসে তাঁর কাঁধের ওপরে পড়ে। এই দেখেই ভয়ে তিনি মূর্দা যান। আরো একটা কথা আপনাকে আমার বলা দরকার, মিঃ ওটিস, আমাদের সংসারের অনেকেই ওই ভূতটাকে দেখেছে; এমন কি স্থানীয় গির্জার রেকটার এবং কেম্ব্রিজের কিংস কলেজের ফেলো রেভা, আগস্টাস ড্যামপিযরও বাদ যাননি। ডাচেসর সেই দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনার পর থেকে আমাদের ছোকরা চাকরদের কেউ আর আমাদের সঙ্গে ওই বাড়িতে থাকতে রাজি হয়নি; আর রাত্রিতে বারান্দা আর লাইব্রেরির দিক থেকে যে সমস্ত অদ্ভুত-অদ্ভুত শব্দ আসত সেই সব শব্দ শোনার পরে লেডি ক্যানটারভাইলের রাত্রে ঘুম হত না।

 

মিনিস্টারটি উত্তর দিলেন–মি লর্ড, আসবাবপত্র আর ভূত দুজনকেই বাড়ির সঙ্গে দাম নিয়ে আমি কিনে নেব আমি যে-দেশ থেকে আসছি সেটা হচ্ছে আধুনিক। সেখানে টাকা দিয়ে সব কিছু কেনা যায়। আজকাল ছোকরারা পুরনো পৃথিবীটাকে লাল রঙে চিত্র-বিচিত্র করে আর সেরা অভিনেত্রী আর নতকীদের তুলে নিয়ে গিয়ে বাহবা লুটছে। আমার ধারণা ইওরোপে ভূত বলে যদি কোনো পদার্থ থেকেই থাকে তাহলে অতি শীঘ্রই আমরা তার জন্যে জনসাধারণকে আনন্দ দেওয়ার উদ্দেশ্যে হয় যাদুঘরের ব্যবস্থা করে দেব আর নয়তো রাস্তায় নিয়ে খেলা দেখাব।

 

লর্ড ক্যানটারভিলে একটু হেসে বললেন–আমার বিশ্বাস ভুত রয়েছে, যদিও সে আপনাদের অতি উদযোগী সংগঠকদের প্রস্তাব হয়তো নাকচ করে দিয়েছে। তিনশো বছর ধরে ও এখানে বাস করছে—১৫৪৮ সাল থেকেই একরকম বলতে পারেন এবং আমাদের সংসারে কারও মৃত্যুর আগেই সব সময়ে ও দেখা দিয়েছে।

 

লর্ড ক্যানটারভিলে, কারও মৃত্যুর আগে বাড়ির ডাক্তারও তো আসেন। কিন্তু স্যার, ভূত বলে। কোনো বস্তু নেই। আমার ধারণা ব্রিটিশ অভিজাত সম্প্রদায়কে খুশি করার জন্যে প্রকৃতি তার। কর্তব্যকর্মে অবহেলা করবে না।

 

মিঃ ওটিসের শেষ মন্তব্যটি অনুধাবন করতে না পেরে লর্ড ক্যানটারভিলে বললেন–অ্যামেরিকাতে আপনারা খুব স্বাভাবিক অবস্থায় দিন কাটান; আর বাড়িতে আপনি যদি ভূতের অস্তিত্ব স্বীকার না করেন তাহলে আমার অবশ্য বলার কিছু নেই। কেবল মনে রাখবেন এ-বিষয়ে আপনাকে আমি আগেই সাবধান করে দিয়েছি।

 

সপ্তাহ খানেকের ভেতরেই বাড়ি কেনার কাজ শেষ হয়ে গেল; মাসের শেষ নাগাদ। মিনিস্টার আর তাঁর সংসারের সবাই সেই বাড়িতে উঠে এলেন। মিসেস ওটিস এখন মধ্যবয়স্কা রমণী, চোখ দুটি আর চেহারা বড়োই সুন্দর। ইনি ছিলেন প্রাক-বিবাহিত জীবনে ওয়েস্ট তিপ্পান্নতম স্ট্রিটের নিউ ইয়র্কের প্রখ্যাত নর্তকী মিস লুক্রেসিয়া আর টাপান। দেশ। ছাড়ার পরে অনেক আমেরিকান মহিলাদের স্বাস্থ্যভঙ্গ হয়ে যায়–এক কথায় তাঁরা হয়ে। পড়েন চিররুগ্ন; তাঁরা মনে করেন এইটাই বুঝি ইওরোপীয় শালীনতা। কিন্তু মিসেস ওটিস সে ভুল করেননি। তাঁর স্বাস্থ্যটি বড়ো চমৎকার ছিল। জৈব প্রেরণায় তিনি ছিলেন উদ্দাম। সত্যি কথা বলতে কি অনেক দিন থেকেই তিনি ছিলেন ইংরাজ রমণী। আজকাল এক ভাষা ছাড়া আমেরিকার সঙ্গে আমাদের যে অদ্ভুত একটা মিল রয়েছে তিনি ছিলেন তারই একটি উজ্জ্বল। নিদর্শন। জাতীয়তাবাদের উৎসাহে বাপ-মা তাঁদের বড়ো ছেলের নাম দিয়েছিলেন ওয়াশিংটন। এর জন্যে অনুশোচনা তাঁরা কম করেননি। ছেলেটির চুলগুলি বড়ো। চমৎকার–দেখতে মোটামুটি ভালোই। পরপর তিনটি বছর নিউপোর্ট ক্যাসিনোতে জার্মানদের হারিয়ে আমেরিকান কূটনীতিতে সে যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করেছিল। এমন কি লন্ডনেও বেশ ভালো নাচিয়ে হিসাবে সে বেশ নাম করেছিল। মিস ভাউিনিযার বয়স পনেরো-চঞ্চলা, হরিণ শিশুর মতো সুন্দর দুটি বড়ো বড়ো নীল চোখ-স্বাধীন আর বেপরোয়া। শক্তির দিক থেকেও একেবারে রণদুর্মদা। একবার টাটু ঘোড়ার ওপরে চেপে সে বৃদ্ধ লর্ড বিলটনের সঙ্গে দু’দুবার পার্কের চারপাশে দৌড়ে অ্যাকিলিসের প্রতিমূর্তির ঠিক সাত হারিয়ে দিয়েছিল। এই দেখে চেশায়ারের যুবক ডিউক আনন্দে এতই উত্তেজিত হয়ে ওঠে যে। সে সেখানেই তাকে বিয়ের প্রস্তাব করে। ফলে তার অভিভাবকেরা সেই রাত্রিতেই তাকে ইটনে পাঠিয়ে দেন। ডিউক কাঁদতে কাঁদতে চলে যায় ইটলে। ভার্জিনিয়ার পরে দুটি যমজ ছেলে হয়। তারা সব সময় বনবন করে ঘুরত বলে তাদের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘দি স্টারস আর স্ট্রাইপস, বড়ো সুন্দর ছেলে দুটি একমাত্র মিঃ ওটিস ছাড়া সেই পরিবারের ওরাই ছিল একমাত্র রিপাবলিকান।

 

ক্যানটারভিলে চেস সবচেয়ে কাছের রেল স্টেশন অ্যাসকেট থেকে সাত মাইল দূরে। মিঃ ওটিস একটা খোলা গাড়ির জন্যে টেলিগ্রাফ করেছিলেন। সবাই বেশ সুর্তি করে হইচই করতে-করতে গাড়িতে উঠে বসলেন। জুলাই মাসের একটি সুন্দর সন্ধ্যা-পাইন বনের গন্ধে বাতাস একেবারে মাতোয়ারা। মাঝে-মাঝে বুনো পায়রার ডাক শোনা যাচ্ছিল। বীচ গাছের ভেতর দিয়ে তাঁদের দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগল বাচ্চা বাচ্চা কাঠবিড়ালেরা। ক্যানটারভিলে চেস-এর রাস্তায় ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে আকাশ হঠাৎ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে গেল। নেমে এল বাতাসে একটা থমথমে ভাব। মাথার ওপর দিয়ে একদল দাঁডকাক নিঃশব্দে উড়ে গেল। বাড়িতে পৌঁছানোর আগেই কয়েকটা বড়ো বড়ে

 

একটি বৃদ্ধা মহিলা সিঁড়ির ওপরে নেমে এসে তাঁদের অভ্যর্থনা জানালেন। পরিধানে তাঁর কালো সিল্কের একটি পরিচ্ছন্ন পোশাক, মাথায় সাদা টুপি, আর গায়ে সাদা এপ্রোন। ইনি হচ্ছেন গৃহকর্ত্রী মিসেস উমনে। লেডি ক্যানটারভিলের অনুরোধ তাঁকেই মিসেস ওটিস তাঁর পূর্ব পদে বহাল রাখতে রাজি হয়েছিলেন। তাঁর পিছু পিছু তাঁরা সবাই সুন্দর টিউডর যুগের হলঘর পেরিয়ে লাইব্রেরি ঘরে এসে ঢুকলেন। ঘরটা হচ্ছে লম্বা, নীচু কালো ওক গাছের প্যানেল দেওয়া ঘর। এখানেই চা-এর বন্দোবস্ত হয়েছিল। জামা খুলে তাঁরা সবাই বসে চারপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলেন। মিসেস উমনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে করতে লাগলেন তদারকি।

 

হঠাৎ মিসেস ওটিস লক্ষ করলেন ফায়ার প্রেসের পাশে মেঝের ওপরে হালকা ধরনের একটা লাল দাগ পড়ে রয়েছে। এর অর্থটা কী বুঝতে না পেরে তিনি মিসেস উমনেকে বললেন–ওখানে সম্ভবত কোনো রঙ পড়েছে।

 

মিসেস উমনে নীচু স্বরে বললেন–হ্যাঁ, মাদাম। ওখানে রক্তের ছিটে পড়েছে।

 

মিসেস ওটিস চিৎকার করে উঠলেন–কী বিপদ! বসার ঘরে ওরকম রক্তের দাগ আমি মোটেই বরদাস্ত করতে পারি লো এখনই ওটা মুছে ফেলতে হবে।

 

বৃদ্ধাটা হেসে আগের মতোই রহস্যজনক স্বরে বললেন–ওটা হচ্ছে লেডি এলিনোর দ্য ক্যানটারভিলের রক্ত। ১৫৭৫ সালে ঠিক এই জায়গাতেই স্বামী স্যার সাইমন দ্য ক্যানটারভিলে তাঁকে হত্যা করেছিলেন। স্যার সাইমন তারপরে নটি বছর বেঁচেছিলেন। তার পরেই একদিন রহস্যজনকভাবে হঠাৎ তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে যান। তাঁর দেহটিকে আডও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাঁরই প্রেতাত্মা এখন-ও এই বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিদেশি পর্যটক এবং আরো অনেক এই রক্তচিহ্নটিকে খুবই প্রশংসা করেছেন; আর ওটিকে আজ পর্যন্ত মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি।

 

ওয়াশিংটন ওটিস চিৎকার করে বলল–যত সব আবোল-তাবোলের কথা! পিনকারটার চ্যাম্পিয়ন স্টেন রিমোভার এবং প্যারাগন ডিটারজেন্ট লাগালেই ও-রঙ উঠে যাবে।

 

সেই ভয়ার্ত গৃহকর্ত্রী কিছু বলার আগেই সে হাঁটু মুড়ে বসে কালো কসমেটিক-এর মতো একটা চিটচিটে বস্তু দিয়ে মেঝেটা ঘষতে শুরু করল। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই সেই দাগ উঠে গেল।

 

বিজয়গর্বে সে চেঁচিয়ে উঠল–আমি জানতাম এতেই কাজ হবে। কিন্তু এই কথা বলার সঙ্গে-সঙ্গে হঠাৎ একটা বিদ্যুৎ চমকে উঠল, সেই থমথমে ঘরের মধ্যে বিদ্যুতের ঝিলিক খেলে গেল–আর ভীষণ একটা বঙ্ঘাত তাঁদের সকলের আপাদমস্তক কাঁপিয়ে দিয়ে গেল। মিসেস উমনে তো সেই শব্দে ভির্মি গেলেন।

 

অ্যামেরিকান মিনিস্টার শান্তভাবে বললেন–সত্যিই কি ভয়ঙ্কর আবহাওয়া! এই বলে তিনি লম্বা একটা চুরুট ধরালেন।-আমার ধারণা, এই পুরনো অঞ্চলটির লোকসংখ্যা এতই বেশি গিয়েছে যে প্রত্যেকে ভালো আবহাওয়া পাচ্ছে না। আমি সব সময়েই বলে এসেছি এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হচ্ছে এদেশ থেকে জনতাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া।

 

মিসেস ওটিস বললেন–প্রিয় হিরাম, যে মহিলা মূৰ্ছা যান তাঁকে নিয়ে আমরা কী করব?

 

ভাঙা জিনিসপত্রের মতো ব্যবহার কর-তাহলে আর উনি মূৰ্ছা যাবেন না।

 

কিছুষ্কণের মধ্যেই মিসেস উমনের জ্ঞান ফিরে এল। তিনি যে বেশ বিব্রত হয়ে পড়েছিলেন সেবিষয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না। তিনি কঠোরভাবে মিঃ ওটিসকে এই বলে সাবধান করে দিলেন যে এই সংসারের ওপরে বিষম একটা বিপদ ঘনিয়ে আসছে।

 

তিনি বললেন নিজের চোখে আমি অনেক জিনিস দেখেছি, স্যার। সেই সব দেখে যে কোনো ক্রিশ্চানের শরীরেই রোমাঞ্চ জেগে উঠবে। এখানে যে সব ভয়ঙ্কর জিনিস ঘটেছে সেই সব দেখে রাত্রে আমি ঘুমোতে পারি নে।

 

মিঃ ওটিস এবং তাঁর স্ত্রী অবশ্য সেই সৎ মহিলাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন যে ভূতটুতকে তাঁরা ভয় করেন না। তাঁর নতুন মনিব-পত্নীর ওপরে ঈশ্বরে আশীর্বাদ বর্ষিত হোক এই প্রার্থনা করে আর সেই সঙ্গে মাইনে বাড়ানোর ব্যবস্থা করে বৃদ্ধা গৃহকর্ত্রী টলতে টলতে নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।

 

সারা রাত্রি ধরেই ভীষণ ঝড় চলল; কিন্তু বিশেষ কোনো ঘটনা ঘটেনি। পরের দিন সকালে কিন্তু মেঝের ওপরে আবার সেই রক্তের দাগটা দেখা গেল। ব্রেকফাস্টের সময় সবাই নীচে নেমে এসে ব্যাপারটা লক্ষ করল। ওয়াশিংটন বলল–আমার মনে হচ্ছে এর জন্যে প্যারাগন ডিটারজেন্টের দোষ নেই। এটা আমি অনেক পরীক্ষা করেছি। এর জন্যে নিশ্চয় ওই ভূতটাই দাষী। আবার সে ঘষে-ঘষে রক্তের দাগটা মুছে ফেলল; কিন্তু পরের দিন সকালে আবার সেই একই ব্যাপার ঘটল। যদিও লাইব্রেরি ঘরে যথারীতি তালা দেওঘা দিল, তৃতীয় দিন সকালেও সেই রক্তের দাগ দেখা দিল। এই দেখে সবাই বেশ কৌতূহলী হয়ে উঠল। মিঃ ওটিস ভাবলেন, ভূত নেই এ-বিষয়ে তাঁর ধারণা কিছুটা বাড়াবাড়ি হয়ে পড়েছিল। মিসেস ওটিস মনে করলেন প্রেতাত্মা নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন তাঁদের দলে তিনি নাম লেকাবেনা অপরাধের সঙ্গে ভডিত রক্তচিহ্নের স্থায়িত্ব নিয়ে মেসার্স মেঘারস আর পড়মোর কোম্পানিকে দীর্ঘ একটি চিঠি লেখার পরিকল্পনা গ্রহণ করল। ওয়াশিংটন। সেই রাত্রিতেই রাত্রিতেই ভূতের অস্তিত্ব সম্বন্ধে সকলের সন্দেহ চিরদিনের জন্যে দূর হল।

 

সারাটা দিনই যেমন রোদ উঠেছিল তেমনি ছিল গরম, শীতল। সন্ধ্যায় সবাই মোটরে চড়ে বেড়াত গেযেছিল। রাত্রি ন’টার আগে কেউ ফেরেনি সেদিন। ফিরেই সামান্য আহার করেছিল সবাই। সেদিন ভূত নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সুতরাং ভূতের অস্তিত্ব সম্বন্ধে ধারণা করার প্রাথমিক কোনো শর্তও সেদিন ছিল না। মিঃ ওটিসের কাছে আমি শুনেছিলাম সেদিন তাঁদের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল বিভিন্ন ধরনের, বিশেষ করে অবস্থাপন্ন আমেরিকানরা যে সব বিষয় নিয়ে সাধারণত আলোচনা করে–যেমন, অভিনেত্রী হিসাবে সারা বার্নদোতের চেয়ে মিস ফ্যানি ড্যাভোনপোর্টের শ্রেষ্ঠতা, এমন কি অবস্থাপন্ন ইংরাডংদের বাড়িতে সবুজ শস্য, বাকযুইট কেক, দুধে সেদ্ধ ভুট্টাচূর্ণের দুষ্প্রাপ্যতা; পৃথিবীর আত্মাকে বাঁচানোর জন্যে বোস্টন বন্দরের প্রয়োজনীয়তা, রেল-ভ্রমণে গাঁটরি পরীক্ষা করার সুবিধা, লন্ডনের বিরক্তিকর উচ্চারণের তুলনায় নিউ ইয়র্কের উচ্চারণের মিষ্টতা ইত্যাদি। অতিপ্রাকৃত ঘটনার সম্বন্ধে। কোনো আলোচনাই সেদিন হয়নি, এমন কি গল্পচ্ছলে স্যার সাইমন দ্য ক্যাটারভাইলের নাম উচ্চারণও কেউ করেননি। রাত্রি এগারোটার সময় সবাই শুয়ে পড়লেন এবং সাড়ে এগারোটার মধ্যেই ঘরের আলো সব নিবে গেল। কিছুক্ষণ পরে ঘরের বাইরে বারান্দায় ওপরে একটা অদ্ভুত শব্দে মিঃ ওটিসের ঘুম ভেঙে গেল। শব্দটা শুনে মনে হল ধাতুত ধাতুতে ঠোকাঠুকির শব্দ। আরো মনে হল শব্দটা ক্রমশ তাঁর ঘরের দিকেই এগিয়ে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি। বিছানা থেকে উঠে দেশলাই জ্বালিয়ে সময়টা দেখে নিলেন। ঘড়িতে তখন কাঁটায় কাঁটায় একটা বেড়েছে। বেশ শান্তভাবেই নিজের নাড়িটা দেখে নিলেন। না; এতটুকু বেচাল হয়নি নাড়ি। সেই অদ্ভুত শব্দটা তখনো হচ্ছিল। তিনি বেশ স্পষ্টই শুনতে পেলেন কেউ যেন পা ঠুকে ঠকে তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে। চটি পরে তিনি তাঁর ‘ড্রেসিং কেস’ থেকে লম্বাটে একটা ফাইল। বার করে দরজাটা খুললেন। ম্লান চাঁদের আলোতে তিনি দেখলেন তাঁরই সামলে ভয়ঙ্কর চেহারার এরটি বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার চোখ দুটো জলন্ত কয়লার মতো জ্বলছে। জটার মতো লম্বা ধূসর চুলগুলো ঝাঁপিয়ে পড়েছে তার কাঁধের ওপরে। তার পরিধানে প্রাচীন কালের পোশাক, সেগুলি যেমন নোংরা, তেমনি ফেঁড়া। তার হাতের কব্ধি আর পায়ের গাঁট থেকে বেশ ভারী আর মরচে-পড়া শেকল ঝুলছে।

 

মিঃ ওটিস বললেন–প্রিয় মহাশয়, ওই শেকলগুলিতে তেল দেওয়ার জন্য বাধ্য হয়েই আমি আপনাকে অনুরোধ জানাচ্ছি। আর সেই জন্যেই তামানি রাইসিং সান লিউব্রিকেটর’-এর একটা ছোটো শিশি আমি এনেছি। একবার লাগালেই কাজ হবে এতে। এর গুণ কত সে সম্বন্ধে। প্রশংসাপত্র-ও এর গায়ে সাঁটা রয়েছে। শোওয়ার ঘরের বাতির কাছে এটা আমি রাখছি। প্রয়োজন


Rx Munna

447 Blog posts

Comments