লাখপতি মডেল

অর্থশালী না হলে নিছক সুপুরষ হয়ে লাভ নেই। রোমান্সে একমাত্র অধিকার রয়েছে ধনীদের; বেকারদের এটা

অর্থশালী না হলে নিছক সুপুরষ হয়ে লাভ নেই। রোমান্সে একমাত্র অধিকার রয়েছে ধনীদের; বেকারদের এটা পেশা হতে পারে না। দরিদ্রদের থাকা চাই বাস্তব বুদ্ধি; তাদের হতে হবে সাংসারিক মনোহর হওয়ার চেয়ে স্থায়ী রোজগারী হওয়া অনেক ভালো। আধুনিক জীবনের এই মহান সত্যগুলি হিউজি আর্সকিনের মাথায় ঢুকত না। বেচারা হিউজিছ! আমাদের স্বীকার করতেই হবে বুদ্ধিবৃত্তির দিক থেকে ছেলেটা কিছু নয়। মানুষকে চমকে দিতে পারে জীবনে। এমন একটা উঁচু দরের অথবা নীচু দরের কথাও সে কখনো বলেনি। কিন্তু তাহলেও একথা আমাদের বলতে হবে যে চুল, তার কোঁকড়ানো তীহ চেহারা, আর ধূসর চোখ নিয়ে তাকে দেখতে সত্যিই বড়ো চমৎকার। পুরুষ অথবা নারী সকলেই তাকে বেশ প্রশংসা করত, গুণ ছিল তার অনেক দোষ ছিল তার একটি–সে রোজগার করতে জানত না। উত্তরাধিকারসূত্রে তার বাবা তাকে দিয়ে গিয়েছিলেন একটা তরোয়াল, আর পেনিনসুলার যুদ্ধের ওপরে লেখা পনেরো খণ্ডের ইতিহাস। হিউজি তরোয়ালটা ঝুলিয়ে রেখেছিল তার আয়নার গায়ে, আর বইগুলি ঢুকিয়ে রেখেছিল একটা কুলুঙ্গির ভেতরে। বৃদ্ধা এক খুড়িমা তার জন্যে বছরে যে দু’হাজার পাউন্ডের ব্যবস্থা করেছিলেন তারই ওপরে নির্ভর করে সে জীবিকা নির্বাহ করত। তবে রোজগারের চেষ্টা সে যে একেবারে করেনি তা নয়, অনেক করেছে– ছ’মাস ধরে সে স্টক এক্সচেঞ্জ-এ ঘুরেছে কিন্তু ষাঁড় আর ভালুকদের দলে সে একটা প্রজাপতি ছাড়া আর কী? বেশ কিছুদিন ধরে সে চাযের ব্যবসা করেছে কিছু হয়নি। তারপরে চেষ্টা করেছে ড্রাই শেরি বিক্রি করার। তাতেও ফায়দা হয়নি কিছু। তারপরে সে সব কিছু করা ছেড়ে দিয়েছে। বর্তমানে একটি পরিপূর্ণ বেকার সুন্দর যুবক ছাড়া সে আর কিছু নয়।

 

বিপদের ওপরে বিপদ। সে আবার প্রেমে পডেছে মেয়েটির নাম লরা মার্টন, অবসরপ্রাপ্ত একটি কর্নেলের মেযে। ভারতে চাকরি করার ফলে ভদ্রলোক তাঁর মেজাজ আর হজমশক্তি দুটিই হারিয়েছেন। আর তাদের ফিরে পাননি। লরা সত্যিই তাকে বড়ো ভালোবাসত; আর সে-ও তার জুতোর ফিতেতে চুমু খাওয়ার জন্যে সব সময় প্রস্তুত হয়ে থাকত। লন্ডন শহরে তারাই ছিল সবচেয়ে সুন্দর নর আর নারী; কিন্তু কপর্দকহীন এবং কপর্দকহীনা। হিউজিকে কর্নেল খুবই ভালোবাসতেন: কিন্তু এই বিয়ের ব্যাপারে ছিল তাঁর ঘোরতর আপত্তি।

 

“প্রিয় বৎস, তোমার নিজের দশটি পাউণ্ড জমলে আমার কাছে এসো। তখন ভেবেচিন্তে দেখা যাবে”।–এই কথাই তিনি বলতেন।

 

একদিন সকালে হল্যান্ড পার্কের দিকে, এইখানেই মার্টনরা থাকত, যাওয়ার পথে অ্যালেন ট্রেভরের সঙ্গে দেখা করার জন্যে সে নেমে পড়ল। ট্রেভর ছিল তার প্রাণের বন্ধু আর একজন নামকরা চিত্রকর। অবশ্য আজকাল অনেকেই ছবি আকে; কিন্তু সে ছিল একজন আর্টিস্ট;

 

আর্টিস্টরা সচরাচর বড়োই বিরল। ব্যক্তিগতভাবে ট্রেভরকে অত্যন্ত রুষ্ক প্রকৃতির বলে মনে। হবে; ভুরু ডোড়াটা থাকত তার সব সময় কুঞ্চিত দাড়ি ছিল লাল–আর অযত্নবর্ধিত। সে যাই হোক, একবার তুলি আর বুরুশ হাতে নিলে ব্যস, একেবারে দুহষ্ক চিত্রকর সে। তা ছাড়া বাজারে

 

ছবির-ও বেশ কদর ছিল তার। একথা অনস্বীকার্য সে সুন্দর চেহারার জন্যে প্রথম প্রথম সে হিউভির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। সে বলত–একমাত্র মূর্খ আর সুন্দর মানুষদেরই আর্টিস্টদের চেনা উচিত। ফুলবাবু আর মনোহরণকারীরাই পৃথিবী শাসন করে; অন্তত, করা উচিত। তারপরে হিউডের সঙ্গে ভালোভাবে পরিচয় হওয়ার পর থেকেই তার উচ্ছল স্বভাবের জন্যে তাকে তার ভালো লাগত।

 

হিউজি ভেতরে ঢুকেই দেখল ট্রেভর একটি অপরূপ প্ৰমাণ মাপের ভিক্ষুকের ছবির ওপরে শেষ তুলি বোলাচ্ছে স্টুডিয়োর এক কোণে একটি উঁচু বেদীর ওপরে স্বয়ং ভিক্ক মডেল হয়ে

 

দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার মুখের চামড়া চুপসে গিয়েছে, বার্ধক্যের ছাপ পড়েছে তার সর্বাঙ্গে, তার সারা দেহের ওপরে করুণ আর্তির একটা মূৰ্জনা ছড়িয়ে পড়েছে। তার কাঁধের ওপরে চাপা রয়েছে একটা ডো ময়লা চাদর। তার মোটা কুর্তা তালি আর তাপ্তিতে ভরে উঠেছে। একটা হাত দিয়ে সে ছডির ওপরে ভর করে রয়েছে, আর একটা হাতে ডো টুপিটা বাড়িয়ে দিয়েছে ভিল্কের আশায়।

 

বন্ধুর সঙ্গে করমর্দন করে হিউজি বলল–কী অদ্ভুত মডেল!

 

খুব জোরে চিৎকার করে উঠল ট্রেভর–অদ্ভুত মডেল? আমারও তাই ভাবা উচিত। এইরকম ভিক্ষুকের


Rx Munna

446 Blog postovi

Komentari