গোলাপ ফুলের মিষ্ট গন্ধে

গোলাপ ফুলের মিষ্ট গন্ধে স্টুডিওটি মশগুল হয়ে ছিল, আর বাগানের ভেতরে গ্রীষ্মকালীন বাতাস ঘুরপাক

গোলাপ ফুলের মিষ্ট গন্ধে স্টুডিওটি মশগুল হয়ে ছিল, আর বাগানের ভেতরে গ্রীষ্মকালীন বাতাস ঘুরপাক খাওয়ার সময় খোলা দরজার মধ্যে দিয়ে লাইল্যাক ঝাড়ের ঘন সুবাস, অথবা লাল ফুলে ভরা কাঁটাগাছের ঝোপ থেকে মিষ্টি মেভাজি একটা গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছিল চারপাশে।

 

স্টুডিওর এক কোণে পারিশিয়ান-গদি মোড়া নীচু একটি বসার ‘কোচ’, তার ওপরে চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী লর্ড হেনরি ওটন শুয়ে শুয়ে একটার পর একটা সিগারেট ফুঁকে শেষ করছিলেন। মধুর মতো মিষ্টি আর রঙিন সোঁদাল গাছের ফুলের আভা তাঁর চোখে পড়ছিল। মনে হচ্ছিল গাছটির কম্পমান শাখা-প্রশাখাগুলি তাদের আগুনে সমারোহের ভার বইতে পারছে না। বিরাট জানালার ওপরে সিল্কের পর্দা ঝোলানো ছিল, সেই পর্দার ওপরে মাঝে মাঝে উড়ন্ত পাখিদের ডানার ঝাপটায় মৃদু আলোড়ন ছড়িয়ে পড়ে জাপানি চিত্রকরদের চিত্রকলার সাময়িক ব্যঞ্জনার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। এই দেখে টোকিওর চিত্রকরদের বিবর্ণ জরাজীর্ণ মুখগুলির কথা তাঁর মনে পড়ে গেল। যে আর্ট অচল, গতিহীন ছাড়া আর কিছু নয়, সেই আর্টের মধ্যে একটা চাঞ্চল্য আর গতির সৃষ্টি করতে তাঁরা কী আয়াসই না করেন। চারপাশে নিস্তব্ধ। লম্বা ঘাসের মধ্যে অথবা ধূলিমলিন উডবাইন গাছের জড়ানো ডালের ভেতরে আসুরিক জেদ নিয়ে ঘূর্ণায়মান মৌমাছিদের ক্লান্তু গুঞ্জন সেই নিস্তব্ধতাকে আরো ক্লান্তিকর করে তুলেছিল। লন্ডন শহরের মৃদু গর্জন শুনে মনে হচ্ছিল দূরাগত কোনো সঙ্গীতযন্ত্রের উচ্চগ্রামের সুর ধ্বনিত হচ্ছে।

 

ঘরের মাঝখানে ছবি আঁকার একটি খাড়াই ফ্রেম দাঁড় করানো। তার ওপরে একটি যুবকের পূর্ণ প্রতিকৃতি দেখে মনে হল, যুবকটির চেহারা অদ্ভুত সুন্দর। সেই প্রতিকৃতির সামনে, সামান্য একটু দূরে, চিত্রকর নিজে বসেছিলেন। চিত্রকরের নাম বেসিল হলওয়ার্ড। বছর কয়েক আছে এর হঠাৎ অন্তর্ধানের কাহিনিকে কেন্দ্র করে জনসাধারণের মধ্যে ভীষণ একটি উত্তেজনা জেগেছিল, আর সেই সঙ্গে মুখর হয়ে উঠেছিল নানারকম অদ্ভুত অদ্ভুত গুজব।

 

যে মিষ্টি লাবণ্যময় প্রতিকৃতিটি তিনি দক্ষতার সঙ্গে এঁকেছেন তার দিকে চিত্রকর তাকিয়ে ছিলেন। ছবিটিকে দেখে তাঁর মুখের ওপরে একটুকরো আনন্দের হাসি ফুটে উঠল, শুধু উঠল না, মনে হল, হাসিটুকু লেগে রইল একটু। কিন্তু হঠাৎ তিনি চমকে উঠলেন, চোখ বোজলেন; আঙুলগুলি রাখলেন বোজালো চোখের পাতার ওপরে। মনে হল একটি অদ্ভুত স্বপ্নকে তিনি মগজের মধ্যে বন্দী করে রাখতে চান, ভয় হল, হয়তো তাঁর স্বপ্ন ভেঙে যাবে।

 

অবসন্নভাবে লর্ড হেনরি বললেন, বেসিল, এটি তোমার শ্রেষ্ঠ চিত্র। এত ভালো চিত্র জীবনে তুমি আর আঁকোনি। পরের বছর এটিকে নিশ্চয় তুমি গ্রসভেনর-এ পাঠাবে। অ্যাকাডেমি হচ্ছে যেমন বড়ো তেমনি কদর্য। যখনি আমি সেখানে গিয়েছি তখনি দেখেছি যে সেখানে এত মানুষের ভিড় জমেছে যে ছবি দেখার সুযোগ পাইনি এতটুকু, ব্যাপারটা ভয়ানক সন্দেহ নেই। অথবা, এত ছবির ভিড় হয়েছে যে মানুষ দেখার সময় পায়নি। এটি আরো খারাপ। গ্রসভেনর-ই একমাত্র জায়গা যেখানে তোমার ছবি তার উপযুক্ত মূল্য পাবে।

 

একটু অদ্ভুতভাবে ঘাড় নাড়লেন চিত্রকর। অক্সফোর্ডে পড়ার সময় এইভাবেই তিনি ঘাড় নাড়তেন। সেই ঘাড়নাড়া দেখে তাঁর সহপাঠীরা সবাই হাসতেন। সেই রকম একটি ঘাড় নেড়ে তিনি বললেন, আমার মনে হয় না এটিকে আমি কোথাও পাঠাব। না, এটিকে আমি কোথাও পাঠাব না।

 

এই কথা শুলে লর্ড হেনরি কেমন যেন আবাক হয়েই মুখটা তুলে আফিঙের গুঁড়ো মেশানো সিগারেটের জমাট ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, কোথাও পাঠাবে না? কেন বন্ধু? এর পেছনে কি কোনো যুক্তি রয়েছে? তোমাদের এই চিত্রকরের জাতটা সত্যিই বড়ো কিম্ভুতকিমাকার। নাম কেনার জন্যে এ দুনিয়ায় তোমরা সব কিছু করতে পার। আর নাম হওয়া মাত্র তোমরা তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে চাও। সুনামটাকে পরিত্যাগ করা মুর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ আলোচনা করার চেয়ে খারাপ, এবং যে জিনিসটি লোকে প্রায় আলোচনা করতে চায় না এরকম একটি জিনিসই পৃথিবীতে রয়েছে। এই রকম একটি প্রতিকৃতি ইংলন্ডের সমস্ত যুবকদের ওপরে তোমাকে বসাবে, আর বৃদ্ধেরা তোমাকে হিংসা করবে, অবশ্য কোনোরকম ভাব প্রকাশের শক্তি যদি তাদের থাকে।

 

বেসিল বললেন, আমি জানি আমাকে তুমি উপহাস করবে। কিন্তু আমি সত্যিই বলছি এটিকে আমি বাইরের প্রদর্শনীতে পাঠাতে পারব না। এর মধ্যে আমার নিজেকে অনেকখানি মিশিয়ে দিয়েছি।

 

সোফার ওপরে শরীরটাকে বেশ ভালো করে ছড়িয়ে দিয়ে লর্ড হেনরি হাসলেন।

 

হ্যাঁ, আমি জানি তুমি হাসবে, কিন্তু কথাটা যে সত্য সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

 

কী বলছ তুমি, বেসিল! তোমার অনেকখানি এই প্রতিকৃতির ভেতরে রয়েছে? তুমি যে এতটা অন্তঃসারশূন্য তা তো আমি জানতাম না। আর সত্যি কথা বলতে কি তোমাদের দুজনের মধ্যে আমি কোনো সাদৃশ্য দেখতে পাচ্ছি না। তোমার মুখ রুক্ষ, পুরুষ্টু চুলগুলি আলকাতরার মতো কালো; আর ওই যৌবনোদ্দল যুবকটিকে দেখলে মনে হবে যেন হাতির দাঁত আর গোলাপের পাপড়ি দিয়ে তার দেহটি তৈরি হয়েছে। তোমার ওই প্রতিকৃতিটি আত্মপ্রেমিক নারসিসাস বলে মনে হচ্ছে আমার; অবশ্য ওর মধ্যে তুমি কিছুটা বুদ্ধির কারুকার্য ফুটিয়ে তুলেছ–এই যা। কিন্তু বুদ্ধির জলুস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সৌন্দর্য, সত্যিকার সৌন্দর্য বলতে অবশ্য বোঝা যায়, তা নষ্ট হয়ে যায়। বুদ্ধি জিনিসটাই হচ্ছে অতিশয়োক্তির বহিপ্রকাশ। এর কাজ হচ্ছে মুখের কমনীয়তা নষ্ট করা। যে মুহূর্তে মানুষ চিন্তা করতে বসে সেই মুহূর্তেই তার মুখের ওপর থেকে লালিত্য সরে যায়। এক কথায়, মুখের আর কোনো চিহ্নই থাকে না। মানুষ তখন একটা নাক বা কপালে রূপান্তরিত হয়। ঘটনাটা ভয়ঙ্কর ছাড়া আর কিছু নয়। বিদগ্ধ পেশায় সাফল্য অর্জন করেছেন এমন যে কোনো একটি মানুষের দিকে লক্ষ কর। তাঁরা দেখতে কী ভয়ানক! অবশ্য গির্জার পাদরি ছাড়া। কিন্তু সত্যিকার চিন্তা করার বালাই পাদরিদের নেই। আঠার বছর বয়সে বিশপকে যা বলতে শেখানো হয় আশি বছর বয়সেও তিনি তাই বলতে থাকেন। ফলে, চিন্তার ভার থেকে তিনি সব সময়েই মুক্ত, সব সময়েই তিনি খুশি থাকেন। তোমার এই রহস্যময় যুবক বন্ধুটি–যাঁর নাম তুমি কোনো দিনই আমাকে বলনি এবং যিনি আমাকে মুগ্ধ করেছেন, কোনো দিনই চিন্তা করেন না। এদিকে থেকে আমার কোনো সন্দেহ নেই। ভদ্রলোকটি নির্বোধ, সুন্দর মানুষ ছাড়া আর কিছু নয়। শীতকালে তাকিয়ে দেখার মতো যখন কোনো ফুল ফোটে না তখন এখানে তাঁর উপস্থিতি আমাদের আনন্দ দেবে। গ্রীষ্মকালে বুদ্ধির ধার ভোঁতা করার প্রয়োজন দেখা দিলে তাঁর সাহচর্য সব আমাদের কাছে উপাদেয় বলে মনে হবে। আমার কথা শুনে উৎফুল্ল হয়ো না, বেসিল। কিন্তু তুমি আদৌ ওর মতো নও।

 

আর্টিস্ট বেসিল বললেন, তুমি আমার কথা বুঝতে পারছ না, হ্যারি। অবশ্য ওর মতো আমি যে নই তা আমি ভালোভাবেই জানি। বাস্তবিক, ওর মতো আমাকে দেখাচ্ছে একথা কেউ বললে আমি দুঃখই পাব। বিশ্বাস হল না তোমার? আমি তোমাকে সত্যি কথাই বলছি। সমস্ত শারীরিক আর মানসিক উৎকর্ষ ধ্বংস হয়ে যায়। ঠিক এমনিভাবেই ইতিহাসের মধ্যে দিয়ে এই মরণশীলতা রাজাদের স্খলিত পদক্ষেপের পিছু ধাওয়া করেছে। সহযাত্রীদের কাছ থেকে পৃথক হয়ে না থাকাটাই ভালো। যারা কুৎসিত এবং মুর্খ এ জগতে তারাই সবচেয়ে ভালো জিনিসটা ভোগ করে। তারা আরাম করে বসে খেলার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে। জয় সম্বন্ধে যদি তাদের কোনো জ্ঞান না-ও থাকে, পরাজয় সম্বন্ধে কোনো ধ্যান-ধারণাও তাদের নেই। কোনো ঝামেলা-ঝঞ্ঝাটই তাদের বিব্রত করে না, আর দশজনের মতো তারা শান্ত আর উদাসীনভাবেই জীবন কাটিয়ে দেয়। কোনোদিনই তারা অন্য লোকের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে না। অন্য লোকের কাছ থেকেও তারা কোনোরকম গুরুতর আঘাত পায় না। হ্যারি, তোমার পদমর্যাদা এবং অর্থ আমার মস্তিষ্ক–দাম তার যাই হোক, আমার কলা–এদের দাম যাই হোক। ডোরিয়েন গ্রে-র মিষ্টি চাহনি, ভগবান আমাদের যা দিয়েছেন তার জন্যে আমরা সবাই দুঃখ পাব–বেশ ভালো রকম দুঃখই পাব আমরা।

 

বেসিল হলওয়ার্ডের দিকে কয়েকটি পা এগিয়ে যেতে যেতে লর্ড হেনরি জিজ্ঞাসা করলেন, ডোরিয়েন গ্রে? কী নাম বললে?

 

হ্যাঁ, ওইটাই তাঁর নাম। ইচ্ছে করেই আমি তোমাকে বলিনি।

 

কিন্তু কেন বলনি?

 

তা আমি বলতে পারব না। যাদের আমার খুব ভালো লাগে তাদের নাম আমি কাউকে বলি না। এই নাম বলার অর্থই হচ্ছে তাদের কিছুটা অংশ বলে দেওয়া। সব জিনিসই গোপন রাখতে আমি কেমন যেন ভালোবাসি। আমার ধারণা, যে সব জিনিস আধুনিক জীবনযাত্রাকে রহস্যময় আর অপরূপ করে তুলেছে এটি তার মধ্যে একটি। লুকিয়ে রাখতে পারলে অতি তুচ্ছ সাধারণ জিনিসও আমাদের আনন্দ দেয়। আজকাল শহর ছেড়ে বাইরে কোথাও গেলে ঠিক কোথায় আমি যাচ্ছি সে-কথা আমি কাউকেই বলি না। একথা বললে বেড়ানোর সমস্ত আনন্দ আমার নষ্ট হয়ে যেত। অভ্যাসটা প্রশংসা করার মতো নয়, তবু মনে হয় এই ধরনের গোপনপ্রিয়তা মানুষের জীবনে বেশ কিছু রোমান্সের আমদানি করে। মনে হচ্ছে এর জন্যে আমাকে বেশ বোকা-বোকা লাগছে তোমার?

 

লর্ড হেনরি বললেন, মোটেই তা নয়। তুমি ভুলে যাচ্ছ যে আমি বিবাহিত। বিবাহের আকর্ষণ হচ্ছে প্রবঞ্চনা, বিবাহিত জীবনকে আকর্ষণীয় করতে হলে স্বামী আর স্ত্রী দুজনকেই প্রবঞ্চনার আশ্রয় অবশ্যই নিতে হবে। আমার স্ত্রী কোথায় যান তা আমি কোনো দিনই জানি না। আমি কোথায় ঘুরে বেড়াই সে বিষয়েও আমার স্ত্রী সমানভাবে অজ্ঞ। মাঝে মাঝে আমাদের দেখা হয়, আমরা দুজনে বাইরে খেতে যাই, তখন বেশ গম্ভীর ভাবেই পরস্পরের কাছে আমরা। নির্ভেজাল মিথ্যে কথা বলে যাই। মিথ্যে ভাষণে আমার স্ত্রী অত্যন্ত পটিয়সী, সত্যি কথা বলতে কি আমার চেয়ে অনেক বেশি। কবে কার সঙ্গে দেখা করার তাঁর কথা রয়েছে সে কথা। তিনি একবারও ভুলে যান না, কিন্তু আমি ভুলে যাই। ফলে, আমি যখন ধরা পড়ে যাই তখন। তা নিয়ে তিনি এতটুকু হইচই করেন না। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, একটু-আধটু হইচই। করলেই হয়তো ভালো হত, কিন্তু তিনি আমার দিকে তাকিয়ে একটু উপহাসের হাসি হাসেন মাত্র।

 

স্টুডিওর একটা দরজা বাগানের দিকে খোলা ছিল, সেই দিকে পায়চারি করতে করতে বেন্সিল বললেন, হ্যারি, তোমার বিবাহিত জীবন সম্বন্ধে যেসব কথা তুমি বললে তা শুনতে মোটেই ভালো লাগল না আমার। তুমি যে সত্যিকারের একজন ভালো দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন স্বামী সেদিক থেকে আমার কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু সেকথা বলতে তোমার লজ্জা হয়। তুমি একটি চমৎকার মানুষ কোনোদিনই তোমার মুখ থেকে নীতিকথা বেরোয়নি, কিন্তু কোনোদিনই তুমি অন্যায় কাজ করনি। মানুষের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বৈরাগ্যটা তোমার একটা ভান মাত্র।

 

লর্ড হেনরি হেসে বললেন, আসল কথা হচ্ছে স্বাভাবিক হওয়াটাই একটা চাল, আর আমার মতে খুব একটা বিরক্তিকর চাল।

 

এই কথা বলে লর্ড হেনরি তাঁর বন্ধুর সঙ্গে বাগানের মধ্যে বেরিয়ে এলেন। একটি দীর্ঘ লরেল গাছের ঝোপের ছায়ায় বাঁশের একটা মাচা বাঁধা ছিল। দুজনে সেই মাচায় বসলেন। মসৃণ। পাতার ওপর দিয়ে রোদ গড়িয়ে পড়ছিল। ঘাসের বলে প্রচুর পরিমাণে ফুটে ছিল ডেইজি ফুল।

 

একটু চুপ করে লর্ড হেনরি তাঁর পকেট-ঘড়িটা টেনে নিলেন পকেট থেকে, বললেন, আমাকে এবার যেতে হবে, বেসিল। কিন্তু যাওয়ার আগে একটা প্রশ্নের উত্তর আমি জানতে চাই। প্রশ্নটা একটু আগেই আমি তোমাকে করেছি।

 

মাটির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে চিত্রকর জিজ্ঞাসা করলেন, প্রশ্নটা কী বল তো?

 

তুমি নিজেই তা ভালো জানো।

 

আমি জানি না, হ্যারি।

 

বেশ, আমি তোমাকে তা বলছি। আমি জানতে চাই ডোরিয়েন গ্রে-র প্রতিকৃতি প্রদর্শনীতে পাঠাবে না কেন? আসল কারণটা আমি জানতে চাই।

 

আমি তোমাকে আসল কারণটাই বলেছি।

 

না, তুমি তা বলনি। তুমি কেবল বলেছিলে। ওই ছবির ভেতরে তোমার নিজস্ব সত্তার অনেকটা প্রতিবিম্বিত হয়েছে। কিন্তু এটা তোমার ছেলেমানুষের কথা।

 

বন্ধুর মুখের দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে বেসিল হলওয়ার্ড বললেন, হ্যারি, গভীর দরদ আর আর অনুপ্রেরণার সঙ্গে যে ছবি আঁকা হয় সেটা হচ্ছে চিত্রকরের নিজস্ব প্রতিকৃতি, মডেলের নয়। সেই বিশেষ হেষ্কত্রে মডেলটা হচ্ছে আকস্মিক, চিত্রাঙ্কনের প্রযোডনে গৌণ। চিত্রকর কোনোদিনই মডেলের সত্তাকে প্রতিফলিত করেন না, সেই রঙিন চিত্রপটের ওপরে তিনি প্রতিবিম্বিত করে নিজেকেই। এই ছবিটিকে প্রদর্শনীতে না পাঠানোর কারণটা হল আমার আশঙ্কা। ভয় হচ্ছে এই ছবির সঙ্গে আমার আত্মার অনেক গোপন বেদনা আর আনন্দ মিশে গিয়েছে।

 

হাসলেন লর্ড হেনরি, জিজ্ঞাসা করলেন, সেটা কী?

 

আমি তোমাকে বলব, উত্তর দিলেন চিত্রকর। কিন্তু তাঁর মুখ দেখে মনে হল সব যেন তিনি গুলিয়ে ফেলছেন।

 

তাঁর দিকে তাকিয়ে লর্ড হেনরি বললেন, আমি শোনার জন্যে উদ্বিগ্ন হয়ে আছি, বেসিল।

 

চিত্রকর বললেন, বলার সত্যিই বেশি কিছু নেই। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে তুমি হয়তো আমার কথা বুঝতে পারবে না। হয়তো আমার কথা বিশ্বাস করতেও পারবে না তুমি।

 

লর্ড হেনরি হাসলেন, ঝুঁকে ঘাসের বন থেকে এখটা লাল ডেইজি ফুল তুলে সেটাকে পরীক্ষা। করতে লাগলেন। সেই ফুলটার দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে থেকে তিনি বললেন, না, না, আমি নিশ্চয় বুঝতে পারব। আর বিশ্বাস করার কথা যদি বল আমি যে-কোনো জিনিসই বিশ্বাস করতে লাগল, এবং সেই ক্লান্ত বাতাসে লাইল্যাক ফুলের ভারী ভারী গুচ্ছগুলি এদিকে-ওদিকে দুলতে লাগল। দেওয়ালের পাশে একটা ঘাস ফড়িং ভনভন করতে শুরু করল, আর নীল,সুতোর মতো লম্বা রোগাটে একটা ফড়িং তার রঙিন ডানা মেলে ঘুরে ঘুরে উড়তে লাগল। লর্ড হেনরির মনে হল তাঁর বন্ধুর বুকটা ঘন ঘন ওঠানামা করছে। বন্ধুটি এর পরে কি বলবেন তাই তিনি ভাবতে লাগলেন।


Rx Munna

446 Blog mga post

Mga komento

📲 Download our app for a better experience!