একটি বিবর্ণা শীর্ণকায়া মহিলার কোলের ওপরে মুখ লুকিয়ে মেয়েটি আনন্দে যেন ফেটে পড়ল। দেখে মনে হয়, ব্যস্থা মহিলাটি সংসার-যাঁতার মধ্যে পড়ে একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ছোটো বসার ঘর, আলো-হাওযার বালাই সেখানে নেই বললেই ইয। সেই ঘরের একমাত্র আসবাব ছোটো একটি আর্মচেয়ারের ওপরে বসে ছিলেন। উজ্জ্বল আলোর ধকল সহ্য করতে পারছিলেন না বলেই হয়তো আলোর দিকে বসেছিলেন পেছন করে।
মেয়েটি আবার বলল, আনন্দ রাখার আর জায়গা পাচ্ছি না আমি তোমারও আনন্দ হচ্ছে নিশ্চয়।
মিসেস ভেন ভ্রূকু টি করলেন, কিন্তু তাঁর রক্তশূন্য ফ্যাকাশে রঙের একটি হাত তাঁর মেয়ের মাথার ওপরে রাখলেন।
আনন্দ! তোমাকে যখন অভিনয় করতে দেখি আমার আনন্দ হয় তখনি। অভিনয় ছাড়া বর্তমানে অন্য তোমার চিন্তা করা উচিত নয়। মিঃ আইস্যাকস আমাদের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করেছেন। তিনি যে আমাদের ধার দিয়েছেন সে ধার এখনো শোধ হয়নি।
মেয়েটি ওপরের দিকে মুখ তুলে বলল, মা, টাকার কথা বলছ? টাকায় কি যায় আসে! ভালোবাসার টাকার চেয়ে অনেক বেশি।
ভুলে যেও না, ঋণ শোধ আর ভেমেস-এ পোশাক তৈরি করার জন্যে মি; আইসকস আমাদের পঞ্চাশ পাউন্ড অগ্রিম দিয়েছেন। সেকথা ভুলে যেও না সাইবিলা পঞ্চাশ পাউন্ড অনেক টাকা। এদিক থেকে মিঃ আইস্যাকসকে সুবিবেচক না বলে আমি পারছি না।
দাঁড়িয়ে উঠল মেয়েটি, তারপরে জানলার ধারে গিয়ে বলল, মা, ও ভদ্রলোক নয়। আমার সঙ্গে ও যেভাবে কথা বলে তাতে ওকে আমার ঘৃণা হয়।
স্বরে কিঞ্চিৎ ঝাঁকানি দিয়ে বর্ষীয়সী মহিলাটি বললেন, তাঁর সাহায্য ছাড়া কী করে যে আমাদের চলত তা আমি জানি না।
সাইবিল ভেন নিজের মাথাটা নাড়িয়ে হাসল, আর তাকে আমাদের দরকার নেই মা। এখন থেকে প্রিন্স চার্মিং-ই আমাদের সব ভার নেবেন।
এই বলে সে থামল। একটা লজ্জার ঢল নামল তার ধমনীতে, সে একটু কেঁপে উঠল, সেই রঙে ধীরে ধীরে রাঙা করে দিল তার দুটি কপোলকে। দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাসের ফলে তার পদ্মপাতার মতো নরম দুটি ঠোঁট বিভক্ত হল-কাঁপতে লাগল ঠোঁটের দুটি পাপড়ি দুহিষ্কণে বাতাস ঝাঁপিয়ে পড়ল তার ওপরে, সুন্দর পোশাকের ভাঁজগুলি দিল খুলে। সে শুধু বলল, আমি তাকে ভালোবাসি।
টিয়াপাখির মতো তাঁর মা চিৎকার করে উঠলেন–বোকা, বোকা মেয়ে! কথার সঙ্গে সঙ্গে নকল হিরে-বসালো আংটি পরা আঙুলটি তাঁর অদ্ভুতভাবে