মরা কাউয়া – হক সাহেবের হাসির গল্প

বাংলার প্রধানমন্ত্রী ‘অনারেবল’ হক সাহেব যে সুন্দর গল্প বলতে পারেন, তা আগে জানতাম না। তবে তাঁর কথায় কথায় চমৎকা?

বাংলার প্রধানমন্ত্রী ‘অনারেবল’ হক সাহেব যে সুন্দর গল্প বলতে পারেন, তা আগে জানতাম না। তবে তাঁর কথায় কথায় চমৎকার ব্যঙ্গ, রসিকতা ও হাস্যরসের পরিচয় পেয়েছি। সকল শ্রোতাই হাসিতে ঘর পূর্ণ করে তা উপভোগ করেছেন। হক সাহেব সর্বদাই হাসি-মুখ। ভীষণ ক্রোধের পরক্ষণেই মুখে বালকের মতো সরল হাসির ফুল ফোটে।

 

দিন-দশেক আগে তাঁর দুটি গল্প শুনেছি। ‘নবযু্গ’-এর পাঠক-পাঠিকাদের সেই গল্প দুটি উপহার দিচ্ছি। এর পরেও মাঝে মাঝে তাঁর হাসির গল্প উপহার দেব। তিনি বহু সভায় এবং বাড়িতে লোকজনের সামনে বহু হাসির গল্প সৃষ্টি করে বলেছেন। তাঁর শুধু হাসির গল্প বলা নয়, সভার অবস্থা বুঝে সুন্দর অন্য ধরনের গল্প বলারও বড়ো অসাধারণ ক্ষমতা আছে। হক সাহেবের সভার বক্তৃতা যাঁরা শুনেছেন, তাঁরা এর সাক্ষ্য দেবেন। প্রথম গল্পটি বলছি শুনুন। গল্পটির নাম :

 

মরা কাউয়া

[ মরা কাক ]

 

স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স্‌ বাংলার প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিনিধিরূপে ভারত সন্বন্ধে আলোচনা করবার জন্য হক সাহেবকে আমন্ত্রণ করেন। হক সাহেব দিল্লি গিয়ে স্যার স্ট্যাফোর্ডের সাথে আলোচনা করার পর যখন বেরিয়ে আসেন, তখন দলে দলে খবরের কাগজের প্রতিনিধি ও লোক তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, ‘স্ট্যাফোর্ড সাহেবের সাথে আপনার কী কথা হল?’ হক সাহেব হেসে একটি হাসির গল্প বললেন। গল্পটির মর্ম এইরূপ :– এক ছিলেন পণ্ডিত। তিনি অনেক দিন সংসার করে বৃদ্ধ বয়সে দিন-রাত বই-পত্তর নিয়ে নাক টিপে চোখ বুজে যোগ অভ্যাস করতে লাগলেন। ব্রাহ্মণী দেখলেন, এই অবস্থায় আর কিছুদিন চললে সংসার চলবে না ; উপোস করে মরতেও হবে। ব্রাহ্মণী ধ্যানস্থ পণ্ডিতের সামনে শূন্য চালের হাঁড়ি ভেঙে বলতে লাগলেন – ‘এই চোখ বুজে টিকি উঁচিয়ে বসে থাকলে ছেলে মেয়েরা খাবে কি? বাড়িতে সাত দিনের চাল আছে। এই সাত দিনের মধ্যে চাল-ডালের টাকা না পেলে আমি গলায় দড়ি দিয়ে মরব। এই সব ভণ্ডামি করে কী টাকা পাওয়া যায়? ব্রাহ্মণ তেরিয়া হয়ে বললেন, ‘কী? এ সব ভণ্ডামি? তুমি আমার যোগের শক্তি দেখবে? আমি সাত দিনের মধ্যে সাত হাজার টাকা এনে দেব।’ ব্রাহ্মণী বললেন, ‘ভীমরতি হয়েছে! চল্লিশ বছরে এক সাথে এক হাজার টাকা পারলেন না, সাত দিনে সাত হাজার টাকা দিবেন!’ ব্রাহ্মণ বললেন, ‘ দেখে নিয়ো।’ পণ্ডিতের গোটা বিশেক লুকানো টাকা ছিল, তাই আর গাড়ু গামছা নিয়ে পণ্ডিত বেরিয়ে পড়লেন। শহরে গিয়ে দু-এক জন ধূর্ত লোক জোগাড় করে বিজ্ঞাপন দিলেন, এক মহাযোগী ব্রাহ্মণ এসেছেন হিমালয় থেকে, তাঁর কাছে একটা মরা মানুষের মাথার খুলি আছে, সেই মাথার খুলিকে যে যা জিজ্ঞাসা করে, সে তার সঠিক উত্তর দেয়। শহরে হই-চই পড়ে গেল। বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল, বেশি কথা, কম কথা অনুসারে এক টাকা থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত ব্রাহ্মণকে দিতে হবে। সন্ধ্যা হতে না হতেই দলে দলে লোক এসে হাজির হল। ব্রাহ্মণ একসঙ্গে সব লোককে আসতে দিলেন না। একটা পর্দা টাঙিয়ে একটি একটি করে লোক আসতে দিলেন। প্রথমে যে লোকটি এল সে দশটি প্রশ্ন করতে চাইল। ব্রাহ্মণ পাঁচ টাকা চার্জ করলেন। ব্রাহ্মণের হাতে টাকা দিায়ে সে বলল, ‘মরা মানুষের মাথার খুলি কই?’ ব্রাহ্মণ একটা ঝুড়ি তুলে বললেন, ‘এই’। সে রেগে উঠে বললে, ‘এ যে মরা কাউয়া, খুলি কই।’ ব্রাহ্মণ কেঁদে ফেলে বললেন, ‘খুলি টুলি মিথ্যা, আমি দরিদ্র ব্রাহ্মণ, ছেলেপিলে খেতে না পেয়ে মরে যাচ্ছে – তুমি এ কথা কাউকে বোলো না, বললে তোমাকে সবাই হাঁদা বোকা আরও কত কী বলবে। মনে করো দরিদ্র ব্রাহ্মণকে দান করলে। তোমার মঙ্গল হবে বাবা, মঙ্গল হবে।’ সে লোকটি আর একবার মরা কাকের দিকে করুণ দৃষ্টি দিয়ে দেখে বাইরে বেরিয়ে গেল। বাইরে বেরিয়েই হেসে ফেলল। লোকটি ছিল কায়স্থ। যত লোক তাকে ঘিরে জিজ্ঞাসা করতে লাগল ‘খুলি কি সত্যিই কথা কয়?’ সে উত্তর না দিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল, তখন লোকে ভাবল, ও নিশ্চয় কেল্লা ফতে করেছে। ভিড়ের লোক ঠেলাঠেলি করে কে আগে যাবে, তার চেষ্টা করতে লাগল! যে যায় ব্রাহ্মণ তাকে ওই এক কথাই বলে – আগে টাকা নিয়ে। কেউ কথা বলল না, পাছে অন্য লোকে তাকে বোকা বলে। এক রাত্রেই ব্রাহ্মণের সাত হাজার টাকা হয়ে গেল। ব্রাহ্মণ তল্পিতল্পা গুটিয়া বাড়ির দিকে দৌড়াল। ব্রাহ্মণীকে ডেকে সগর্বে বলল, ‘এই নে সাত হাজার টাকা। আর আমায় কিছু বলিসনে। আমি লঙ্কা বিজয় করে এসেছি।’ ব্রাহ্মণী বদন-ব্যাদান করে এক হাত জিভ বের করে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইলেন।


Md Nafiz

136 Blog posting

Komentar

📲 Download our app for a better experience!