কুহেলিকা – ০১

তরুণ কবি হারুণ তাহার হরিণ-চোখ তুলিয়া কপোত-কূজনের মতো মিষ্টি করিয়া বলিল, ‘নারী কুহেলিকা’।

নারী লইয়া আলোচনা চলিতেছিল। …

 

তরুণ কবি হারুণ তাহার হরিণ-চোখ তুলিয়া কপোত-কূজনের মতো মিষ্টি করিয়া বলিল, ‘নারী কুহেলিকা’।

 

যেস্থানে আলোচনা চলিতেছিল, তাহা আসলে ‘মেস’ হইলেও, হইয়া দাঁড়াইয়াছে একটি পুরোমাত্রায় আড্ডা।

 

দুই তিনটি চতুষ্পায়া জুড়িয়া বসিয়া প্রায় বিশ বাইশ জন তরুণ। ইহাদের একজন – লক্ষ্মীছাড়ার মতো চেহারা – একজন ইয়ারের ঊরু উপাধান করিয়া আর একজন ইয়ারের দুই স্কন্ধে দুই পা তুলিয়া দিয়া নির্বিকার চিত্তে সিগারেট ফুঁকিতেছে। এ আলোচনায় কেবল তাহারই কোনো উৎসাহ দেখা যাইতেছিল না। নাম তাহার – বখ্‌তে-জাহাঙ্গীর কী উহা অপেক্ষাও নসিব বুলন্দ দারাজ গোছের একটা কিছু। কিন্তু অব্যবহারের দরুন তাহা এখন আর কাহারও মনে নাই। তাহাকে সকলে উপেক্ষা বা আদর করিয়া উলঝলুল বলিয়া ডাকে। এ নাম দেওয়ার গৌরবের দাবি লইয়া বহু বাগ্‌বিতণ্ডা হইয়া গিয়াছে। এখন এই নামই তাহার কায়েম হইয়া গিয়াছে। ‘উলঝলুল’ উর্দু শব্দ, মানে এর – বিশৃঙ্খল, এলোমেলো।

 

কবি হারুণ যখন নারীকে ‘কুহেলিকা’ আখ্যা দিল, তখন কেহ হাসিল, কেহ টিপ্পনী কাটিল, শুধু উলঝলুল কিছু বলিল না। এক টানে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সিগারেট পুড়াইয়া তাহারই পুঞ্জীভূত ধোঁয়া ঊর্ধ্বে উৎক্ষিপ্ত করিয়া শুধু বলিল, ‘হুম!’

 

আমজাদ ওকালতি পড়ে এবং কবিতা লেখার কসরত করে। সে বলিল, তার চেয়ে বলো না কবি, নারী প্রহেলিকা! বাবা, সাত সমুদ্দুর তেরো নদী সাঁতরিয়েও বিবি গুলে-বকৌলির কিনারা করা যায় না! – বলিয়ায় একবার চারিদিকে ঝটিতি চোখের সার্চলাইট বুলাইয়া লইল। মনে হইল, সকলেই তাহার রসিকতায় রসিয়া উঠিয়াছে। কেবল হারুণ যেন একটু মুচকিয়া হাসিল।

 

উলঝলুল আবার এক রাশ ধোঁয়া ছাড়িয়া দীর্ঘনিশ্বাসের সহিত শব্দ করিল–হুম!

 

একটু যেন বিদ্রুপের আমেজ! আমজাদ অপ্রতিভ ও ক্ষুণ্ন হইল। কেহ কেহ হাসিলও যেন।

 

আশরাফ নতুন বিবাহ করিয়াছে, তাহার বধূ ত্রয়োদশী – যৌবনোন্মুখী। কিন্তু এত সাধাসাধি করিয়া এত চিঠি লিখিয়া সে কেবল একটি মাত্র পত্রের উত্তর পাইয়াছে। কিন্তু তাহা ঠিক পত্রোত্তর নয়। তাহাতে শুধু লেখা ছিল দুইটি লাইন – ‘রমণীর মন, সহস্র বর্ষেরই সখা সাধনার ধন!’ বধূ রবীন্দ্রনাথ পড়িতেছে! আশরাফ তাহার বাম হাতের তালুর উপর দক্ষিণ হাতের মুষ্টি সজোরে ঠাসিয়া দিয়া বলিল, ‘নারী অহমিকা!’

 

উলঝলুল এইবার বেশ জোরেই পূর্বমতো শব্দ করিয়া উঠিল – হুম্‌ম্। এইবার তারই মধ্যে একটু অভিনয়ের কারুণ্যের আমেজ!

 

সকলে সমস্বরে হাসিয়া উঠিল। মনে হইল, একসঙ্গে এক ঝাঁকা থালা বরতন পড়িয়া ভাঙিয়া গেল!

 

আশরাফ লাফাইয়া উলঝলুলের চাঁচর-চুলের গুচ্ছ ধরিয়া আকর্ষণ করিয়া বলিল, ‘এই শালা, অমন করলি যে?’

 

এমন ইয়ার্কি ইহাদের মধ্যে প্রায়ই হয়।

 

উলঝলুল ফিরিয়াও দেখিল না। পূর্বের মতো সচ্চিদানন্দ হইয়া শুইয়া সিগারেট ফুঁকিতে লাগিল।

 

রায়হান কয়েক বৎসর হইতে কলিকাতায় বসিয়া বসিয়া বি. এ. ফেল করিতেছে। ইহারই মধ্যে তাহার বিবাহ হইয়া গিয়াছে এবং বিবাহের অপরিহার্য পরিণাম সন্তান-সন্ততি একটু ঘটা করিয়াই আসিতে শুরু করিয়াছে। রায়হান কিন্তু যত তিক্তবিরক্ত হইয়া উঠিতেছে, ততই মোটা হইতেছে। তবে উদরের সহিত সামঞ্জস্য রাখিয়া পা ও মাথা মোটাইয়া কুলাইয়া উঠিতেছে না। মেসে তাহার আদরের ডাকনাম ‘কুম্ভীর মিয়াঁ’। কুম্ভীর মিয়াঁ কাশিয়া গলা পরিষ্কার করিয়া যাহা বলিল – তাহাতে মনে হইল, কেহ তাহার কণ্ঠে অনেকগুলা বাঁশের চ্যাঁচারি পুরিয়া দিয়াছে!

 

হাসির হুল্লোড় পড়িয়া গেল।

 

উলঝলুল এক লম্ফে স্প্রিং-এর পুতুলের মতো লাফাইয়া উঠিয়া বসিল। তাহার পর কুম্ভীর মিয়াঁর ভুঁড়ির উপর দৃষ্টি রাখিয়া আবার সিগারেট ফুঁকিতে লাগিল।

 

তরিকের রসিক বলিয়া নামডাক আছে। উলঝলুলের দৃষ্টি লক্ষ করিয়া বলিল, ‘কী হে, ভুঁড়ি কসছ নাকি? কত কালি হবে বলো তো!’

 

আবার হাসির কোরাস! যেন অনেকগুলো নোড়া শানের উপর দিয়া গড়াইয়া যাইতেছে ও আসিতেছে!

 

উলঝলুল যেন কিছুই শুনিতেছিল না। সে ঊর্ধ্ব-নয়ন হইয়া হুস করিয়া খানিকটা ধোঁয়া ছাড়িয়া জড়িতকণ্ঠে উচ্চারণ করিল, ‘নারী নায়িকা!’

 

তাহার বলিবার ভঙ্গি ও ঔদাসীন্যের ভাব দেখিয়া সকলে হাসিয়া উঠিল। কে একজন পিছন হইতে তাহার পিঠ চাপড়াইয়া দিয়া বলিল, ‘বাহবা, কী তেয়সা!’

 

ইউসুফ একটু স্থূল ধরনের। বেঁকিয়ে বলা সে বুঝিতও না পছন্দও করিত না। সে উলঝলুলকে এ কথার অর্থ আর একটু পরিষ্কার করিয়া বলিবার জন্য ধরিয়া বসিল।

 

অনেকেই তাহার সহিত এই অনুরোধে যোগদান করিল।

 

উলঝলুল অটল। শুধু আর একবার পূর্বের মতো করিয়া বলিল, ‘নারী নায়িকা!’

 

সকলে তখন হাল ছাড়িয়া দিয়া হারুণকে ধরিয়া বসিল।…

 

হারুণ সত্যই কবি। তাহার খ্যাতি ইহারই মধ্যে বেশ চারিদিকে ছড়াইয়া পড়িতেছে। তবে সে খ্যাতি হয়তো হেনা-চাঁপা-বকুল-কেয়ার মতো সুতীব্র দূর-সঞ্চারী নয়। গোলাবের মতো যতটুকু গন্ধ যাইতেছে, অন্তত ততটুকু স্থান মিষ্ট স্নিগ্ধতায় ভরপুর করিয়া তুলিতেছে। সুন্দর ছিপছিপে গড়ন। রং বেশ ফর্সাই। একটু উদাস-উদাস ভাব। যেন সে নিজেকে জানে না, চেনে না। অথবা জানিয়াও অবহেলা করে। রং আর রূপ ছাড়া, পৃথিবীর আর কোনো কিছুতে যেন তার আকাঙ্ক্ষা নাই, কৌতূহল নাই। সবচেয়ে সুন্দর তাহার চোখ। অবশ্য দেখিতেও সে প্রিয়দর্শন। চোখ দুটি যেন কোনো সেকালের মোগল-কুমারীর – বাদশাজাদির। তবে কেমন যেন বিষাদখিন্ন। দৃষ্টি আবেশ মাখা স্বপন-জড়িত। যখন সে কারুর পানে পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়, মনে হয় – সে যাহাকে দেখিতেছে দৃষ্টি তাহাকে পারাইয়া গিয়াছে – সে দেখার অতীতকে দেখিতেছে।….

 

সে এইবার বি.এ. দিবে। তবে পড়ায় তাহার বিশেষ ইচ্ছা নাই। পড়ায় মানে – কলেজের পড়ায়। ‘বাজে বই’ সে যথেষ্ট পড়ে। – অর্থাৎ পৃথিবীর নামজাদা এমন কোনো লেখক বা কবি নাই, যাঁহার সম্বন্ধে সে জানে না।

 

তবু সে মন দিয়াই পড়িতেছে। সে পিতার জ্যেষ্ঠ পুত্র। তাহার দিকেই তাহাদের সংসার তাকাইয়া আছে – যেমন করিয়া ভিখারি খঞ্জ তাহার একমাত্র অবলম্বন যষ্টির দিকে তাকাইয়া থাকে।

 

তাহার পিতা অন্ধ, মাতা উন্মাদরোগগ্রস্তা। বাড়িতে দুইটি অবিবাহিতা বোন এবং একটি ছোটো ভাই। পিতা যে পেনশন পান, তাহাতে ভাতে-ভাত খাইয়া দিন চলে, তার বেশি আর চলে না। ছোটো ভাইটি গ্রামের ইস্কুলে পড়ে। সে-ই সংসার দেখে।

 

হারুণ টিউশনি করিয়া নিজের খরচ চালায় এবং বাড়িতে ছোটো ভাইটিকে নিজে না খাইয়াও দশটি করিয়া টাকা পাঠায়।

 

বাড়ি তাহার বীরভূম জেলায়।… যাক, যাহা বলিতেছিলাম –

 

মেস-বাহিনী পাকড়াও করিয়া বসিল হারুণকে, ‘কবি, বলো তোমার কুহেলিকার অর্থ।’

 

সে কিছু বলিবার আগেই কেহ বলিল, ‘কবি প্রেমে পড়েছে!’ কেহ বলিল, ‘বাবা! যা-সব হেঁয়ালি কবিতা লেখা হচ্ছে আজকাল!’ কেহ বলিল, ‘চোখ দুটি ক্রমেই যে রকম ঢুলুঢুলু হচ্ছে দিন-কে-দিন, কোথায় শিরাজি টানছ বাবা? আমরা কি সে ভাঁটিখানার সন্ধান পেতে পারিনে?’ ইত্যাদি।

 

হারুণ তাই বলিয়া মিনমিনে ছেলেও নয়। সে বলিল, ‘অত গোলমাল করলে বলি কী করে বলো? আমার বলা তো তোমরাই বলে নিচ্ছ।’

 

কুম্ভীর মিয়াঁ হাঁকড়াইয়া উঠিল, ‘এই! সব চোপ। বাস, আর একটি কথা কইছ কী – ভুঁড়ি চাপা! একেবারে ব্যাং-চ্যাপটা!’

 

হারুণ বলিল, ‘নারী শুধু ইঙ্গিত, সে প্রকাশ নয়। নারীকে আমরা দেখি, বেলাভূমে দাঁড়িয়ে – মহাসিন্ধু দেখার মতো। তীরে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের যতটুকু দেখা যায়, আমরা নারীকে দেখি ততটুকু। সমুদ্রের জলে আমরা যতটুকু নামতে পারি, নারীর মাঝেও ডুবি ততটুকুই।… সে সর্বদা রহস্যের পর রহস্য-জাল দিয়ে নিজেকে গোপন করছে – এই তার স্বভাব।…

 

হারুণ যেন দিশা হারাইল। মনে হইল, সে যেন চকোরের মতো চাঁদের সুধা পান করিয়া উন্মত্ত হইয়া উঠিয়াছে! সে যেন পরিস্থানে শুইয়া ফুল ফোটার স্বপন দেখিতেছে।

 

সে বলিয়া যাইতে লাগিল, ‘কী গভীর রহস্য ওদের চোখে-মুখে। ওরা চাঁদের মতো মায়াবী; তারার মতো সুদূর। ছায়াপথের মতো রহস্য।… শুধু আবছায়া, শুধু গোপন! ওরা যেন পৃথিবী হতে কোটি কোটি মাইল দূরে। গ্রহলোক ওদের চোখে চেয়ে আছে অবাক হয়ে – খুকি যেমন করে সন্ধ্যাতারা দেখে। ওদের হয়তো শুধু দেখা যায়, ধরা যায় না। রাখা যায়, ছোঁয়া যায় না। ওরা যেন চাঁদের শোভা, চোখের জলের বাদলা-রাতে চারপাশের বিষাদ-ঘন মেঘে ইন্দ্রধনুর বৃত্ত রচনা করে। দু-দণ্ডের তরে, তারপর মিলিয়ে যায়। ওরা যেন জলের ঢেউ, ফুলের গন্ধ, পাতার শ্যামলিমা। ওদের অনুভব করো, দেখো, কিন্তু ধরতে যেয়ো না।’

 

সকলে মুগ্ধবিস্ময়ে শুনিতেছিল। কিন্তু তাহারা শুনিতেছিল, না সুন্দরকে – কবিকে দেখিতেছিল, বলা দুষ্কর। হঠাৎ উলঝলুল হারুণের অসমাপ্ত সুরের সহিত সুর রাখিয়া বলিয়া উঠিল, ‘ঢেউ ধরতে গেলেই জলে ডুববে। গন্ধ ধরতে গেলেই বিঁধবে কাঁটা। শ্যামলিমা ধরতে গেলেই বাজবে শাখা। নারী দেবী, ওকে ছুঁতে নেই, পায়ের নীচে গড় করতে হয়।… কিন্তু কবি, নারী নায়িকা। ও ছাড়া নারীর আর কোনো সংজ্ঞাই নেই।’

 

অনেকেই না বুঝিয়া হাসিল। কেহ মজা অনুভব করিল, কেহ মানে বুঝিল না।

 

তরিক তাহার রসিক নাম বজায় রাখিবার জন্য দিগ্‌বসন পর্যন্ত হইতে রাজি। সে মুখ বিকৃত করিয়া স্বর কাঁপাইয়া বলিয়া উঠিল, ‘ওরে ব্যাটা, তাই তোমার তনু দিনের দিন এমন ক্ষীণ হচ্ছে! তুমি যে নায়ক হয়ে বসে আছ, তা কে জানে! তোমার ডিসপেপসিয়া হয়েছে! যাও, শিগগির এক শিশি ‘কুওতে-মেদা’ কিনে খেয়ে ফেলো!’

 

হাসির তুফান বহিয়া গেল!

 

উলঝলুল দৃক্‌পাতও করিল না। নির্বিকারচিত্তে সিগারেট পোড়াইয়া ধূম্রপুঞ্জের সৃষ্টি করিতে লাগিল।

 

সে বরাবরই এই রকমের ।

 

হারুণ এই সব বাজে হুল্লোড়ে যোগদান করিতেছিল না বটে, তবে সে যে এসব উপভোগ করিতেছিল, তাহা তাহার মুখ দেখিয়া বেশ বোঝা যাইতেছিল।

 

হারুণ সাধারণত একটু কম কথা বলে, কিন্তু দরকার হইলে এত বেশি বলে যে, তাহা প্রায় বক্তৃতা হইয়া উঠে।

 

হারুণের ওপর সকলেরই বেশ একটা সহজ শ্রদ্ধা ছিল। সে শুধু কবি বলিয়াই নয়, মানুষ বলিয়া। তাহাকে কেহ কখনও তরল হইতে দেখে নাই।

 

কাজেই হারুণ যখন উলঝলুলকে মৃদু হাসিয়া নারী নায়িকা কেন, জিজ্ঞাসা করিল, উলঝলুল তখন তাহার নির্বিকারত্বের বাঁধুনি একটু শিথিল করিল।

 

সে বলিল, “আমি জানি, নারী মাত্রই নায়িকা। ওরা প্রত্যেকে প্রতিদিন গল্প আর উপন্যাস সৃজন করে চলেছে।… তবে বড্ড বজ্র আঁটুনি – অবশ্য গেরো ফস্কা। কত “চোখের বালি” কত “ঘরে বাইরে”, কত “গৃহদাহ”, “চরিত্রহীন” সৃষ্টি করছে নারী, তার কটাই বা তোমাদের চোখে পড়ে কবি।… যে কোনো মেয়েকে দুটো দিন ভালো করে দেখো, দেখবে লক্ষ্মী-পক্ষী ইত্যাদি চতুর পুরুষের দেওয়া যত সব বিশেষণ কোনোটাই তাকে মানায় না। তবে, নারী বেচারি সংস্কার আর সমাজের খাতিরে সে যা নয় – তাই হবার জন্যে আমরণ সাধনা করছে। সে যুগ যুগ ধরে চতুর পুরুষের ছাঁচে নিজেকে ঢেলে পুরুষকে খুশি করছে। পুরুষ কিন্তু দিব্যি গায়ে ফুঁ দিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে এবং নারীকে শিখাচ্ছে দাঁড় ও ছোলা কলার মহিমা। সমানে সমানে বোঝাপড়া হলে নারীকে দেখতে শুধু নায়িকা রূপেই। তোমরা নারীকে দেখ, সে যা হলে ভালো হয় – তাই করে আর আমাদের মতো নিরেট মানুষে দেখে, নারীকে সে যা আছে – তার এক চুলও অতিক্রম না করে। তোমরা যারা নারীকে পূজা কর, আমার এ নির্মমতায় হয়তো ব্যথা পাবে, কিন্তু আমি নারীকে পূজা না করলেও অশ্রদ্ধা করিনে এবং শ্রদ্ধা হয়তো তোমাদের চেয়ে বেশিই করি। কিন্তু তাকে অতিরিক্ত অলংকার পরিয়ে সুন্দর করে – সিঁদুর-কঙ্কণ পরিয়ে কল্যাণী করে নয়। আমি সহজ নারীকে, নিরাভরণাকে করি বন্দনা। রাংতার সাজ পরিয়ে নারীকে দেবী করবার সাধনা আমার নয়। তিন হাত নারীকে বারো হাত শাড়ি পরিয়ে বিপুল করে বাইশ সের লুৎফুন্নিসাকে হিরা জহরত সোনাদানা পরিয়ে এক মনি ভারাক্রান্ত করে – নারীকে প্রসংসা করার চাতুরি আমার নয়! তোমরা হয়তো চটবে, কিন্তু আমি বলি কী, জান? আমি চাই রূপের মোমতাজকে। তাজমহল দিয়ে মোমতাজকে আড়াল করার অবমাননা আমাকে পীড়া দেয়। আমার ক্ষমতা যদি থাকত, ওই বন্দনাগার হতে মোমতাজকে আমি মুক্তি দিতাম। কবরের ভিতর যদি শান্তি থাকে, তবে ‘জাহানারা’ ‘মোমতাজ’ বেচারির চেয়ে অনেক শান্তিতে আছে। জাহানারার কবরের শষ্প-আচ্ছাদনকে মানুষের অহংকার দলিত করেনি, কোনো পাষাণ-দেউল তার বুকে বসে তার বাইরের আকাশ আলোকে আড়াল করে দাঁড়ায়নি!…”

 

সকলে স্তব্ধ হইয়া শুনিতেছিল এই আধ-পাগলের প্রলাপ। কে একজন বলিয়া উঠিল, ‘পাগলের পাগলামিতেও মাঝে মাঝে মানে থাকে!’ উলঝলুল জোরে-জোরে সিগারেট টানিয়া নিমেষে প্রায় দেড়টা সিগারেট পুড়াইয়া ফেলিল। তাহার পর আবার বলিতে আরম্ভ করিল। –


Md Nafiz

136 blog posts

Reacties