নাকি আরো জোরে বলবো

কোনো একদিন কাজকর্মহীন অলস সময়ে আদমান বাংলালিংক মেসেঞ্জারে ঢুকেছিলো। বাংলালিংক মেসেঞ্জার নামক এই সার্ভিসট?

কোনো একদিন কাজকর্মহীন অলস সময়ে আদমান বাংলালিংক মেসেঞ্জারে ঢুকেছিলো। বাংলালিংক মেসেঞ্জার নামক এই সার্ভিসটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি বাংলালিংক নতুন নামিয়েছে। এতে ইন্টারনেটের ইয়াহু, জিমেল মেসেঞ্জারের মতো চ্যাট করা যায়। প্রথমবার ঢুকলে সেখানে একটা নিকনেম দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। আদমান অলস সময় কাটাতে ঢুকেছিলো। এবং আদম নাম দিয়ে রেজিস্ট্রেশনও করেছিলো। অবশ্য সেদিন সে কারো সাথেই তেমন চ্যাট করতে পারেনি। একটু পরেই কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলো সে। কিন্তু এই অল্প সময়েই বাংলালিংক তার কাছ থেকে বেশ কিছু টাকা ছিনিয়ে নিয়েছিলো। ফলে, পরে আর আদমান বাংলালিংক মেসেঞ্জার সম্পর্কে উৎসাহ পায়নি। এবং কখনো আর ভুলেও ঢুকেনি মেসেঞ্জার নামক সেই রাক্ষুসে সেবাখানায়।

 

এভাবে কয়েকমাস গেলো। হঠাৎ একদিন বাংলালিংক মেসেঞ্জার থেকে একটা এওয়ারিং মেসেজ এলো আদমানের নাম্বারে। মেসেজটা এরকম:

 

“-Chat Invite-

 

Tanvi (18, F, Dhaka) wants to Chat with you!:)

 

To accept and chat, Reply with YES.”

 

আদমান মেসেজটা পড়লো এবং হাসলো। মেসেজটা তাকে খুব একটা প্রভাবিত করতে পারলোনা।

 

একটুপর আবার একটা মেসেজ এলো বাংলালিংক মেসেঞ্জার থেকে। আদমান সেটা পড়লো:

 

“To accept the chat invite from Tanvi reply with YES”

 

আদমান এবার একটু কৌতুহলী হলো। মনে মনে সে ভাবলো, আচ্ছা দেখাই যাকনা একবার। এই ভেবে সে YES লিখে রিপ্লাই পাঠালো।

 

একটুপরেই ফিরতি মেসেজে বাংলালিংক মেসেঞ্জার জানালো:

 

“Tanvi has been added to your BL Messenger contact list. To chat with Tanvi reply with your message.”

 

আদমান বাংলালিংক মেসেঞ্জার কে টাকা খাওয়াতে রাজী নয়। বাংলালিংক এর চিপ একটা অফার চলছে, ১০টাকায় ৫০০এসএমএস। আদমান ভাবলো, সেই এসএমএস দিয়ে সে চ্যাট করবে। বাংলালিংক মেসেঞ্জার এ ১০টাকা দিয়ে পাঁচটা এসএমএসের বেশি করা যাবেনা। কিন্তু ৫০০ এসএমএস কিনলে সে পুরো ২৪ঘন্টা চ্যাট করতে পারবে। তাই সে রিপ্লাই করলো:

 

“Hi, Hows going on? Im here with 019208219**.”

 

দ্রুতই জবাব এলো। এরকম:

 

“ok, but I have only warid. Do u have?”

 

Warid হচ্ছে অন্য একটি মোবাইল অপারেটর। আদমানের একটি ওয়ারিদ সিমকার্ড আছে। কিন্তু সে এখন গ্রামের বাড়িতে। এখানে সেটার নেটওয়ার্ক নেই। তাই সে এটা চালাতে পারেনা। আর তাছাড়া তার তো উদ্দেশ্য ছিলো ফ্রি এসএমএসে চ্যাট করা। অথচ ওপক্ষ বলছে তার একমাত্র ওয়ারিদই আছে। তবু আদমান লিখলো:

 

“Oh sorry! Ive no Warid. Do you have any other?

 

Im from Dhaka. You?”

 

মেসেজটা সেন্ট করে আদমান ওপক্ষের জবাব পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। কিন্তু বেশ কিছু সময় কেটে গেলো, ওপক্ষের কোনো জবাব এলোনা। আদমান ভাবলো, ওপক্ষ হয়তো অন্যদিকে চম্পট মেরেছে। কেননা মেসেঞ্জারবাসীদের এদিক সেদিক দৌঁড়ঝাঁপ মারার একটা বাতিক আছে।

 

কিন্তু আদমানকে কিছুটা অবাক করে দিয়ে, ওয়ারিদ নাম্বার থেকে একটা কল এলো। আদমান একটু অবাক হলো এ কারনে যে, দুএকটা মেসেজ চালান করেই মেসেঞ্জারবাসীদের মধ্যে কেউ সচরাচর কল করেনা। আদমানের এ অভিজ্ঞতা অবশ্যই ইন্টারনেট মেসেঞ্জারের। সেখানে ভয়েস চ্যাটের আবদার করলে বাংলাদেশী মেয়েরা সহজে কেউ রাজী হয়না। আলাপ পরিচয় হলে তারপর অবশ্য তারা ঘন্টার পর ঘন্টা ভয়েসে চ্যাট করে। কিন্তু এখানে একটা মেসেজ চালান করেই ওপক্ষ কল করে বসলো! নাকি এটা অন্য কেউ? না। এটা যে ওপক্ষেরই কল, আদমান সেটা মোটামুটি নিশ্চিত। তাহলে কি ওপক্ষ টিনএজার কোনো ছেলে? আদমানকে সে মেয়ে ভেবে নিয়েছে? তাই সে এতো আগ্রহী? কি জানি!

 

ফোনটা তখনও বেজে চলছে। আদমান ধরলো। কানে নিয়েই সে শুনলো ওপাশে চিকন রিনরিনে একটা মেয়েকন্ঠ বলছে: “কে বলছেন?” আদমান নিশ্চিত হলো যে, ওপাশের কন্ঠস্বরটি তার, যার সাথে চ্যাট করছিলো সে। আদমান বললো:

 

“এতোক্ষণ মেসেঞ্জারে আমি যার সাথে কথা বলছিলাম আপনি তাহলে সেই?”

 

ওপাশের রিনরিনে কন্ঠ মৃদু হেসে বললো: “কথা বলছিলেন? কই শুনতে পাইনি তো!”

 

“মেসেঞ্জারে কথা শুনতে পাননি! ভেরী সেড। এখন নিশ্চয়ই শুনতে পাচ্ছেন?”

 

“তা পাচ্ছি।”

 

“নাকি আরো জোরে বলবো?”

 

 

 

“হাহাহা... না ঠিক আছে।”

 

“তো কেমন আছেন আপনি?”

 

“ভালো। এবং একটু টায়ার্ড।”

 

“টায়ার্ড? কেনো? ভয়ে?”

 

“হাহাহা...ভয় পাবো কেনো?”

 

“না..কে না কে কল ধরে!”

 

“না ভয় পাইনি। তাছাড়া আপনি তো আর বাঘ ভাল্লুক না!”

 

“বাঘ ভাল্লুক তো নই-ই, এমনকি গরু মহিষও না। আমি আদম।”

 

“আপনার নাম কি সত্যিই আদম নাকি!”

 

“নামটা আদম না হলেও আমি তো আসলে আদমই। আর আপনি ইভ, তাইনা?”

 

“হাহাহা...তা নামটা কি জনাবের?”

 

“আদমান। সাথে অবশ্য একটা সাফী আছে।”

 

“আদমান সাফী? আদনান সামীর ছোটভাই? হাহাহা...”

 

“আমি একজন আদম, আদনান সামীও আদম। আর সকল আদম ভাই ভাই। সে হিসেবে ভাই তো বটেই।”

 

“হোহোহো... হুঁ বুঝলাম।”

 

“তা, আপনার নামটা কি বলা যাবে?”

 

“আমার নামটা মেসেঞ্জার লিস্টে ছিলো তো, তাইনা?”

 

“তা ছিলো একটা। তানভি। ভাবলাম যে, অনেকেই তো মেসেঞ্জারে বানানো নিকনেম ইউজ করে।”

 

“যারা মেসেঞ্জারে খুব অভিজ্ঞ তারা হয়তো করে। আমি এখানে নতুন। আবার যদি নাম লিখি, বানানো নাম লিখবো।”

 

“সরি, আপনার উদার সততার উপর আঘাত করেছি। ডোন্ট মাইন্ড, প্লিজ।”

 

“না ঠিক আছে।”

 

“আপনি কোথা থেকে বলছেন জানা যাবে?”

 

“কোথা থেকে মানে কি কোথায় থাকি সেটা?”

 

“হুঁ। কোথায় থাকেন, কোথায় পড়েন, কোথায় খান, কোথায় ঘুমান এইসব আর কি...”

 

“ঢাকা।”

 

“সব ঢাকায়? ঢাকার কোথায়?”

 

“...রায়” এই কথাটা বুঝতে পারলোনা আদমান। সে বললো: “উত্তরায়?”

 

“উত্তরা আবার ঢাকা নাকি! উত্তরা তো ঢাকার বাইরে।”

 

“লোকে তো টংগী গাজীপুরকেও ঢাকা বলে।”

 

“বান্দরবন পঞ্চগড়ের লোকেরা হয়তো বলে।”

 

“তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু ঢাকার বাইরে মানে খুলনা রাজশাহী সিলেট গেলে শুনি, আপনারা তো ঢাকার লোক এরকম বলে। তাই বললাম আর কি।”

 

“আপনি কি টংগী থাকেন নাকি?”

 

“না আমি ঢাকায় থাকি, ঝিগাতলায়। আমার বাড়ি গাজীপুরে।”

 

“ও আচ্ছা।”

 

“বুঝলাম আপনি উত্তরায় থাকেন না, ঢাকায় থাকেন। ঢাকার কোথায়?”

 

“রামপুরা।”

 

“রামপুরায় থাকেন। আর খাওয়াদাওয়া? হোহোহো...”

 

“সেটাও সেখানেই, বাবার হোটেলে।”

 

“পড়াশুনার জন্য আর দূরে গিয়ে লাভ কী, তাইনা?”

 

“হাহাহা...ঠিক, রামপুরা কলেজ থেকে এবার মাত্র ইন্টার করেছি। এখন ভর্তির চেষ্টা করে যাচ্ছি। ঢাকা ভার্সিটি থেকে ফরম তুলেছি, জানি টিকবোনা, তাও তুলেছি।”


Jwel Jwel

181 وبلاگ نوشته ها

نظرات