Part:1
পাঁচ বছর পর আজ নিজের দেশে ফিরছে সারা। পাঁচ বছর আগে কলঙ্কেল বোঝা মাথায় নিয়ে নিজের দেশে চলে যায় সারা।এই পাঁচ বছর কারো সাথে যোগাযোগ রাখেনি সারা। সারা কোলে চার বছরের দুটো ফুটফুটে মিষ্টি বাবু। ছেলে বাবুর নাম রোদ আর মেয়ে বাবুর নাম রোদ্রি। দুটো টুইন বাচ্চা। সারা ইউকের নাম করা একজন ডাক্তার।এক নামে কম বেশি সবাই চেনে তাকে। সারা আর কখনো বাংলাদেশ ফিরতে চায় নি কিন্তু ভাগ্য তাকে ইউকে থেকে বাংলাদেশে টেনে নিয়ে এসেছে। সারা বাংলাদেশ এসেছে দুইটা কারনে প্রথম একটা ইমারজেন্সি অপারেশন করতে। দ্বিতীয় তার ছেলে মেয়েদের বাংলাদেশ টা ঘুরে দেখাবে। সারা সাথে তার এসিস্ট্যান্ট হিয়া এবং তার বন্ধু মাহিন নিয়ে এসেছে।সারা Airport থেকে বেরিয়ে দেখে মাহিন এর বাবা মা শিহাব মির্জা ও রোহেনা মির্জা ওদের রিসিভ করতে এসেছে। সারা এখন আপন মানুষ বলতে শুধু এরাই আর সবাই সারা কে ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। মাহিন এর বাবা মা সারা কে নিজের মেয়ের মত ভালবাসে।রোদ আর রোদ্রি মাহিন এর বাবা মা কে দেখে সারা কোল থেকে নেমে গুটি গুটি পায়ে দৌড়ে গিয়ে ওদের পা জড়িয়ে ধরে। সারা ওদের পিছন থেকে সাবধান করছে।
.
সারা : বাবারা আস্তে পরে যাবে তো।
.
মাহিন এর বাবা মা ওদের কোলে নিয়ে সারা মুখে চুমু দিয়ে বলে।
.
শিহাব মির্জা : কেমন আছে আমার দাদু ভাইরা?
.
রোদ : আমলা বলো আথি দাদু ভাই।তুমি তেমন আথো?
.
শিহাব মির্জা : ভালো ছিলাম না কিন্তু এখন ভালো আছি তোমাদের দেখে। সারা মা তুই কেমন আছিস?
.
সারা : বাবা আমি ভালো আছি।তোমরা ভালো আছো। ঠিক মত মেডিসিন নিচ্ছো তো।( সারা মাহিন এর বাবা মা কে বাবা মা বলে ডাকে। )
.
রোহেনা মির্জা : তা তো দেখেই বুজে গেছি কেমন ভালো আছিস। চেহারা কি হাল করেছিস একবার দেখেছিস? আর তোকে কোথাও যেতে দেবো না।
.
সারা : মা তুমিও না কোথায় কতদিন পর এলাম একটু আদর করবে তা না শুরু হয়ে গেলো তোমার বকা।( অভিমান করে বলে )
.
সারা কথা শুনে মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরে বলে।
.
মা : পাগলি মেয়ে আমার। ঠিক আগের মতই আছিস।
.
মাহিন : রোদ্রি মামনি ডেডার কোলে আসো দিদার তো বয়স হয়েছে বাড়ি গিয়ে আবার দিদার আদর খেয়ো।( রোদ আর রোদ্রি মাহিন কে ডেডা বলে ডাকে )
.
রোদ্রি : আথা।( ছোট ছোট হাত বাড়িয়ে দিলে মাহিন কোলে নেয়।)
.
বাবা : এখানে ওদের কতক্ষণ ধার করিয়ে রাখবে চলো বাড়ি যাই।
.
মা : হুম চলো।
.
সবাই মিলে মির্জা বাড়ি চলে আসে। রোদ আর রোদ্রি বাড়ি মাথায় করে রেখেছে। সারা ওদের জোর করে ফ্রেশ করাতে নিয়ে যায় না হলে এই বিচ্ছু দুটো থামবে না তা সারা খুব ভালো করেই জানে। রাতে খাওয়া খায়ে রোদ আর রোদ্রি ওর দাদু ভাই আর দিদার সাথে কথার ঝুড়ি খুলে বলে ওদের আদো আদো কথা শুনে দাদু দিদা হাসতে হাসতে কুটিকুটি হয়ে যায়।আজ অনেক র্জানি করায় সারা ওদের তাড়াতাড়ি ঘুম পাড়াতে নিয়ে যায়। সারা ওদের ঘুমতে বলে ওয়াশরুমে চলে যায়।ওয়াশরুম থেকে এসে দেখে রোদ্রি গালে হাত দিয়ে মুখ গোমড়া করে বসে আছে। সারা বেডে বসে জিজ্ঞাসা করে।
.
সারা : কি হয়েছে আমার মায়ের এমন মুখ করে রেখেছে কেনো?
.
রোদ্রি : নোদ্রি নাগ করেছে!
.
সারা : কেনো আমার রোদ্রি সোনা রাগ করেছে?
.
রোদ : মাম্মা তুমি দানো না বোন তুমার বুক থাড়া ঘুমতে পারে না।( হেসে দিয়ে )
.
সারা : আমি জানি সোনা। আমি তো ফ্রেশ হতে গেছিলাম।( রোদ্রি কে কোলে নিয়ে )
.
রোদ্রি : থরি মাম্মা আমি বুঝথে পারিনি।
.
সারা: ইটস ওকে মা। চলো আমি তোমাদের ঘুম পাড়িয়ে দেই।
.
সারা শুয়ে পড়লে রোদ সারা কে কোল বালিশের মত করে জড়িয়ে ধরে আর রোদ্রি সারার বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। সারা এক হাত দিয়ে রোদ কে আর এক হাত দিয়ে রোদ্রি কে জড়িয়ে ধরে আছে।রোদ্রির ঘুমানো স্টাইল দেখে সারা মনে মনে বলে।
.
সারা : ( মনে মনে রোদ্রির ঘুমানো স্টাইল একদম মাহিরে মত একবারে মেয়েটা ওর বাবার মত হয়েছে। মাহির যদি আমাকে অবিশ্বাস না করতো তাহলে আমাদেরও সংসারটা সুখের হতো। জানো মাহির একটা মেয়ের কাছে সবথেকে মূল্যবান হলো তার ইজ্জত, চরিত্র আর তুমি আমার সেই চরিত্রে আঙ্গুল তুললে। সত্যি না জেনে আমাকে কলঙ্কিত করেছো। আমি কখনো তোমাকে ক্ষমা করবো না।আজ তোমার জন্য আমার কাছের মানুষগুলো আমাকে ঘৃণা করে। আমি কখনো তোমাকে ক্ষমা করতে পারবোনা। )
.
সারা এসব কথা চিন্তা করে হঠাৎ রোদ ঘুমের ঘোরে কেঁপে উঠলে সারা ওর দিকে ফিরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমনোর চেষ্টা করে।
.
খান বাড়ি ?
খান বাড়ির সবাই রাতের খাবার খাচ্ছে।নিলিমা খেতে খেতে তার হাসবেন্ড অয়নকে জিজ্ঞাসা করে।
.
নিলিমা : কাল তো শোহান ভাইয়ের অপারেশন তুমি কি যাবে?