অবিশ্বাস্য কাহিনী

আমার সাথে দুএকটা অতি অলৌকিক ঘটনা না ঘটলে আমি কখনোই বিশ্বাস করতাম না যে, জ্বিন-ভূত বলে কিছু আছে।

এখনো মাঝে মা

আমার সাথে দুএকটা অতি অলৌকিক ঘটনা না ঘটলে আমি কখনোই বিশ্বাস করতাম না যে, জ্বিন-ভূত বলে কিছু আছে। 

 

এখনো মাঝে মাঝে বিশ্বাস করতে চাইনা। আর এই জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে ভূত-প্রেতে বিশ্বাস একেবারেই বেমানান। তবে এই পৃথীবিতে এখনো অনেক বিষয় আছে যা অমীমাংসিত। যার কোন সদুত্তর কেউ দিতে পারেনি। 

 

আমার জীবনে তেমনি একটা অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়ে গেছে। আমি অনেককেই এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছি কিন্তু কোন যুক্তিসংগত উত্তর পাইনি। আজ তাই সবার কাছে আমি সেই প্রশ্নটা আরেকবার করতে চাই। 

 

তার আগে ঘটনাটা বলি, 

 

মাঘ মাসের কনকনে শীতের রাত। আমি সেদিন রাতের ট্রেনে বগুড়া থেকে বাড়ি ফিরছি। রাত দশটা বিশে রংপুর এক্সপ্রেসে উঠলাম। যেহেতু চাটমোহর স্টেশনে রংপুর এক্সপ্রেস দাড়ায় না তাই বাধ্য হয়ে বড়ালব্রীজের টিকিট কাটতে হলো। বগুড়া থেকে বড়ালব্রীজ পৌছাতে রাত আড়াইটে বেজে গেলো। 

 

ছোট্ট একটা স্টেশন। দু একটা দোকান খোলা আছে। দেখে শুনে এক চায়ের দোকানে বসলাম। আর মনে মনে ভাবলাম, আজ আর বাড়ি যাবো না। স্টেশনেই সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। তাই আরাম করে পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে চা-সিগারেট খাচ্ছি। প্রায় আধা ঘন্টা হয়ে গেলো এভাবে বসে থাকতে থাকতে। এদিকে প্রচন্ড ঠান্ডা আর কুয়াশায় চারদিকে ঢেকে আসছে। নিজের অযাচিত বোকামির জন্য নিজের কাছেই রাগ হচ্ছে! 

 

মনে মনে ভাবলাম, 

 

দুর! কাল সকালে বের হলেও পারতাম। কি দরকার ছিল অযথা এই রাতে ট্রেনে আসার! না হয় কালকের কাজটা একটু দেরীতেই হত। তবুও তো এই কনকনে শীতের রাতে খোলা আকাশের নীচে এভাবে বসে থাকতে হত না। 

 

এসব ভাবছিলাম, আর নিজের প্রতি খুব রাগ হচ্ছিলো। কাউকে গাড়ি নিয়ে আসতেও বলিনি। এমনকি কোন আত্মীয়কে ফোন দেব তারও উপায় নেই। ফোনের ব্যাটারি সারা রাস্তায় ফেসবুক চালাতে চালাতেই ডেড হয়ে গেছে। 

 

অগত্য নিরুপায় হয়ে বসে থাকা আর চা সিগারেট খাওয়া ছাড়া উপায় নেই। প্লাটফর্ম এ কিছুক্ষন বসে থেকে সারে তিনটা নাগাদ নীচে বাজারের দিকে নামলাম ঘুরে দেখার জন্য। 

 

কিছুদূর এগুতেই দেখলাম আমার বাড়ির পাশের এক পরিচিত জ্যাঠা এক দোকানে দাঁড়িয়ে পান খাচ্ছে। কাছে যেতেই বলল, 

 

ক্যা বারে, তুমি এত রাতে কোনে থেইক্যা? 

 

আমি কাছের একজন মানুষ পেয়ে কিছুটা উচ্ছাসিত হলাম। যাক তাও নিজের একটা মানুষ আছে। 

 

আমি বললাম, জ্যাঠা, বগুড়া থেকে আসতেছি। আপনি এখানে ক্যা? 

 

জ্যাঠা বলল, আমার মেয়ে আর জামাই আসার কথা ছিল এই ট্রেনে। কিন্তু ওরা তো কেউ আসে নাই দেখতেছি। আমার ফোনডাও বাড়িত রাইখ্যে আইছি তাই ফোন দিবের পারি নাই। 

 

কেবলে দোকানদারের কাছ থেকে ফোন দিয়ে শুনি, ওরা নাকি গাড়ি ফেল করিসে। দেইখসেও রে বা, ক্যাবা কথা হইলো! যাই হোক, ভালোই হইলো তুমাক পায়া। 

 

তা তুমি, বাড়ি যাইবে লায়? 

 

আমি বললাম, হু যাবো তো, কিন্তু এত রাতে গাড়ি পাবোনে কই? 

 

জ্যাঠা হাসি মুখে কইলো, দুর ব্যাটা, আমি একটা সি এন জি লিয়ে আইছি। চল, যাই। 

 

আমি মোটামুটি আনন্দে আত্মহারা। যাক বাবা, বাঁচা গেলো। 

 

নদী পার হয়ে পশ্চিম পাশের বটগাছের কাছ থেকে সি এন জি তে উঠলাম। বিশ্বাস করবেন না, সি এন জি তে উঠে কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লাম। 

 

এক ঘুম দেয়ার পর কারো ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো। দেখি আমার ওই জ্যাঠা। 

 

আমাকে বলল, ব্যাটা, তোমারে বাড়ি পায়া গেছি। নামবা? না হয় আজ আমারে বাড়িতে যাই চল? 

 

আমি চোখ খুলে দেখলাম, আমার বাড়ির সামনের রাস্তায় সি এন জি দাড়িয়ে আছে। আমি জ্যাঠাকে বললাম, 

 

না, জ্যাঠা, বাড়ি যখন চলে এসছি তখন আর যাবো না। অন্যদিন যাবো। 

 

জ্যাঠা বলল, আচ্ছা বাজান, ভালো থাইকো তালি। আর তোমার আব্বা মাকে বইলো আমার বাড়িতে বেড়ায়ে আসতে। 

 

আমি হ্যা বলে বাড়ির উঠোনে উঠতে শুরু করলাম। ততক্ষণে, সি এন জি মুখ ঘুড়িয়ে বড় রাস্তার দিকে চলা শুরু করেছে। 

 

বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে বুঝলাম সবাই ঘুমিয়ে আছে। আমি আম্মার ঘরের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে আস্তে আস্তে আম্মাকে ডাকলাম। 

 

আম্মা ঘুম থেকে উঠে এত রাত্রে আমাকে দেখে তো অবাক! 

 

তারপর নানা প্রশ্ন, কিভাবে আসলাম? কই থেকে আসলাম? কার সাথে আসলাম ইত্যাদি। 

 

আমি ঘরে যেয়ে মাকে সব খুলে বললাম। 

 

হঠাৎ করে ঘরের দেয়াল ঘড়িটা বেজে উঠলো। চারটার ঘন্টা শুনে আমি হকচকিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালাম। 

 

কেবল চারটা বাজলো!

 

আমি দেয়াল ঘড়িতে ভুল আছে ভেবে হাত ঘড়ির দিকে তাকালাম। চারটা এখনো বাজেনি। কয়েক সেকেন্ড এখনো বাকি আছে!! আমি আরো অবাক হয়ে গেলাম। 

 

এটা কিভাবে সম্ভব? বড়ালব্রীজ থেকে চাটমোহরে আসতেই যেখানে ৪৫ মিনিটের উপরে সময় লাগে, সেখানে আরো সাত-আট কিলো বেশি রাস্তা মাত্র পনেরো মিনিটে কিভাবে আসলাম? ? 

 

তারপর মা যখন সব কিছু শুনে বুকে দোয়া পড়ে ফু দিয়ে বললেন, আল্লাহর মাল, আল্লাহই হেফাজত করেন। তখন একটু অবাক হয়েছিলাম বটে কিন্তু যখন শুনলাম আমি যে জ্যাঠার সাথে এতটা পথ এসেছি, তিনি গত পাঁচ দিন আগে মারা গেছেন তখন স্তব্ধ হয়ে গেলাম। 

 

কিন্ত কিভাবে আমি এত অল্প সময়ে এতটা পথ এলাম? 

 

আর

 

একজন মৃত মানুষ আমাকে কেন সাহায্য করলেন? 

 

তা আজো আমার কাছে অমীমাংসিত জিজ্ঞাসা!!

 

কেউ এর সদুত্তর জানলে অবশ্যই জানাবেন। কৃতজ্ঞ থাকবো। 

সেবার অনেক দিন পর কুরবানির ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেছি। আর বাড়ি যাওয়া মানেই বাড়িতে থাকি বা না থাকি সুকচাঁদ চাচার দোকানে প্রতিদিন যেতেইই হবে। বিশেষ করে আমি আর আমার এক জ্যাঠাতো ভাই "রবিন" প্রতিদিন বিকেলে মোটরসাইকেল নিয়ে চাচার দোকানে চলে আসতাম। তারপর সারা বিকেল, সন্ধ্যা বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর ছোট ভাইদের সাথে গল্প গুজব করে রাত আটটা-নটা নাগাদ বাসায় চলে যেতাম। আমার গ্রামের বাড়ি থেকে সুকচাঁদ চাচার চা-ষ্টলে আসা-যাওয়ার পথে একটা বিল পাড়ি দিতে হত। বিলের মাঝখানে এই রাস্তাটা প্রায় দেড়-দুই কিলো। পুরাটাই ফাঁকা, আসে পাশে কোন বসত বাড়ি নাই, যেদিকে তাকানো যায় শুধু বিস্তীর্ণ ফসলী জমি। আর পাকা রাস্তার দুপাশে মাঝারি গোছের লাটিম গাছ, কোথাও কোথাও দু একটা শিশু কিংবা বট গাছ সমস্ত রাস্তাটাকে একটা আকর্ষনীয়, দর্শনীয় স্থানে পরিনত করেছে। তবে বিশেষত বর্ষা কালে এই জায়গাটা আরো বেশি সুন্দর হয়ে উঠে। তখন সমস্ত ফসলী জমি পানির নিচে চলে যায়, বিল বর্ষার পানিতে ভরে উঠে। যে দিকে তাকাবেন শুধু পানি আর পানি। পশ্চিমা দিগন্তে অস্তগামী লাল সূর্যটা কিভাবে বিলের পানিতে হারিয়ে যায়, তাই দেখতে বিকেল বেলা ছেলে-বুড়ো সহ সকল বয়সী লোকজন এসে এই খানে ভীর করে। বিলের অপার সৌন্দর্য দুচোখ ভরে অবলোকন করে। তারপর সন্ধ্যে বাড়ার সাথে সাথে একে একে ফাঁকা হয়ে যায় সব। 

 

আমাদের চলনবিলের লোকজন এই জায়গাকে বলে "মিনি কক্সবাজার"। যাদের কক্সবাজার দেখার সামর্থ্য নেই, তারা এই চলনবিলের মধ্যেই কল্পনায় কক্সবাজার দেখে নেই। 

 

কিন্তু এই অপার সৌন্দর্যের মাঝে কোথাও কোথাও লুকিয়ে আছে অতিপ্রাকৃত কিছু ঘটনা, তা অনেকেই জানেন না। ছোটবেলায় দাদার মুখে এ বিলের মধ্যে ঘটে যাওয়া কিছু ভুতুরে গল্প শুনে এসেছি। কিন্তু নিজের চোখে তা দেখবো কিংবা আরেকটা নতুন ঘটনার স্বাক্ষী হবো, তা কোনদিন ভাবিনি। 

 

যাই হোক, কুরবানির ঈদের বেশ কয়েকদিন পরের ঘটনা এটা। সেদিন আমি আর আমার জ্যাঠাতো ভাই সুকচাঁদ চাচার দোকানে যাওয়ার জন্য বের হলাম। বের হতে হতেই বেশ দেরী হয়ে গেছে। কিন্তু সন্ধ্যা হোক আর যাই হোক চাটমোহরে না এলে আর সুকচাদের দোকানের চা না খেলেই নয়। বাড়ি থেকে রওয়ানা দিয়ে বিলের মধ্যে আসতে আসতে প্রায় বেলা ডুবা ডুবা ভাব। একেবারে ভরা সন্ধ্যে বেলা তখন। হালকা শীত শীত লাগছে, তার মধ্যে দুভাই মোটর সাইকেল চালিয়ে আসছি। গাড়ির গতিবেগ ৪০-৫০ কিমি/ঘন্টা। 

 

হঠাৎ

 

ধানকুনিয়া পার হয়ে যে একটা গোরস্থান আছে সেই গোরস্থানের কাছে আসতেই তীব্র গরম এক বাতাসের হলকা এসে লাগলো। আমি আর রবিন দুজনেই খুব ভালো ভাবে অনুভব করলাম। 

 

রবিন আমাকে বলল, "চাচাতো ভাই, গাড়ির স্পীড আরেকটু কমা। "

 

আমি ওর কথার তাৎপর্য বুঝতে পারলাম। সঙ্গে সঙ্গে হালকা ব্রেক করে বিলের প্রথম মোড়টা পার হলাম। ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। আমি রবিনকে বললাম, "কি রে, হঠাৎ এ গরম বাতাস কই থেকে আইলো? "

 

ও আমতা আমতা করে কিছু বলল না। প্রথম ব্রীজটার কাছে এসে গাড়ি দাড় করালাম। 

 

শরীরটা কেমন যেন ভার ভার লাগছে। হাত পা ঠিক উঠেও উঠতে চাচ্ছে না। আমি রবিনকে বললাম, "তোর কাছে সিগারেট আছে? "

 

ও কোন কথা না বলে একটা সিগারেট এগিয়ে দিলো। দুজন পাশাপাশি দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছি। হঠাৎ রবিন বলল, 

 

গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে দে। আমি নীচে নেমে প্রস্রাব করে আসি। "

 

মুখে সিগারেট লাগিয়েই ও নীচে নেমে গেলো প্রকৃতির ডাকে। তখন আমি ব্রীজের সাইডে একা দাড়িয়ে। মনের মধ্যে হালকা ভয় কাজ করছে, কিন্তু ঠিক পাত্তা দিচ্ছি না। 

 

বরং সিগারেটে জোড়ে করে দুইটা টান দিয়ে ফেলে দিলাম। 

 

ততক্ষণে রবিন ওর কাজ সেরে উপরে চলে এসেছে। ওর মুখে এখনো সিগারেট। গাড়িতে উঠে বসতেই আমি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সামনে এগুতে শুরু করলাম। 

 

গাড়ির হেডলাইট এর তীব্র আলোয় পোকা গুলো সাৎ সাৎ করে চোখে মুখে এসে লাগছে। কিন্তু একটু দূরে যেতেই গাড়ির হেডলাইট হঠাৎ ডাউন হয়ে গেলো। কিন্তু ইঞ্জিন যথারীতি চলছে। 

 

আরেকটু সামনেই বড় ব্রীজটা। সামান্য উচু। কিন্তু আমার গাড়িটা কিছুতেই যেন উপরে উঠছে না। মনে হলো, কেউ একজন পেছন থেকে টেনে ধরে আছে। আমি ভাবলাম, উচু জায়গা তাই বোধহয় এমন হচ্ছে। ক্লাস ধরে ঘ্যাট ঘ্যাট গিয়ার কমিয়ে দুই গিয়ারর নিয়ে আসলাম। কিন্তু তবুও যেন ইঞ্জিন ঠিক শক্তি পাচ্ছে না। আমার ডান হাতে পিক আপ ফুল টানা। সাইলেন্সারের পেছন দিয়ে সাদা ধোয়া বের হচ্ছে। কিন্তু গাড়ি যেন এগুতেই চায় না। অনেক কষ্টে গাড়ি বড় ব্রীজটার উপরে উঠে থেমে গেলো। আর ঠিক সঙ্গে সঙ্গে আবারো সেই গরম বাতাস অনুভব করলাম। যেন এখনই আমাদের দুজনকে গাড়ি সমেত ব্রীজ থেকে নীচে ফেলে দেবে!

 

হার্ট বিট প্রচন্ড বেড়ে গেছে। সামনে পিছনে তাকিয়ে কোন জনমানুষের চিহ্ন দেখতে পেলাম না। রবিনের মুখের দিকে তাকিয়ে ওর পাংশুটে মুখ দেখে আমি আরো ঘাবরে গেলাম। কি করি আর কি করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। 

 

এদিকে চরম বাতাস হচ্ছে। যেন এই সময়েও কালবৈশাখী ঝড় হচ্ছে বিলের মধ্যে। আমি তো হেডলাইটের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম, কিন্তু ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার কারন খুজলাম। টাংকি ঝাঁকিয়ে দেখলাম, নাহ, যে তেল আছে তাতে অনায়াসে একশ কিলো রান করা যাবে। স্পার্কিং প্লাগ টান দিয়ে খুললাম। রবিন কে বললাম, মোবাইলের লাইট ধর। 

 

ও গ্যাস ম্যাচ বের করে লাইট ধরলো। নাহ! সব ঠিক আছে। স্পার্কিং চেক করলাম কিন্তু প্লাগে স্পার্ক হচ্ছে না!

 

আরো বেশিই ঘাবরে গেলাম। এই প্রায় শীতের মধ্যেও দুজন ঘেমে অস্থির। 

 

শেষ পর্যন্ত সব আশা ছেড়ে দিয়ে রবিনের কাছে আবার সিগারেট চাইলাম। ও সিগারেট বের করে জ্বালানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু এত বাতাসে কিছুতেই মেসলাইট জ্বলছে না। 

 

এদিকে আমার মনে হচ্ছে কেউ যেন বারবার আমার মুখ থেকে সিগারেট টান দিয়ে ফেলে দিতে চাইছে! আর আমিও দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরলাম। 

 

তারপর, বাতাসকে আড়াল করে অনেক কষ্টে সিগারেট টা জ্বালাতে পারি। আর সবচেয়ে আশ্চার্যের বিষয় যখনই সিগারেট টা জ্বলে উঠলো ওমনি চারপাশের উত্তাল হাওয়া শান্ত হয়ে গেলো। বাইকের প্যাডেলে কিক করার সাথে সাথে গাড়ি স্টার্ট, হেডলাইটও একেবারে ফকফকা। 

 

মৃত শরীরে যেন আত্না ফিরে পেলাম দুজন। 

 

সঙ্গে সঙ্গে গাড়তে উঠে দিলাম টান। গাড়িতে বসার পর আরেকবার ওই গরম বাতাস টা একটা ধাক্কা দিল। আর কানের কাছে কেউ যেন ফিসফিস করে বলল, "তোর মা লাউয়ের পাতায় জাউ বিলাইছিলো দেইখ্যা বাইচ্যা গেলি"। 

 

আমরা দুভাই স্পষ্ট সে কথা শুনতে পারলাম। সেই ফিস ফিস আওয়াজ টা। 

 

গাড়ি ছুটিয়ে শুকচাঁদ চাচার দোকানে এসে হাজির হলাম। রবিন আর আমার দুজনের সারা শরীর ঘেমে একাকার। শুকচাঁদ চাচা রবিনকে দেখেই বলল, " বউমার ঘরে চুরি করতে গেছিলে নাকি? "

 

কি আর বলবো তখন! বিলের মধ্যে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বললাম সবাইকে। সবাই শুনে এবং আমাদের অবস্থা দেখে তো থ! বকুল, গিয়াস, ইমরান, মিলন সবাই বলল, ভাই আজ আর বাড়ি যাওয়া লাগবি না। আজ চাটমোহরেই থাকেন। 

 

বকুল বলল, "চল, আমার বাড়িতে আজ থাকিস তোরা। "

 

কি আর করা! অগত্য সে রাত বকুলের বাসাতেই থাকতে হলো। 

সুমনের মায়ের আত্মাকে যে রাতে হাজির করেছিলাম, সে রাতের মত ভয়াবহ রাত আমার জীবনে ২য় টি আসে নি। এখনো সে কথা মনে হলে গা শিউরে উঠে। 

 

এই এখনি লোম গুলো খাড়া হয়ে ঊঠেছে। আপনাদের যদি দেখাতে পারতাম, তবে দেখতেন। 

 

নাহ, থাক। আজ সে গল্পটা করবো না। গল্পটা শোনার পর আপনার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যেতে পারে! আর সত্যি বলতে কি, আমারো কেমন কেমন যেন লাগছে! ইচ্ছেই হচ্ছে না সে কথাগুলো আবারো মনে করি! আবার গল্পটা শেষ না করে উঠতেও ইচ্ছে করছে না। যত ভয়ংকরই হোক না কেন, আমার মত তো সবাই এত ভীতু না!


Tanvir Arafat

93 Blog Mesajları

Yorumlar

📲 Download our app for a better experience!