জীবনের চাকা - ভালবাসার গল্প

বিয়ে করবেন আমাকে?
আনিকার মুখ থেকে কথা টা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো উদয়। আনিকা তাঁর বস। সে যে কোম্পানির কুক??

বিয়ে করবেন আমাকে?

আনিকার মুখ থেকে কথা টা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো উদয়। আনিকা তাঁর বস। সে যে কোম্পানির কুকার। সাবলীল বাংলায় বলতে গেলে বাবুর্চি। আনিকা সে কোম্পানির মালিক। উদয় সস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। কারণ আনিকা মেয়ে টা ভীষণ গল্পপ্রিয়। হয়তো গল্পের প্রথম লাইন বলেছে।

— থেমে গেলেন কেনো? গল্পের বাঁকি অংশ বলবেন না?

আনিকা চেয়ার টা সোজা করে বসে— আমি সবসময় গল্প পড়তে ভালবাসি। ভীষণ বইপ্রিয় একটা মেয়ে। মাঝে মাঝে দারোয়ানকে ডেকেও তাঁর সাথে গল্প করি। কেউ ভালো পায় কেউ পাগলামু বলে। কিন্তু আমি আজকে কোনো গল্প করছি না। আমি মন থেকেই বলছি।

উদয় বিপদে পড়ে গেলো। আনিকা আবার তাঁর চরিত্রের পরীক্ষা নিচ্ছে না তো? না কী সে লোভী কী না তা ঘেঁটে দেখছে? কোনোরকম জবাব দিলো— আমি অল্প শিক্ষিত একটা ছেলে। গ্রাম থেকে এসেছি। বড় ছেলে বিধায় পুরো পরিবারটাকে আমাকেই দেখতে হয়। বাবা অসুস্থ। যে টাকা বেতন দেন। তা দিয়ে কোনোরকম বাবার ঔষধপত্র কিনে টেনেটুনে চলে যায়। কিন্তু আমি লোভী নই বস।

আনিকা কিছু মুহূর্ত চুপ থেকে বললো— আপনি কত সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারেন। আপনার এই ব্যাপার টা আমাকে খুব হিংসে ধরায়। তাছাড়া আপনি যা ভাবছেন আসলে আমি তা করছি না সত্যি। আমি আপনার ব্যাপারে সব জানি। আপনি লোভী নন। তা আমি অনেক আগেই বুঝেছি। লোভী নন সে কারণেই তো আপনাকে আমার আরো বেশি ভালো লাগে। কথাগুলো সরাসরি বলছি বলে ভাববেন না আবার মেয়ের লজ্জাশরম কম।

উদয় আনিকার চোখে এবার লুব্ধক দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে যায়৷ এবার সে নিশ্চিত। আনিকা সত্যি সত্যিই বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে, কিন্তু কেনো? সে তো দেখতেও খুব সুদর্শন নয় যে শুধু চেহারা দেখে সব ভুলে যাবে। উত্তর দিলো— বিদেশী গল্প পড়তে পড়তে আপনার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে বস৷

আনিকা হাসলো।

তবে শব্দ করে নয়৷ বললো— জানি আমি দেখতে সুন্দরী না। প্রতিটা সাধারণ মেয়ের মতো রান্না করতে পারি না। শাড়ি পড়তে পারি না। আরো অনেক কিছু। এসব আপনার অপছন্দ হতে পারে। কিন্তু আমার আপনাকে ভালো লেগেছে। বিয়ের প্রস্তাবও দিলাম। বাকীটা আপনার হাতে। আমি কাউকে জোর করতে পছন্দ করি না, জানেনই তো।

উদয় চলে আসলো পাকঘরে।

উদয়।

পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে লেখাপড়া বেশিদূর করতে পারেনি। ছোটবেলা থেকে হোটেলে কাজ করেছে। তাঁর রান্নার হাত ভালো। গ্রামে সুনাম আছে। সে সুবাদে এই কোম্পানির কুকার হিসেবে যোগ দিয়েছে। অন্য জায়গার থেকে এখানে খুব ভালো বেতন পায় সে।

মিথ্যে বলে না সচারচর। কিন্তু একটা বড় মিথ্যে সে অনেক আগে আনিকার কোম্পানির কাছে বলেছে। সে অবিবাহিত!

একটি মাত্র মিথ্যা!

বিবাহিত থাকার পরেও একটু ভালো মাইনের চাকুরী পাবে বিধায় বলেছিলো সে অবিবাহিত। এই কুকার পদে কোম্পানির লোকেরা বিবাহিত লোক নিবে না। বিবাহিতদের না কী পিছুটান বেশি। কাজ করে না মন দিয়ে। সারাদিন বৌয়ের সাথে ফুসুরফুসুর করে।

উদয় কাজে ফাঁকি দেয়নি।

সায়েরা৷

উদয়ের বৌয়ের নাম। গ্রামের সহজ সরল সাধারণ একটি মেয়ে। সাত বছর প্রেম করে তাঁকে বিয়ে করেছে উদয়। আবার বিয়ের সাত বছর পূর্ণ হয়েছে কদিন আগে। একটা ছেলে আছে। প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করাবে ভাবছে।

উদয়ের রাতে ঘুম হচ্ছে না।

সে কী অনেক বড় অপরাধই করে ফেললো না কী এখানে নিজেকে অবিবাহিত বলে? সে বুঝতে পারছে না। কিন্তু এই মিথ্যে টা খুব প্রয়োজন পড়ে গিয়েছিলো তাঁর পরিবারের জন্য! সায়েরাকে আজকের কথা না বলে শান্তি পাচ্ছে না উদয়। ফোন দেয়ার সাথে সাথে সায়েরা ধরে বললো— আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো?

উদয় সালামের জবাব দিয়ে— ভাল নেই। আজকে এক কাহিনী ঘটেছে।

তারপর পুরো ব্যাপার টা খুলে বললো উদয়। সব শুনে সায়েরা খুব শক্ত ভাবে বললো— চলে আসো তুমি। কাজের অভাব হবে না। কিন্তু আমি তোমার বুকে অন্য কেউ শুয়ে আছে তা কল্পনা করতে পারবো না।

— দেখছি কী করা যায়।

নিচক এক যন্ত্রণায় পড়ে গেলো উদয়। তাঁর বৌকে সে খুব ভালবাসে। সায়েরা হয়তো আরো বেশি ভালবাসে। তাঁদের একটা সন্তানও আছে। অসুস্থ বাবা বাড়িতে। সব কিছু মিলিয়ে চাকুরীটাও দরকার। আনিকা তাঁর বিবাহিত জীবনের কথা জেনে গেলে চাকরীচ্যুত করবে। আনিকা হাজার টা ভুল সহ্য করতে পারে। কিন্তু একটিও মিথ্যে নয়।

আবার এরকম ভালো বেতনের চাকুরী সে আর কোথাও পাবে না তাও নিশ্চিত। এসব ভাবতে ভাবতে যখন মাথা টা হাল্কা ধরলো তখন আনিকার ফোন! মাঝ রাত্তিরে আনিকার ফোন পেয়ে নড়েচড়ে বসলো। এর আগে কোনোদিন আনিকা রাত্তিরে ফোন দেয়নি।

উদয় ফোন তুললো— বস, আপনি এতো রাত্তিরে?

— হ্যাঁ। বিরক্ত করলাম না তো?

— তা না ঠিক।

— অনেকক্ষণ ফোন ব্যস্ত পেয়েছি। কার সাথে কথা বলছিলেন জানতে পারি?

— বাবা ফোন করেছিলো।

— আপনার গলার আওয়াজ বলে দিচ্ছে মিথ্যে বলছেন। দেখুন আমি আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাতে চাই না। কিন্তু আমার জানা দরকার। কেনো তা আপনি ভালো করে জানেন। তা আপনি বলবেন কী?

— মাফ করবেন বস। আমিও এক কথা দুইবার বলি না।

আনিকা ওপাশ থেকে মিষ্টি কণ্ঠে বললো— যদি আপনার প্রেমিকা না থাকে তো দরজা টা খুলুন। আর থাকলে দরকার নেই। আমি আপনার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি!

উদয় তড়িঘড়ি করে উঠে রুমের বাতিগুলো জ্বালালো। অফিসের রান্না করার রুমের এক কোণে থাকে সে। এভাবে এখানে আনিকা এসে পড়বে সে কল্পনা ও করতে পারেনি। দরজা খুলে দেখলো আনিকা শাড়ি পড়ে এসেছে! হাতে চুড়ি, চোখে কাজল, ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক! সব কিছু মিলিয়ে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। যে কেউ একবার তাকালে চোখ ফেরাতে চাইবে না।


Jwel Jwel

181 Blog Mensajes

Comentarios