প্রত্যাবর্তন ১

চার মাস পর আমাকে হোস্টেল থেকে বাড়ি নিয়ে আসেন মা। সে এক কান্ড বটে। যে মা’র সঙ্গে আমার দেখা করাই

চার মাস পর আমাকে হোস্টেল থেকে বাড়ি নিয়ে আসেন মা। সে এক কান্ড বটে। যে মা’র সঙ্গে আমার দেখা করাই মানা ছিল, সেই মা’র হাতে সঁপে দেওয়া হল নিষিদ্ধ গন্দম। মা প্রায়ই হোস্টেল সুপারের সঙ্গে দেখা করে কাঁদতেন, বলতেন ওর বাবা একটা বিয়ে করবে, তাই মেয়েকে হোস্টেলে পাঠায়ে দিছে। সবই হচ্ছে ষড়যন্ত্র। বাড়ি বিক্রি কইরা দিয়া নতুন বউ নিয়া সে আলাদা বাড়িতে থাকবে। এখন মেয়েকে আমার কাছে দিয়া দেন, দুই ছেলের কেউই কাছে নাই, মেয়ে বাড়িতে থাকবে, দেখি কী কইরা তার বাপ বাড়ি বিক্রি করে, কী কইরা বিয়ে করে আরেকটা।

 

সুপারের মন মা’র কান্নায় গলল। মেয়ে দিয়ে দিলেন মায়ের কাছে।

 

চার মাস পর বাড়ি ফেরে মেয়ে।

 

ইয়াসমিনকেও ফেরত আনা হয়েছে মির্জাপুর থেকে।

 

দু’মেয়েকে দু’পাশে নিয়ে বসে থাকেন মা। সন্ত্রস্ত।

 

বাবা বাড়ি ঢুকে আমাদের দেখে ভূত দেখার মত চমকে ওঠেন। বাবার চোখ লাল হতে থাকে। চোয়াল শক্ত হতে থাকে। দাঁতে লাগতে থাকে দাঁত। ভয়ে মিইয়ে থাকি আমি, ইয়াসমিন মা’র পিঠের পেছনে লুকোতে চেষ্টা করে মুখ।

 

মেয়েদেরে ত, মা মিনমিন করে বলেন, জন্ম আমি দিছি। এদের উপর আমার অধিকার নাই নাকি!

 

কথাটি মা ছুঁড়ে দেন বাতাসে, যার গায়ে লাগে লাগুক।

 

বাবা টুঁ শব্দ করলেন না। বাড়িতে খাবার পাঠানো বন্ধ করে দিলেন। নানার দোকান থেকে ঠোঙা করে খাবার এনে আমাদের খেতে দেন আর শব্দ ছুঁড়তে থাকেন প্রতিদিন বাতাসে–বিয়া করার খায়েশ হইছে। মেয়েদুইটারে দূর কইরা বিয়া করব। এই শয়তানি আমি বাঁইচা থাকতে হইতে দিব না। বেডা পুইল্যা খেতা লইয়া শহরে আইছিল, আমার বাপে বেডারে টেকা পইসা দিয়া বাচাইছে।

 

মা হাঁটতে হাঁটতে শব্দ ছোঁড়েন বাতাসে। বাতাসে, দেখে তাই মনে হয়, আসলে ছোঁড়েন বাবার উদ্দেশে। সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে নয়, বাবা যে ঘরে বসে আছেন, তার পাশের ঘর আর বারান্দা থেকে উঁচুস্বরে, এমন উঁচুস্বরে যেন কান খাড়া না করেই বাবা শুনতে পান।

 

ইস্কুলে যাওয়ার রিক্সা ভাড়া দেওয়াও বন্ধ করে দিলেন বাবা। বন্ধ রইল ইস্কুলে যাওয়া। মা বলেন দেখি কয়দিন লেখাপড়ার খরচ না দিয়া পারে!

 

মা’র বিশ্বাস এ ব্যাপারে অভিমান বা রাগ দেখিয়ে বেশিদিন থাকা সম্ভব নয় বাবার। তিনদিন ইস্কুলে না যাওয়া লক্ষ করে বাবা শেষ পর্যন্ত নিজেই তাঁর নীরবতা ভাঙেন। ভোরবেলা ঠান্ডা পানিতে গোসল করে কাপড় চোপড় পরে তৈরি হয়ে আমাকে ডেকে গলা কেশে, যেন গলার তলে কফ জমে আছে, বলেন–কি লেখাপড়া করার আর দরকার নাই!

 

আমি চুপ।

 

লেখাপড়া করার আমার দরকার আছে কি নেই, তা বাবাই সিদ্ধান্ত নেন। আমার সিদ্ধান্তের কোনও প্রায়োজন হয় না।

 

যদি দরকার না থাকে, বাবা বলেন চোখ কড়িকাঠে রেখে, তাইলে সোজাসুজি বইলা দেও। আমারও আর চিন্তা করার দরকার নাই। তুমার ভাইয়েরা ত বইলা দিছে আমারে। বইলা দিছে তারা লেখাপড়া করবে না। মাস মাস টাকা পাঠাই নোমানরে, ও কয় এইবার নাকি পরীক্ষা দিব না, দিব পরের বার। আর তুমার আরেক ভাই, তার জীবন ত শেষই। তুমরাও ওই পথে যাইতে চাইলে কও, তাইলে আর টাকা পয়সা খরচা কইরা তুমাদেরে ইস্কুলে পড়ানির কুনো মানে নাই।

 

আমি উদাস দৃষ্টি ছুঁড়ে দিই উঠোনের বড় হয়ে যাওয়া ঘাসে, শ্যাওলা পড়া কলতলায়, পেয়ারা গাছের ডালে বসে থাকা একটি পাতিকাকের লেজে। বাবার সামনে মুখ খুলে আমার অভ্যেস নেই। যত নির্বাক হই, তত মঙ্গল। যত নিশ্চল হই, তত বাবা নিশ্চিন্ত হন। এরকমই নিয়ম যে, বাবা যা খুশি বলে যাবেন, মাথা নিচু করে, চোখ নামিয়ে তা নিঃশব্দে শুনে যেতে হবে। ইচ্ছে করলে গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করবেন অথবা চড় কষাবেন গালে, মাথা পেতে সবই গ্রহণ করতে হবে আমাকে। বাবা এই যে বললেন ছোটদার পথে যেতে চাইলে আমি যেন তাকে বলি, তিনি আমাকে যেতে দেবেন। আসলে এ নেহাতই কথার কথা। যদি সত্যিই বলি আমি ছোটদার মত হতে চাই, ইস্কুলে টিস্কুলে আর যাব না, তিনি কিছুতেই তা হতে দেবেন না, বরং পিটিয়ে পিঠের চামড়া তুলবেন আমার।

 

— ইস্কুলে যাস না ক্যান! বাবা ড্রাম পেটানো স্বরে বলেন। হঠাৎ এমন বিকট আওয়াজে আমার আপাদমস্তক কেঁপে ওঠে। চোখ নামিয়ে আনি পাতিকাকের লেজ থেকে। প্রশ্নটির উত্তর আসলেই বাবা জানতে চাইছেন, গর্জে উঠে বোঝান। উত্তরটি তিনি জানেন, তবু তাঁর জানা উত্তরটিই তাঁকে আবার নতুন করে জানাতে হবে আমাকে। আমি যে জানি আমার অন্যায়ের জন্য দায়ি তিনি, আমি নই, তা জানাবার জন্য তাঁকে বলি, যতটা স্বর তাঁর সামনে ওঠানো সম্ভব–রিক্সাভাড়া নাই।

 

— রিক্সাভাড়া নাই ক্যান? মায়ের অস্টকাডি হইছস! তর মায়ে মুখে তুইলা খাওয়াইতাছে। রিক্সাভাড়া যোগাড় করতে পারে না!

 

দুটো টাকা বাবা ছুঁড়ে দেন আমার মুখের ওপর, টাকা দুটো মেঝেয় উপুড় হয়ে পড়ে। পড়ুক, আমি ভাবি, এ ভাবেই পড়ে থাক। ভাবিই কেবল, আমার ভাবনা থেতো করে দিয়ে বাবা ফুঁসতে থাকেন আমার নির্লিপ্তির দিকে চেয়ে, ঠিকই উবু হয়ে টাকা দুটো তুলি। বাবাকে ছোটদার কাছেই কেবল একবার হেরে যেতে দেখেছি। তিনি এবার হেরেছেন কি না জানি না, তবে নিঃশব্দে নতি স্বীকার করলেন, মেনে নিলেন আমাদের প্রত্যাবর্তন, অবশ্য বুঝতে দিলেন না যে তিনি মেনে নিয়েছেন। তিনি আর চ্যাংদোলা করে আমাদের হোস্টেলে ফেরত পাঠান না। পাঠান না ঠিকই কিন্তু বাড়িটিকে অন্ধকার কারাগার বানিয়ে ফেলেন। রাস্তা দেখা যায় যে জানালাগুলোয় দাঁড়ালে, সেগুলো পাকাপাকি বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। গরুগাড়ি ভরে ইট বালু সিমেন্ট কিনে রাজমিস্ত্রি ডেকে বাড়ির চারদিক ঘিরে যে দেয়াল, তা দ্বিগুণ উঁচু করে তুলে দেন জেলের দেয়ালের মত, বাইরের সঙ্গে ভেতরের কোনও যোগাযোগ রইল না। ছাদে ওঠা নিষেধ। ছাদে উঠলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে নামান ছাদ থেকে। ফের কখনও উঠলে পায়ের টেংরি ভেঙে ফেলবেন বলেন। যে ছাদ আমাদের বৃষ্টিতে ভিজে গান গেয়ে নাচার, মিছিমিছির রান্নাবাড়ির, রেলিংএ হেলান দিয়ে আউট বই পড়ার, দাঁড়িয়ে পাড়ার মানুষদের নাড়ি নক্ষত্র দেখার, চমৎকার জায়গা ছিল, সে ছাদ হয়ে উঠল নিষিদ্ধ। আমার চলাচলের সীমানা আকস্মিক হৃাস পাচ্ছে, বুঝি, কেন, ঠিক বুঝি না। ছাদ থেকে বাইরের জগতখানা আমার অল্প অল্প করে চেনা হয়ে উঠছিল। মিঠে হাওয়ায় ছাদে হাঁটতে হাঁটতে শব্দ এসে ভিড় করত মাথায়, গুঁড়ি গুঁড়ি ঝিরি ঝিরি শব্দ। বৃষ্টির মত। আমি সেই শব্দ দিয়ে মনে মনে মালা গাঁথতাম।

 

ছাদ নিষিদ্ধ হওয়ার পর ছাদের নেশা আমাকে আরও পেয়ে বসে। বাবা বাড়ি থেকে বেরোলেই দৌড়ে ছাদে উঠি। কালো ফটকে বাবা আসার শব্দ হলে ঝড়ো বাতাসের মত নিচে নেমে নিষ্পাপ শিশুর মত মুখ করে বসে থাকি পড়ার টেবিলে। সীমানা যত ক্ষুদ্র হয় আমার, বাঁধ ভাঙার প্রবল স্পৃহা তত আমাকে উন্মত্ত করে। ভেতরে এবং বাইরে দুটো আদল আমি টের পেতে থাকি আমার। একটি উৎসুক, আরেকটি নিস্পৃহ।

 

বাবা কেন ওসব করতেন, মাস কয় গেলে বুঝেছি যে বাবার ভয় ছিল আমার না আবার কারও সঙ্গে প্রেম হয়ে যায় আর লেখাপড়া ছেড়ে কোনও বখাটের হাত ধরে আমিও বাড়ি থেকে পালাই। ইস্কুল এবং বাড়ির বাঁধা গন্ডির ভেতরে আমার জীবন আটকা পড়ে রইল। ওই আটকা পড়া জীবনে রতন এসে খুশির স্রোতে আমাকে ভাসিয়েছিল ক’দিন। রতন আসত টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা গ্রাম থেকে, দাদার ঘরে ঘুমোত, বিকেলে বসত চোর পুলিশ খেলতে আমাদের নিয়ে। চোর পুলিশ খেলাটি কাগজের খেলা। ছোট ছোট কাগজে চোর, পুলিশ, ডাকাত লিখে ভাঁজ করে ছুঁড়ে দিত, যে কোনও একটি তুলতে হত। পুলিশ লেখা কাগজ তুললে আমাকে অনুমান করে বলতে হত বাকি দুজনের কে চোর অথবা কে ডাকাত। ভুল হলে ঘর ফাটিয়ে বলত ডাব্বা। রতন ডাব্বাই বলত গোল্লা পাওয়াকে। রতন বাবার এক ডাক্তার বন্ধুর ছেলে, তার জন্য বাড়িটির দ্বার বরাবরই অবারিত ছিল, থাকারই কথা, বাবা যখন অর্থকষ্টে ছিলেন, ছিলেন একসময়, আমার জন্মের আগে কখনও, ডাক্তার বন্ধুটি তাঁকে দু’হাত খুলে টাকা দিয়ে বাঁচিয়েছিলেন। আমার চেয়ে বছর দুয়েকের বড় হবে রতন। মুখে দুষ্টু দুষ্টু হাসি নিয়ে চুল উড়িয়ে শার্ট উড়িয়ে সে দৌড়োত সারা বাড়ি, সে ছিল ঘরের লোকের মত অথবা না হলেও অন্তত ভাব করত। বাড়ি এসেই গামছা হাতে নিয়ে চলে যেত গোসলখানায়, গোসল সেরে ফর্সা চেহারাকে দ্বিগুণ ফর্সা বানিয়ে কায়দা করে চুল আঁচড়ে কী খালা কি রানছেন, খেতে দেন বলে রান্নাঘরে ঢুকে যেত। মা আবার রতনের মা বুলবুলকে বড় ভালবাসতেন, রতনকে খেতে বসিয়ে বুলবুল কি এখনও আগের মত দেখতে! জিজ্ঞেস করেন মা, প্রতিবারই করেন, রতন যখনই আসে। বুলবুল দেখতে অসম্ভব সুন্দরী ছিলেন, মা বলেন। মা’কে কারও সৌন্দর্য নিয়ে এত উচ্ছঅজ্ঞসত হতে আর দেখিনি। সেই রতন আমাদের নিয়ে চোর পুলিশ খেলে, লুডু খেলে, তাসের যাদু দেখিয়ে দেখিয়ে আমার ছাদে না উঠতে পারার কষ্টকে খানিকটা কমিয়েছিল। কিন্তু সেবার যাওয়ার দিন একটি ভাঁজ করা কাগজ টেবিলে রেখে মাথায় বরাবরের মত চাটি মেরে বলল–ভাল থাকিস। গেলাম।

 

রতন তো আর হাঁটে না, তার দুর্বার গতি তাকে উড়িয়ে নেয়। রতন হাওয়া হয়ে গেলে ভাঁজ করা কাগজটি খুলে দেখি চিঠি। লিখেছে, সে আমাকে ভীষণ ভালবাসে। লিখেছে আমি যদি তাকে না ভালবাসি তবে তার জীবন একেবারেই বৃথা। এবার ৮০, আদায় লিখে চিঠি শেষ করেছে। পড়ে আমার বুক দুরুদুরু কাঁপতে লাগল। জিভ গলা শুকিয়ে গেল ভয়ে। ভাঁজ করে হাতের মুঠোয় নিয়ে, হাতের ঘামে ভিজে যাওয়া কাগজ গোসলখানায় গিয়ে আবার খুলি। ভালবাসি শব্দটির দিকে হাভাতের মত তাকিয়ে থাকি। চিঠিটি আমাকে লেখা, ভাবলে গা শিউরে ওঠে। চিঠিটি যখন রতন দিয়েছে, কেউ কি দেখেছে আড়াল থেকে! কেউ দেখলে সব্বনাশ। চিঠিটি কারও হাতে কখনও পড়লে সব্বনাশ। আমার পায়ে পায়ে সব্বনাশ হাঁটে। আমার শ্বাসে শ্বাসে সব্বনাশ। চিঠিটি ছিঁড়ে ফেললে দুর্ভাবনা দূর হবে, কিন্তু ছিঁড়তে আমার ইচ্ছে করে না। থাকুক এটি। থাকুক ইতিহাস বইয়ের ভেতর, বালিশের তলায়, খুব গোপন জায়গায় চিঠিটি বেঁচে থাকুক। দোমড়ানো কাগজটিকে আগলে রাখি ঠিকই কিন্তু রতনের জন্য আমার কোনও ভালবাসা জন্মায় না, জন্মায় কেবল চিঠিটির জন্য।

 

চিঠিটি বাবা আবিষ্কার করেন অল্প কিছুদিন পরই। তিনি, আমি যখন ইস্কুলে, বাড়িতে আমার বইপত্র ঘেঁটে দেখেছেন লেখাপড়া কি রকম করছি আমি, বইয়ের কত পৃষ্ঠা অবদি পড়ার দাগ আছে, খাতায় কতদূর কি লেখা হয়েছে, অঙ্ক কষার নমুনাই বা কেমন, এসব। ঘাঁটতে গিয়ে চিঠিটি হাতে পড়ে তাঁর। আমাকে তিনি ভাল মন্দ কিছু বলেননি। কেবল টাঙ্গাইলে চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর ডাক্তার বন্ধুকে, রতন যেন কোনওদিন তাঁর বাড়ির ধারেকাছে না আসে।

 

রতন না এলে আমার বয়েই গেল। মনে মনে বলি।

 

বাবার বন্ধুটি অপমানিত হয়েছেন বলে বন্ধুটির জন্য, যাঁকে কোনওদিন চোখে দেখিনি, মায়া হতে লাগল। নিজেকেও দেখলাম কুণ্ঠিত হতে, যেন সকল অপরাধ আমার। যেন রতন যে আমাকে চিঠি লিখেছে এর সব দায়ভার আমার। সব পাপ আমার।

 

আমাকে আগলে রাখার নানা গভীর গোপন ষড়যন্ত্রে বাবা যখন ব্যস্ত, তখনই একদিন বাবা চোখে মুখে বিষম উৎকণ্ঠা নিয়ে বলেন–জিনিসপত্রের দাম বাইড়া গেছে, এখন থেইকা একবেলা ভাত, রাত্রে রুটি খাইতে হবে সবার।

 

রুটি? ভাতের বদলে? বাবা এ আবার নতুন কি তামাশা শুরু করলেন! মা গলায় ঝাঁজ মিশিয়ে বলেন–বিয়া করছে বুধয়, বউ খাওয়ানি লাগতাছে। এইদিকে শাতাইয়া ওই দিকে খাওয়াইব।

 

মা মনে হয় ভুল বোঝেন। রাস্তায় শয়ে শয়ে ভিখিরিদের হাঁটতে দেখে রিক্সাঅলাদের বলতে শুনি শহরে বানের পানির লাহান মানুষ আসতাছে গেরাম উজাড় কইরা, ফসল নাই, খাওন নাই। রিক্সার ভেতরে বসে অবাক তাকিয়ে থাকি উন্মূল উদ্বাস্তুদের দিকে। হাতে বাসন ওদের। শুকনো বাসন। দৌড়োচ্ছে গাঙিনার পাড় থেকে নতুন বাজারের দিকে। ভিখিরিদের চোখ বেরিয়ে আসছে কোটর থেকে, বুকের হাড়গুলো যেন চামড়া ফুঁড়ে বেরোবে, পেট মিশে যাচ্ছে পিঠে, যেন কঙ্কালের কাফেলা যাচ্ছে, কাফেলা থেকে পিছিয়ে পড়ে কেউ ধুঁকছে নর্দমার সামনে, কেউ ভাত ভাত বলে চেঁচাচ্ছে বড় বড় বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে। আমাদের কালো ফটকের সামনে দাঁড়িয়েও ওরা একমুঠো ভাত চায়। পান্তা


Rx Munna

446 Blog mga post

Mga komento