ফেয়ারওয়েল, ২২ নভেম্বর, ২০০৭

ফেয়ারওয়েল, ২২ নভেম্বর, ২০০৭

গতকাল সকালে ছোট একটা মিছিল

ফেয়ারওয়েল, ২২ নভেম্বর, ২০০৭

 

গতকাল সকালে ছোট একটা মিছিল বেরিয়েছিল পার্কসার্কাসে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘নন্দীগ্রাম তাণ্ডব’, ‘রিজওয়ান হত্যা’, আর ‘তসলিমা হঠাও’ নিয়ে কিছু একটা হবে। গোটা পঞ্চাশেক মৌলবী রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছিল। এরা কেউই আন্দোলনের মতলব নিয়ে এসেছে বলে মনে হয়নি। বাড়িতে ঘুমোচ্ছিল হয়তো, ঠেলে রাস্তায় নামানো হয়েছে। পুলিশ সবাইকে ভ্যানে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেছে। এদের মাতব্বরটিকেও। মাতব্বরটি ‘অল ইণ্ডিয়া মাইনরিটি ফোরাম’এর নামে প্রায়ই এ ধরনের গণ্ডগোল সৃষ্টি করার উদ্যোগ নেয়।

 

কিন্তু এর পর পরই দেখা গেল পার্কসার্কাসের এক গলি থেকে অল্প বয়সের কিছু ছেলে বেরিয়ে পুলিশের দিকে ঢিল ছুঁড়তে লাগলো। ছুঁড়ে মারতে লাগলো কোক খেয়ে কোকের বোতল, আর হিহি হাসি। পুলিশেরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের মার খেলো আর মাঝে মাঝে কাঁদানে গ্যাস ছুড়লো। লুঙ্গি আর স্যাণ্ডো গেঞ্জি ছেলেরা হুল্লোড় করতে করতে গাড়ি পোড়াতে লাগলো, বাস ট্রাক পোড়াতে লাগলো, সাংবাদিকদের ক্যামেরা ভাঙতে লাগলো। এই ভাংচুর, এই জ্বালাও পোড়াও, এই হৈ-হল্লা অনেকটা সংক্রামক, এর পেছনে কোনও উদ্দেশ্য থাকার প্রয়োজন হয় না। অনেকটা পকেটমারকে পেটানোর মতো। পিটিয়ে আনন্দ। পার্কসার্কাসের রাস্তায় পুলিশ আর গাড়ি বা কিছু চলতে দিচ্ছে না। সারা শহরে ট্রাফিক জ্যাম শুরু হয়ে গেল। দুতিনটে ছেলে গলির ভেতর কাগজে ‘তসলিমা গো ব্যাক’ লিখে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালো। কলকাতার কয়েকজন বন্ধুকে ফোনে জিজ্ঞেস করি, ‘কারা ওরা?’ প্রায় সবাই বললো, ‘ওরা জানে না তসলিমা কে, কী জিনিস, তসলিমার বই কোনোদিন পড়েনি, উর্দুভাষী অশিক্ষিত বা অল্পশিক্ষিত মুসলমান, পকেটমার, ছিচকে চোর, মুদির দোকানি, ফেরিঅলা। ওদের নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। ওদের পথে নেমে ঠিক যা যা করতে বলা হয়েছে, সব করছে ওরা। আমি হতবাক বসে থাকি। টেলিভিশনে যা দেখলাম, নীল পোশাকের অভিজ্ঞ পুলিশ র‍্যাফ নামলো, সেনা নামলো। শহরময় টহল দিল। কাফু জারি হল। আর রাতে সিপিএমএর রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বললেন, ‘তসলিমাকে নিয়ে ঝামেলা হলে তসলিমার এ শহর ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত।’

 

পুলিশের নিরাপত্তা প্রধান আগেও যেমন জানিয়েছিলেন, সেদিনও এবং পরদিনও জানালেন আমাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত একেবারে পাকা। মৌলবাদীরা আসছে আমার বাড়িতে, শুক্রবার নামাজের পর। আগেও জিজ্ঞেস করেছিলাম, এবারও করি, ওদের অ্যারেস্ট করছেন না কেন?

 

বি–অসুবিধে আছে।

 

ত–কী অসুবিধে? আপনারা আছেন, নিশ্চয়ই ওরা বাড়িতে আসার সাহস পাবে না।

 

বি–আমরা ওদের কিছু করতে পারবো না।

 

ত–কেন?

 

বি–মুসলমানদের গায়ে হাত দেওয়া যাবে না। রায়ট লেগে যাবে।

 

ত–হিন্দু মুসলমানের ব্যাপার নয়, টেরোরিস্ট হল টেরোরিস্ট। কেউ অন্যায় করলে তাকে শাস্তি দেবেন। রায়ট লেগে যাবে, এ কোনও যুক্তি হল কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার?

 

বি–রায়টের রিস্ক নিতে পারবো না। ত তাহলে কী করতে হবে?

 

বি–আপনাকে দু’দিনের জন্য জয়পুরে যেতেই হবে।

 

ত–দু’দিন?

 

বি–হাঁ, ঠিক দু’দিন।

 

ত–দু’দিনে সব ঠিক হয়ে যাবে?

 

বি–সিওর।

 

ত–জয়পুরে কেন?

 

বি–জয়পুরে লাক্সারি রিসর্ট আছে আমাদের। ওখানে দু’দিন একটু বিশ্রাম নিন। আমরা দুদিন পর আপনাকে ফেরত নিয়ে আসবো।

 

ত–আমি জয়পুর যাবোনা। আপনারা যদি আমার বাড়িতে আমাকে নিরাপত্তা দিতে পারেন, তাহলে আমি বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে শুক্রবার দিনটা কাটাই।

 

বি–কোথায়?

 

ত–বেহালায়।

 

বি–না, বেহালায় সিকিউরিটি ছাড়া আপনাকে থাকতে হবে। যেখানেই যাবেন, নিজ দায়িত্বে।

 

ত–সল্টলেকে?

 

বি–আমাদের পক্ষে সিকিউরিটি দেওয়া সম্ভব নয় সল্টলেকে। আপনার নিজ দায়িত্বে থাকতে হবে।

 

ত–আমি বেলঘরিয়া যাবো। একদিনের তো ব্যাপার। আমার পাবলিশারের বাড়ি ওখানে।

 

বি–হবে না।

 

ত–দুর্গাপুরে, বোলপুরে?

 

বি–সবখানেই আপনার সিকিউরিটির দায়িত্ব আপনার।

 

ত–আপনারাই বলছেন আমাকে মেরে ফেলার


Rx Munna

446 Blog des postes

commentaires

📲 Download our app for a better experience!