জানালার ওপারেই দাঁড়িয়ে আছে মৃত্যু

জানালার ওপারেই দাঁড়িয়ে আছে মৃত্যু

আমার চারদিকে মৃত্যু। আমি মরবো, আজনয়তোকাল

জানালার ওপারেই দাঁড়িয়ে আছে মৃত্যু

 

আমার চারদিকে মৃত্যু। আমি মরবো, আজনয়তোকাল। এই আতংক পুলিশের বড়কর্তারা আমার ভেতরে ঠেলে ধাক্কিয়ে ঢোকাতে চেয়েছেন। তাঁরা আমাকে সারাক্ষণের একটা সঙ্গী দিয়ে গেছেন বেঁচে থাকার। সঙ্গীর নাম মৃত্যু। আমার রক্তে ইনজেক্ট করে দিয়ে গেছেন মৃত্ম। আমার মস্তিষ্কের কোষের ভেতর সন্তর্পণে একটি দৃশ্য ঢুকিয়ে দিয়ে গেছেন, পাঁচ হাজার মুসলমান ঢুকে গেছে বাড়িতে, আমাকে গুলি করে মারছে, গুলি করছে সারা শরীরে। বড় বড় ছুরি বের করে মাথা কেটে নিচ্ছে, হাত পা কেটে নিচ্ছে। টুকরো টুকরো করছে আমাকে। করছে, আর উল্লাস করছে। এই দৃশ্যটি আমি সারাদিন দেখি, সারারাত দেখি। জানালায় চোখ রাখলে এখন আর আকাশ দেখি না, আমার মৃতমুখ দেখি। বারান্দায় হাসনুহানা গাছের কাছে এসে দাঁড়ালে আমি রক্তে ভেসে যাওয়া গাছ দেখি। চারদিকে কিছু আর সবুজ নয়, সব লাল। ঘোরের মধ্যে, গৃহবন্দি আমি, লিখতে থাকি মৃত্যুর কথা।

 

মৃত্যু

 

ঠিক জানালার ওপারেই দাঁড়িয়ে আছে মৃত্যু।

দরজা খুললেই চোখের দিকে কোনওরকম

সংকোচ না করে তাকাবে,

বসলে পাশের চেয়ারটায় এসে বসবে,

বলা যায় না হাতও রাখতে পারে হাতে,

তারপরই কি আমাকে হেঁচকা টান দিয়ে নিয়ে যাবে যেখানে নেওয়ার!

কোথাও বসতে, শুতে, দাঁড়াতে গেলেই আমার মনে হতে থাকে

মৃত্যু আড়াল থেকে আমাকে দেখে দেখে হাসছে।

স্নানঘরে জলের শব্দের মধ্যে মৃত্যুর শব্দ বাজতে থাকে,

চুপচাপ বিকেলে কানের কাছে মৃত্যু এসে তার নাম ঠিকানা জানিয়ে যায়,

গভীর রাতেও মৃত্যুর স্তব্ধতার শব্দে বারবার ঘুম ভেঙে যায়।

 

যেই না ঘর থেকে বার হই, পায়ে পায়ে মৃত্যু হাঁটে

যেখানেই যাই, যে রস্তি বা প্রাসাদে, মৃত্যু যায়,

ঘাড় যেদিকেই ঘোরাই, সে ঘোরায়,

আকাশ দেখি, সেও দেখে,

ভিড়ের বাজারে গায়ে সেঁটে থাকে,

শ্বাস নিই, মৃত্যু দ্রুত ঢুকে পড়ে ফুসফুসে

এত মৃত্যু নিয়ে কি বাঁচা যায়, কেউ বাঁচে?

মৃত্যু থেকে বাঁচতে আমাকে মৃত্যুরই আশ্রয় নিতে হবে,

এ ছাড়া উপায় কী?

 

.

 

 

আরও ক’দিন বাঁচতে দাও, কমাস দাও,

আরও ক’বছর দাও সোনা,

আর বছর দুয়েক, হাতের কাজগুলো সারা হলে আর না বলবো না।

 

যদি বছর পাঁচেক দাও, খুব ভালো হয়।

দেবে তো? কী এমন ক্ষতি তোমার করেছি,

মৃত্যুর বিরুদ্ধে কোনও শব্দ উচ্চারণ করিনি,

একটি অক্ষরও কোথাও লিখিনি কোনওদিন!

বছর পাঁচেকে কতটুকু আর পারবো জমে থাকা কাজের পাহাড় নামাতে!

সাত আট বছর পেলে হয়তো চলে

চলে বলবো না, চালিয়ে নেব। চালিয়ে তো নিতেই হয় কাউকে না কাউকে।

দশ হলে মোটামুটি হয়। দশ কি আর দেবে তুমি সোনা?

তোমারও তো জীবন আছে, তুমি আর কতদিন বসে বসে প্রহর গুনবে!

প্রহর যদি গোনোই কিছুটা, যদি রাজি হও,

তবে শেষ কথা বলি, শোনো, দশ যদি মানো, তবে

দু’বছর কী আর এমন বছর, দিলে বারো বছরই দিও,

 জানি দেখতে না দেখতে ওটুকুও ফুরিয়ে যাবে।

জানি না কী! বছর বারো আগেই তো তার সাথে দেখা হল,

এখনও মনে হয় এই সেদিন, এখনও যেন চোখের পাতা ফেলিনি,

এখনও তাকিয়ে আছি, বারো বছর কী রকম মুহূর্তে কেটে যায়, দেখেছো?

ও মরণ, ও জাদু, ভালোবেসে পনেরো কুড়িও তো দিতে পারো,

ও-ও দেখতে না দেখতে কেটে যাবে দেখো।

বছর পেরোতে কি আর বছর লাগে?

 

আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছো,

কী থেকে কী হয় কে জানে!

স্বাধীনতা থাকলে কী আর ভিক্ষে করতাম দিন!

যত খুশি যাপন করা যেত।

এখন চাইলেই কেউ তো আর বাঁচতে দিতে রাজি নয়।

তুমিও ছড়ি উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকো গায়ের ওপর,

এখন কিছুই আর আগের দিনের মতো নেই। তুমিও তো বাঁচতে চাও,


Rx Munna

446 Blog Mesajları

Yorumlar