নিজেকে সঁপে দিয়েছিলে

নিজেকে সঁপে দিয়েছিলে আমার কাছেই। আর আমি তোমাকে কী করলাম মা? তলপেটের বাঁ দিকে তোমার

নিজেকে সঁপে দিয়েছিলে আমার কাছেই। আর আমি তোমাকে কী করলাম মা? তলপেটের বাঁ দিকে তোমার ব্যথা নিয়ে গেলাম বাড়ির কাছের বাজারের ভেতরে একটা ছোটখাটো ডাক্তারখানায়। ডাক্তার তোমার পেটের ওদিকটায় চাপ দিতেই তুমি কঁকিয়ে উঠলে। ডাক্তার তোমাকে পাঠালো আলট্রাসোনোগ্রাম করতে। ঠিক একইঞ্চি জায়গা বলে দিয়েছে ওই পরীক্ষাটা করতে। ইঞ্চি মেপে দেয় তো ওরা। ওরা মেপে সব কিছু করে। সুয়েনসন রান্না করতে গেলে যেমন মেপে চাল দেয়, বা জল দেয়, বা দুধ ঢালে। রান্নাঘরে এদের মশলা পাতি মাপার জন্য যেমন দাঁড়িপাল্লা থাকে, কাপ গেলাসেও মিলিলিটার ডেসিলিটারের দাগ বসানো থাকে। যে নার্স তোমার পেটের ওইইঞ্চি বা সেন্টিমিটারের জায়গাটুকুতে আন্ট্রাসোনোগ্রাম করছিল, তোমার মনে আছে কিনা জানি না আমি বলেছিলাম যন্ত্রটা আরেকটু এদিক ওদিক ঘোরাতে, দেখছেই যখন পেটের আরও কিছু জায়গা দেখে নিক। না, ডাক্তারের মাথায় কিডনি, শুধু কিডনিই দেখতে বলেছে। কিডনির এলাকার বাইরে এক সুতোও যাবে না নার্স। দেখা গেল কিডনি ভালো। ডাক্তারের ওই ছোট মাথায় শুধু ডায়বেটিস ছিল। ডায়বেটিসের কারণে কিডনি নষ্ট হতে পারে, তাই কিডনি দেখতে চাওয়া। তোমার রক্ত পরীক্ষায় নিশ্চয়ই কিডনি ভালো থাকার প্রমাণ ছিল। কতটুকু অশিক্ষিত হলে ডাক্তার কিডনিই শুধু দেখতে পায়। তুমি ব্যথায় উঁ করে উঠেছিলে, যখন ডাক্তার তোমার ওই তলপেটের বাঁদিকে চাপ দিয়েছিল। ডাক্তারের মাথায় গোবর না থাকলে মেপে দিত না ইঞ্চি। বলতো, পুরো পেটের আলট্রাসোনোগ্রাম করে নিয়ে এসো। তাহলেই তো ধরা পড়তো তোমার ওই ভয়ংকর অসুখটা, মা। আর, আমার মাথায় কী ছিল? বর্ণবাদ ছিল ঠাসা। না থাকলে আমি ডাক্তারের নির্বুদ্ধিতাকে গ্রহণ না করে নিজে আমি পয়সা দিয়ে তোমার পেটের পরীক্ষাটা করাতাম। পয়সা দিলে কী না হয়! একটা নিয়ম আছে জানি, ছোট ডাক্তারের কাছে আগে যেতে হয়, অসুবিধে দেখলে ছোট ডাক্তার পাঠিয়ে দেবে বড় ডাক্তারের কাছে। কিন্তু আমার ছোট ডাক্তার যদি অসুবিধেটা না বোঝে, তবে তো দায়িত্বটা নেওয়া উচিত ছিল আমার। কিন্তু আমি তো নিইনি মা। ছোট ডাক্তার বলে দিল কিডনি ঠিক আছে, কিচ্ছু হয়নি। তোমাকে আঁশ আছে এমন খাবার খেতে না করে দিল। ব্যস, শাক সবজি বন্ধ। তোমাকে শুধু মাছের সুপ গেলানো হচ্ছে। তুমি খেতে পারতে না ওইসব সামুদ্রিক মাছ। খেতে ইচ্ছে করতো না ওসব দুর্গন্ধ জিনিস। কিন্তু কী করবে মা, পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশে, বিদ্যাবুদ্ধির বিশেষজ্ঞ সাদা ডাক্তারদের চিকিৎসার সুবিধেপাচ্ছো, তোমার মতো ভাগ্যবতী কে আছে বলো। তোমাকে বলতাম আমি। মাছের সুপ খাইয়ে তোমাকে আমি বলতাম, নিশ্চয়ই এখন ওই ব্যথাটা তোমার জন্মের মতো গেছে। তুমি মলিন হাসতে। মাথা নেড়ে বলতে, এখনও আছে। এখনও আছে? বাজে কথা বলছো কেন? আমার অবিশ্বাস দেখে মনে মনে নিশ্চয়ই তুমি দীর্ঘশ্বাস ফেলতে। অথবা একা একা নিচের ওই খুপরি ঘরটায় গিয়ে কাঁদতে। সারাদিন না খেয়ে থাকলেও, তিনবেলা ইনসুলিন নিলেও তোমার ব্লাড সুগার যেমন উঁচুতে তেমন উঁচুতেই। এসবের কোনও কারণ জানার ইচ্ছে ওই সাদা ডাক্তারের হয়নি। তোমার বমি হয়ে যেত মাছের সুপ খেতে গিয়ে। ধমক দিয়ে বলতাম–এসবই তোমাকে খেতে হবে। এসব খেলেই তোমার অসুখ সারবে। তুমি নিশ্চয়ই ভয় পেতে আমাকে, তোমার অসুখের কিছুই বুঝতে পারেনি ডাক্তার–এ কথাটা বলতে ভয় পেতে। ভয় তোমার আমি বিরক্ত হব, আমার শান্তি নষ্ট হবে। তোমার মতো ক্ষুদ্র তুচ্ছ মানুষ আমার মতো বিশাল বিখ্যাতর শান্তি নষ্ট করলে চলবে কেন! তুমি আমাকে বললে না যে তোমার কোনও কষ্ট আর আছে, বললে না ব্যথাটা আছে। কিন্তু পেটে হাত রেখে যখন সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে, লক্ষ করে বলতাম, কী ব্যাপার, পেটে হাত কেন? ব্যথা এখনও আছেনাকি? তুমি অপ্রস্তুত হতে। ওষুধ দিয়েছে ডাক্তার ব্যথা কমার, সুপ খেতে বলেছে, ফাইবার বন্ধ। তারপরও ব্যথা না কমার তো কোনও কারণ নেই। মানে, দোষটা ডাক্তারের নয়, চিকিৎসার নয়, দোষটা ওষুধের নয়, দোষটা ফিস সুপের নয়, দোষটা তোমার। তোমার শরীরের। তোমার শরীর নিয়ে, তোমার নিজেকে নিয়ে তোমার কুণ্ঠার শেষ ছিল না। ওই দূর নির্বাসনে তুমি আমাকে আর অস্বস্তি দিতে চাওনি। তাই নিজের রোগশোক লুকিয়ে রাখতে। বলতে না যে কমোড ভরে যায় রক্তে। বলতে না, কারণ এসেই তোমার ডায়বেটিসের দুশ্চিন্তা আমাকে দিয়েছো, পেটের ব্যথার সমস্যা দিয়েছে। ডাক্তারের কাছে দৌড়োদৌড়ি করেও না কমানো যাচ্ছে তোমার ডায়বেটিস, না পেটের ব্যথা। আবার যদি রক্তপাতের সমস্যার কথা বলো, তাহলে পাগল হয়ে যাবো। তাই বলোনি মা। তাই গোপন রেখেছিলে ওই সমস্যা। তুমি বেশ বুঝতে পারছিলে, ওই রক্তপাতের সঙ্গে তোমার ওই ভয়ংকর অসুখের কোনও সম্পর্ক আছে আর ওই ভয়ংকর অসুখের সঙ্গে তোমার পেটের ব্যথাটিরও সম্পর্ক আছে। ডায়বেটিস আর কিডনি আর ফাইবার আর ফিস সুপ এসবঅহেতুক, এসব অনর্থক। কিন্তু আমি যেহেতু তোমার বলার পরও বুঝতে পারছি না, অথবা বুঝতে চাইছি না, তুমি আর যাই করো, শরীরের সমস্যার কথা বলে আমাকে বিপর্যস্ত করোনি। সাদায় আমার ভক্তি ছিল, তোমার কাছে সাদা-কালো-বাদামি মানুষ হিসেবে সবাই সমান ছিল। সাদা দেখলে তুমি ভক্তি শ্রদ্ধায় মাথা নোয়াতে না। সাদা ডাক্তাররা যে তোমার অসুখটা খুঁজে পায়নি, তা আমি বুঝিনি, তুমি বুঝেছিলে। তোমাকে কষ্ট কি কম দিয়েছি মা! পাড়ার ছোট ডাক্তার রক্ত পরীক্ষা করতে ক্যারোলিন্সকা হাসপাতালে


Rx Munna

446 Blog Beiträge

Kommentare