খালি খালি লাগে’ বইটিও উৎসর্গ করেছি তোমাকে। উৎসর্গ পাতায় লিখেছি। তাকে, যাকে ভালবাসার কথা ছিল, অথচ বাসিনি। এই বইতেও লিখেছি কিছু কবিতা, তোমাকে মনে করে। কিছুক্ষণ থাকো’ নামে আরও একটি কবিতার বইপরে লিখেছি, ওতেও আছে কিছু তোমাকে নিয়ে। কবিতা পড়তে তুমি তো খুব ভালোবাসতে। জানি না, কী করে তোমার সময় কাটে, চিঠি যদি পড়তে না চাও, পড়ো না, সম্ভব হলে শুধু কবিতাগুলো পড়ো।
.
যদি হত
এরকম যদি হত তুমি আছ কোথাও, কোথাও না কোথাও আছ, একদিন দেখা হবে,
একদিন চাঁদের আলোয় ভিজে ভিজে গল্প হবে অনেক, যে কথাটি বলা হয়নি, হবে
যে কোনও একদিন দেখা হবে, যে স্পর্শটি করা হয়নি, হবে
আজ হতে পারে, পরশু, অথবা কুড়ি বছর পর, যে চুমুটি খাওয়া হয়নি, হবে
অথবা দেখা হবে না, কুড়ি কেটে যাচ্ছে, দু কুড়িও
তুমি আছ কোথাও, ভাবা যেত তুমি হাঁটছ বাগানে, গন্ধরাজের গন্ধ নিচ্ছ
গোলাপের গোড়ায় জল দিচ্ছ, কামিনীর গা থেকে আলগোছে সরিয়ে নিচ্ছ মাধবীলতা,
অথবা স্নান করছ, খোঁপা করছ, দু এক কলি গাইছ কিছু
অথবা শুয়ে আছ, দক্ষিণের জানালায় এক ঝাঁক হাওয়া নিয়ে বসেছে লাল-ঠোঁট পাখি,
অথবা ভাবছ আমাকে, পুরোনো চিঠিগুলো ছুঁয়ে দেখছ, ছবিগুলো।
গা পোড়া রোদ্দুর আর কোথাকার কোন ঘন মেঘ চোখে বৃষ্টি ঝরাচ্ছে তোমার ..
অথবা ভাবা যেত আমি বলে কেউ কোনওদিন কোথাও ছিলাম তুমি ভুলে গেছ,
তবু ভাবা তো যেত।
.
বেঁচে থাকা
।একটি কফিনের ভেতর যাপন করছি আমি জীবন
আমার সঙ্গে একশ তেলাপোকা
আর কিছু কেঁচো।
যাপন করছি জীবন, যেহেতু যাপন ছাড়া কোনও পরিত্রাণ নেই
যেহেতু তেলাপোকাঁদেরও যাপন করতে হবে, কেঁচোগুলোকেও
যেহেতু শ্বাস নিচ্ছি আমি, তেলাপোকা আর কেঁচো
যেহেতু শ্বাস ফেলছি, বেঁচে থাকছি
বেঁচে থাকছি যেহেতু বেঁচে থাকছি।
একটি কফিনের ভেতর কিছু প্রাণী
পরস্পরের দিকে বড় করুণ চোখে তাকিয়ে আছি
আমরা পরস্পরকে খাচ্ছিপান করছি
এবং নিজেদের জিজ্ঞেস করছি, কী লাভ বেঁচে!
না আমি না তেলাপোকা না কেঁচো কেউ এর উত্তর জানি না।
.
স্মৃতিরা পোহায় রোদ্দুর
।কেউ আর রোদে দিচ্ছে না লেপ কাঁথা তোষক বালিশ
পোকা ধরা চাল ডাল, আমের আচার
দড়িতে ঝুলছে না কারও ভেজা শাড়ি, শায়া
একটি শাদা বেড়াল বাদামি রঙের কুকুরের পাশে শুয়ে মোজা পরা
কবুতরের ওড়াওড়ি দেখছে না, কেউ স্নান করছে না জলচৌকিতে বসে তোলা জলে।
কোনও কিশোরী জিভে শব্দ করে খাচ্ছে না নুন লংকা মাখা তেঁতুল