তুমি অন্য ঘরে

অন্য ঘরে, আর তোমাকে লুকিয়ে এ ঘরেহইরই চলছে। ধর্মের বারোটা বাজাচ্ছি সবাই।

সবকিছুর মধ্যে একদিন শুনি

অন্য ঘরে, আর তোমাকে লুকিয়ে এ ঘরেহইরই চলছে। ধর্মের বারোটা বাজাচ্ছি সবাই।

 

সবকিছুর মধ্যে একদিন শুনি গুঞ্জন। বাবা আর দাদার গুঞ্জন। হঠাৎ সেই কথোপকথন আমার কানে যেতেই শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।

 

হিসেব আছে?

 

কিসের?

 

আমেরিকা থেকে আসার পর মাস কটা গেল..?

 

তিন মাস তো কালকে পূর্ণ হল।

 

কিন্তু কোনও তত লক্ষণ নেই কিছুর।

 

হ্যাঁ দিব্যি তো হাঁটছে, চলছে।

 

মনে হয় শরীরে আগের চেয়ে আরও জোর পেয়েছে।

 

ডাক্তার তো বলেছিলো তিন মাসের কথা।

 

কিন্তু তিন মাস তো পার হয়ে গেল।

 

ডাক্তার কি ভুল বলেছে?

 

ডাক্তারের হয়তো ভুল হয়েছে কোথাও।

 

কিন্তু ভুল হওয়ার তো কথা নয়। বড় ডাক্তার।

 

দিব্যি সুস্থ।

 

তবে কি সেই সিপিটি ওষুধটা কাজ করেছিলো, যেটা কাজ করেনি বলে ভাবা হয়েছিল?

 

আমিও হয়তো ভেতরে ভেতরে দিন গুনছিলাম। আমার মতো অন্যরাও তবে গোপনে দিন গুনছিলো! তিন মাস পরও তোমাকে সুস্থ দেখাচ্ছে। বললে মাছ ভাত খাবে, টেবিলে বসে আর সবার সঙ্গে খেলেও। এ কি সবাইকে স্বস্তির নিঃশ্বাস দিচ্ছে, নাকি অস্বস্তির দীর্ঘশ্বাস দিচ্ছে। কথোপকথনে হঠাৎ ঢুকেপড়ি আমি। বাবা আমাকে কাছে টেনে নিয়ে বললো, ফিসফিস করে, মনে হয় ওই ইনজেকশানটা কাজ করেছে।

 

কোন ইনজেকশান? ওই যে ওই সিপিটি।

 

না, ওই ইনজেকশান অনেকগুলো নিতে হয়। কোর্স তো শেষ হয়নি। আর, ইনজেকশান মার শরীরে উল্টে প্রতিক্রিয়া করেছে।

 

তাহলে যে..

 

কী?

 

খেলোও তো আজকে রীতিমত আমাদের মতো..

 

তোমার মৃত্যু এবং হঠাৎ মাঝপথে তোমার সুস্থ হয়ে ওই ওঠার আলোচনায় একসময় বড় মামা, ফকরুল মামা, ঝুনু খালাও যোগ দেয়। আমার দিকে আলোচনার মাঝখানে তাকায় কজন, আমার মনে হয় ওই চোখে কোনও সংশয় আছে, আমি কি তাহলে ঠিক বলেছিলাম ওই তিন মাসের কথা! অর্থাৎ ডাক্তার কি সত্যিই আমাকে তিন মাসের কথা বলেছে, নাকি আমি বানিয়ে বলেছি! আমার ভয় হয় মা। এই আলোচনার অর্থ কি আমি বুঝে নেবো, সবারই খুব ভালো লাগছে যে তুমি সুস্থ হয়ে উঠছো? যে সিপিটি ইনজেকশনের ষোলোটার মধ্যে একটা নিয়েই তুমি মরতে বসেছিলে, বাকিপনেরোটা তোমার নেওয়াই হয়নি, সেই একইনজেকশন যে কোনও কারণেই কাজ করেছে ভেবে সবাই আহ্লাদিত? নাকি ভেতরে ভেতরে সবাই ভাবছে, তুমি মরতে সময় বেশি নিয়ে নিচ্ছে। আমার ভয় হয় ভাবতে যে আমরা, আমি, দাদা, আর বাবা ভাবছি তুমি তোমার নির্ধারিত সময়ের বাইরে চলে যাচ্ছো। আমরা কি এখন আঙুলের কড়ায় একটি একটি করে দিন গুনতে থাকবো! ওই ভরা আসরে আমার একবার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, তোমরা কি আশংকা করছো যে মা মারা যাচ্ছে না, বা যাবে না? দুশ্চিন্তার কিছু নেই, মা মারা, যাবে। তোমরা দুঃখ করো না, মা মারা যাবে।

 

.

 

একটা সময় আমি লক্ষ করলাম আমি সারাদিন ইন্টারনেটে সময় কাটাচ্ছি। বিদেশে চিঠি লিখছি। নভোকভের লোলিতা বইটা সঙ্গে ছিল আমার। সেটাও সবটা পড়ে শেষ করে ফেললাম। খুব দ্রুত পড়িনি, ধীরে ধীরেই পড়েছি। কোনও পর্বভালো লাগলে দুতিনবার পড়েছি। এত সময় যদি বইকে দিই, তবে তোমাকে কী দিয়েছি! তোমাকে সময় যদি দিয়েই থাকি, তবে বই পড়ার সময় কী করে পেলাম! বই তো পরেও


Rx Munna

446 Blog postovi

Komentari

📲 Download our app for a better experience!