ইতি তোমার আদরের নাসরিন

যতই বলি না কেন যে বাবা তার জীবনের শেষ সময়ে চরম নিষ্ঠুরতা করে গেছে তার দুই কন্যার সঙ্গে, অ

যতই বলি না কেন যে বাবা তার জীবনের শেষ সময়ে চরম নিষ্ঠুরতা করে গেছে তার দুই কন্যার সঙ্গে, অসম্ভব অপমান করেছে দুই কন্যাকে, বাবার জন্য তবু আমার কষ্ট হয়। তার পরও বাবার না থাকা আমাকে কাঁদায়। বাবা কবে থেকে নেই? মনে নেই। হয়তো দুহাজার এক বা দুই সাল হবে। তোমার আর বাবার ক্ষেত্রে মারা গেছে এই শব্দ আমি উচ্চারণ করি না কখনও। আমি পারি না। এরমধ্যে একদিন বাংলাদেশের একপুরোনোপরিচিতর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। কথায় কথায় আমার ভাই বোন কে কেমন আছে প্রশ্ন ওঠায় বলেছিলাম, বাবা তো সব সহায় সম্পত্তি ছেলেদের নামে উইল করে দিয়ে গেছে। যার সঙ্গে কথা বলছিলাম, শুনে তাজ্জব, বলে, বাংলাদেশের ইসলামি আইনে তো উইল চলে না? চলে না? না চলে না। সমস্ত সম্পত্তির তিন ভাগের একভাগ শুধু লিখে দিতে পারে কাউকে, তাও আবার উত্তরাধিকারীদের অনুমতি নিয়ে। তাছাড়া সম্পত্তি লিখে দেওয়ার বা উইল করার নিয়ম নেই। ছোটদাকে একদিন বলেছিলাম, তুমি কি জানো যে বাংলাদেশে উইল চলে না? বললো, জানি। তাহলে বাবার উইলটা তো অবৈধ। ছোটদা বললো, তোরা মেনে নিলে বৈধ, না মেনে নিলে অবৈধ। আমি বললাম, আমরা তো মেনে নিইনি এই উইল, তাহলে সম্পত্তি ভাগ করার ব্যবস্থা করো। ছোটদা বললো, সম্পত্তি ভাগ আমরা করবো না, বাবা যা দিয়ে গেছে আমাদের, তা নেব। বললাম, আইনের আশ্রয় যদিনিই? ছোটদা বললো, নে, দেখি কী করে নিতে পারিস। ছোটা এবং দাদা জানে যে আমার পক্ষে দেশে ফেরা সম্ভব নয়। আর ইয়াসমিনের সেই মানসিক সবলতা বা সুস্থতা নেই যে ভাইদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। অগত্যা আর সব দুর্ভাগা মেয়েরা বাংলাদেশে যেভাবে বঞ্চিত হয়, আমাদেরও তেমন ভাবেই বঞ্চিত হতে হবে। কিন্তু যে আমি সমানাধিকারের পক্ষে এতকাল লড়াই করে এসেছি, মেয়েদের বিরুদ্ধে সমাজের আর আইনের যে অন্যায় চলে, তার প্রতিবাদ করে এসেছি সেই অন্যায় যখন নিজের পরিবারে, নিজের জীবনে, তখন আপোস করবো? আপোস যদি করি, তাহলে আমার বিশ্বাসের সঙ্গে আমার নিজেরই প্রতারণা করা। না, মা, সম্পত্তির লোভ আমার নেই। পরিবারের সবার জন্য আমার উপার্জিত টাকার সিংহভাগ আমি খরচ করেছি ইচ্ছে করেই করেছি, ভালোবেসে করেছি। কিছু পাওয়ার আশায় করিনি। কিন্তু যাদের জন্য জীবন দিই, তারাই যখন পেছন থেকে পিঠে ছুরি বসানোর পরিকল্পনা করে, এবং বসায়, তখন চমকে উঠি। বিশ্বাস হতে চায় না রূঢ় নিষ্ঠুর বাস্তব।

 

ছোটদার সঙ্গে আরও কথা বলার পর যা বুঝেছি তা আরও ভয়ংকর। আমার টাকা পয়সার ওপর, সে মনে করে, তার অধিকার একশ ভাগ। কারণ আমার স্বামী নেই, সন্তান নেই, তার মানে আমার ‘সংসার’ নেই, এবং আমি যেহেতু পুরুষ নই, মেয়ে, আমার টাকায় আমার ওপর আমার যত অধিকার, ভাইদের অথবাপুরুষ আত্মীয়দের তার চেয়ে অনেক বেশি অধিকার। সুতরাং আমার যা কিছু আছে, তা আসলে ছোটদার। আমি মরে গেলে আমার সব সে পাবে। আর স্বামী সন্তানহীন সংসারহীন বেঁচে থাকা মানে তো ঠিক বেঁচে থাকা নয়, তাই আমি বেঁচেও মৃত, আর যে দেশে আমার জন্ম বড় হওয়া, যে দেশে আমার সম্পদ সম্পত্তি এখনও বর্তমান, সে দেশেই যেহেতু আমি বেঁচে থাকা অবস্থায় উপস্থিত থাকতে পারবো না, তাই বিদেশের বরফে ডুবে থাকা আর মরে থাকা ওই একই কথা। বাবার উত্তরাধিকারী হওয়ার যোগ্য আমি নই।

 

তুমি যদি এই নিষ্ঠুর পৃথিবীটায় থাকতে, তবে সইতে পারতে এই অন্যায়! পারতে না। তোমার স্বামী পুত্রদের এই অনাচার আর অবিচারের বিরুদ্ধে তুমি মুখর হতে। নিশ্চয়ই হতে। কতই বা আর লড়াই করার ক্ষমতা ছিল তোমার! জানি তুমি কষ্ট পেতে, বাকি জীবনভর কাঁদতে। কেঁদে তো জীবনে কিছুই অর্জন করতে পারোনি। রাগ করে, চেঁচিয়েও তো কিছু করতে পারোনি। তোমার চিৎকার অবকাশের চার দেয়ালের ভেতর ধাক্কা খেয়ে খেয়ে তোমার কাছেই ফিরে এসেছে। তোমার চোখের জল নদী হয়ে হয়ে তোমাকেই ভাসিয়েছে, ডুবিয়েছে।

 

মা, আপন আসলে কাঁদের বলবো মা? ভাইরা কি আপন? কী করে ছোটদাপারলো তার যে বোনটা দেশে ফিরতে পারছে না, তার বাড়িতে থেকে তারই সর্বনাশ করতে? তুমি যতদিন ছিলে, আমার যা কিছু সব যত্ন করে রেখেছিলে। ছোটদাকে তুমি খুব ভালোবাসতে বাসতে তো মা। আমার বাড়িতে ছিলে একসঙ্গে। কী হিসেবে ছিলে মা? ছোটদার দাসী হিসেবে, তাকে খাওয়ানো


Rx Munna

446 Blog Postagens

Comentários

📲 Download our app for a better experience!