অতলে অন্তরীণ – ০৫

আট জুন, বুধবার

যে ঘরটিতে আমাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে, সে ঘরটিতে একটি জানালা আছে,

আট জুন, বুধবার

 

যে ঘরটিতে আমাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে, সে ঘরটিতে একটি জানালা আছে, জানালাটি বন্ধ। ঘরে কোনও পাখা নেই। জুন মাসের গা সেদ্ধ করা গরম। সারারাত গরমে ঘামি, ছটফট করি, উঠে বসি, আবার শুই। মশা ভনভন করছে, কামড়াচ্ছে। অন্ধকারে এপাশ ওপাশ করছি, জলতেষ্টায় কাতরাচ্ছি, কোথায় আলো পাবো, জল পাবো, একটি হাতপাখা পাবো, জানি না। এক রাতেই ঘামাচিতে ভরে গেছে পুরো মুখ। মশার কামড়ের লাল লাল দাগ হাতে পায়ে গালে গলায়। সকালে এককাপ চা খাবার তৃষ্ণায় অস্থির হই। কিন্তু কোথায় পাবো চা! এ বাড়িতে চায়ের চল নেই। চ সকালেই তাঁর চার বছর বয়সী কন্যাটিকে নিয়ে বেরিয়ে গেছেন, ওকে ইশকুলে ছেড়ে দিয়ে তিনি আপিসে যাবেন। বিকেলে বা সন্ধ্যায় ফিরবেন। চর স্বামী ঢাকার বাইরে থাকেন। এ বাড়িতে চ তাঁর কন্যা নিয়ে থাকেন, বাড়ির কাজ কর্ম করার জন্য দশ এগারো বছর বয়সী বল্টু নামের একটি ছেলে আছে। বল্টু রান্না বান্না করে খেয়ে দেয়ে খাবার ঘরে বসে থাকবে। আমি ঘরের দরজা বন্ধ করে পাখাহীন ঘরটিতে বসে থাকব। পেচ্ছ!ব পায়খানায় যেতে হলে আশপাশ দেখে নিয়ে মাথায় কাপড় চোপড় দিয়ে নিজেকে যতটা সম্ভব অচেনা করে ঢুকে যাবো। যদি ক্ষিধেয় মরে যেতে থাকি, কিছু খাবার পেটে না দিলেই নয়, তবে, টেবিলে, আশেপাশের বাড়ির বারান্দা বা জানালা থেকে কেউ কোনও রকম ছিদ্র দিয়েও যেন আমাকে দেখতে না পায় এমন ভাবে বসতে হবে, খেতে হবে। হাঁটাচলা করতে হবে নিঃশব্দে, যেন নিচের তলার লোকেরা টের না পায় যে এ বাড়িতে একটি মানুষ হাঁটছে। মাথার কাপড় যেন কখনও না খসে আমার, বল্টুর যেন কোনও সন্দেহ না হয় যে আমি চর কোনও দূর সম্পর্কের আত্মীয় নই, আমার স্বামী মারা যায়নি, আমি শহরের আত্মীয়দের কাছে অর্থ সাহায্যের জন্য আসিনি। বল্টুর সঙ্গে চোখাচোখি মুখোমুখি পারতপক্ষে না হলে ভাল। সদর দরজায় হঠাৎ বাইরে থেকে তালা পড়লে এখন সন্দেহ জাগবে। বল্টুর তো জাগবেই, প্রতিবেশিদেরও জাগবে। সুতরাং যা চ আগে করছিলেন, তাই করেছেন, শোবার ঘরে তালা দিয়ে গেছেন। খোলা শুধু রান্নাঘর আর গরম ঘরটি, আর এক চিলতে খাবার ঘর নামক জায়গাটি। সকাল পার হতে থাকে, চা পাওয়া হয় না, কিন্তু মাথায় লম্বা ঘোমটা টেনে, যেন গহীন গ্রামের লজ্জাশীলা ফুলবিবি, দুটি রুটি আধা চিবিয়ে আধা গিলে গরমে সেদ্ধ হতে চলে আসি জানালা বন্ধ ঘরটিতে। টেলিফোনের লেজটি বেরিয়ে এসেছে চর শোবার ঘরের দরজার তল দিয়ে। খাবার ঘর থেকে সরিয়ে ফোনটি শোবার ঘরে বন্দি করা হয়েছে। যেন আমি শিশু, আমার নাগাল থেকে কাচের বাসন কোসন সরিয়ে রাখা হচ্ছে। তা হোক, আমি তো অনেকটা শিশুই এখন, অন্যের ওপর নির্ভর করে আছি সব কিছুর জন্য। কোথায় সেই স্বাধীনচেতা মানুষটি! মানুষটির দিকে এখন তাকাতে পারি না। কী হচ্ছে দেশে, জামিন কবে পাবো, কবে মুক্তি পাবো এই লুকিয়ে থাকা থেকে! কিছুই জানি না। সম্ভবত কোনও জামিন আমার হবে না, সম্ভবত আমাকে ছুঁড়ে ফেলা হবে কারাগারে। এই কারাগারের মত বাড়িটিতে সম্ভবত আমার একরকম মহড়া চলছে সত্যিকার কারাগারে থাকার।

 

সকালেই ঙ আসেন। এসেই খাবার ঘরের জানালর কাছে দাঁড়িয়ে বাইরের চারদিক দেখে আবিষ্কার করেন যে পাশের তিনতলা বাড়িটির বারান্দা থেকে এ বাড়ির খাবার ঘরটি চাইলেই কেউ দেখতে পারে। একটি পর্দা টাঙিয়ে দেবেন কী না জানালায় তা নিয়ে ভাবেন। কিন্তু আবারও ভাবেন যে হঠাৎ করে পর্দা


Rx Munna

446 Blog Mensajes

Comentarios

📲 Download our app for a better experience!