পনেরো জুন, বুধবার
ঙ আসেন ছর বাড়িতে। ঙ ছকে চেনেন ভাল করে। একসময় তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠী ছিলেন। ছ ঙকে তাঁর ঘরে নিয়ে সেই তাঁদের আগের সময়ের গল্প করেন। দীর্ঘক্ষণ। এত জোরে কথা বলেন ছ যে আমার ঘর থেকে সেসব কথা শোনা যায়। ঙ কি বলছেন, তা শুনতে চেয়েও পারি না, ঙর স্বর অনেক খাদে। ছর গল্পের মধ্যে খানিকটা ফাঁক পেয়ে ঙ আমার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চান ছর কাছে। অনুমতি পেলে ঙ আমার ঘরে ঢোকেন। ঙকে দেখে কি যে ভাল লাগে আমার! একদমে জিজ্ঞেস করি, জামিনের খবর কি কিছু জানেন? ক কি জানেন জামিন হবে কি না? উকিলের কাছে ক বা আপনি কেউ গিয়েছিলেন? মৌলবাদীদের এই উত্থান ঠেকাতে কোনও দল কি পথে নামবে না? কর কাছে কি আমার দাদারা কেউ গিয়েছিলেন? আমার বাড়ির মানুষগুলো কি বেঁচে আছে? আমার উকিল কি আশা ছেড়ে দিয়েছেন? জনকণ্ঠের সাংবাদিকদের তো জামিন হয়েছে, আমার হবে না কেন?
ঙর কপালে বিন্দু বিন্দু দুশ্চিন্তা। ঙ আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি, কেবল বললেন, এই সময়ে কি করা উচিত আমাদের, কিছু বুঝতে পারছি না। জামিনের ব্যাপারে তোমার উকিল এখনও এগোতে পারছেন না।
হঠাৎ ছ চিৎকার করে ঙকে ডাকলেন। ঙকে আমার ঘর ছাড়তে হল। ছ চা খেতে ডেকেছেন ঙকে। ও ঘরে চা বিস্কুট দেওয়া হয়েছে। আমার খুব ইচ্ছে করছিল ছর ঘরে আমিও যাই, কিন্তু আমাকে না ডাকলে আমার যে ওঘরে ঢোকা উচিত হবে না। আমি একটি ডাকের অপেক্ষায় থাকি। অপেক্ষায় থাকি ঙ আবার আমার ঘরে ঢুকবেন। অপেক্ষার অস্থিরতা একবার আমাকে বিছানা থেকে উঠে চেয়ারে বসায়, চেয়ার থেকে আবার বিছানায়। আধঘন্টা পার হলে ভেজানো দরজা ঠেলে ঘরে উঁকি দেন ছ, ছর ঘাড়ের পেছনে ঙর মাথা। ছ বললেন, ঙ চলে যাচ্ছেন। ঙ পেছন থেকে কেবল বললেন, যাচ্ছি তসলিমা।
ঙর কপালে তখনও বিন্দু বিন্দু দুশ্চিন্তা। আমার চোখের আকুলতাটি ঙ পড়তে পারেন। আমিও পড়তে পারি ঙর ব্যগ্রতা আমার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলার। কিন্তু পরিস্থিতি আমাদের সে সুযোগ দেয় না।
ছ কি কারণে আমাকে ঙর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে দিলেন না, তা আমি বুঝতে পারি না। ঙ তো এ বাড়িতে আমার সঙ্গে দেখা করতেই এসেছিলেন। ঙর জন্য মায়া হয় আমার। ঙ চলে গেলে ছ আমার ঘরে এলেন। বসে তিনি বলতে লাগলেন, কি করে তিনি নিজের পায়ে দাঁড়ালেন, কে কে তাকে সাহায্য করেছিল, কে কে করেনি, তাঁর কন্যারা কে কোথায়, কি করছে ইত্যাদি। ছ র কন্যারা বড় বড় ডিগ্রি নিয়েছে, বড় বড় কাজ করছে। কেউ দেশে থাকে, কেউ বিদেশে থাকে। ব্যস্ত জীবন তাদের। ছর জীবন খুব সার্থক জীবন। খুব সুখী তিনি। অতৃপ্তির লেশমাত্র নেই। কিছু পাওয়া হয়নি বলে কোনও আফসোস নেই ছর। ছ জীবনে যা চেয়েছিলেন, তারও চেয়ে বেশি পেয়েছেন। এত সুখী তৃপ্ত মানুষটির দিকে তাকিয়ে থেকে থেকে হঠাৎ আমার মনে হয় সব অর্জন করা ছ তাঁর পিঠের যন্ত্রণার মত একটি সূক্ষ্ম একাকীত্বের যন্ত্রণাতেও ভোগেন।