অতলে অন্তরীণ – ১১

চৌদ্দ জুন, মঙ্গলবার

সকালে আমার ঘরে ট্রেতে করে নাস্তা এল। রুটি তরকারি ডিম। ছ আমাকে

চৌদ্দ জুন, মঙ্গলবার

 

সকালে আমার ঘরে ট্রেতে করে নাস্তা এল। রুটি তরকারি ডিম। ছ আমাকে এত সমাদর না করলেও পারতেন, কিন্তু ছ করেন। তিনি আমার নোংরা কাপড় ধুতে দেবার জন্য বলেন। ঘরের ভেতর ঘোমটায় মাথা ঢেকে বসে থাকার যুক্তি নেই, বলেন। ফাঁক ফোকর! নাহ ফাঁক ফোকর দিয়ে কেউ দেখতে পাবে না। কাজের লোক! কাজের লোকের সাহস হবে না কোনও কিছু রাষ্ট্র করা। তিনি নিজের কথা অনেকক্ষণ বললেন, ছোটবেলায় বিয়ে হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু লেখাপড়া ছাড়েননি। জীবনে অনেক বাধা এসেছে, সব বাধা অতিক্রম করেছেন নিজের একার মনোবল দিয়ে। শুনতে খুব ভাল লাগে সাহসী মেয়েদের কথা। আমি মন দিয়ে শুনি তিনি কেমন কেমন বাধার মুখোমুখি হয়েছেন, কেমন করেই বা ডিঙিয়ে এসেছেন। বিয়ে হয়েছে, বাচ্চা হয়েছে, স্বামী অত্যাচার শুরু করলে স্বামীকে তাড়িয়ে দিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, ডিগ্রি নিয়েছেন, নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। কারও কোনও কুকথার পরোয়া করেননি। তিনি একটি নারী উন্নয়ন সংস্থা খুলেছেন, নিরক্ষর মেয়েদের জন্য এই সংস্থার ইশকুল আছে। সেলাইএর, বুননের কাজও দিয়েছেন বেকার মেয়েদের। বললেন, মেয়েদের জন্য কিছু করতে চাও তো তোমার যেতে হবে গ্রামে, গ্রামের মেয়েরা অসম্ভব পরিশ্রমী, ওরা শিক্ষিত হলে, স্বনির্ভর হলে দেশে কোনও সমস্যা থাকবে না। আমি সায় দিই ছর কথায়। এত বড় কাজ করার সুযোগ আমার কখনও হয়নি। এখন তো বেঁচে থাকারই সুযোগ হচ্ছে না। লেখালেখি না করে গ্রামের মেয়েদের স্বনির্ভর করার কাজে সাহায্য করলে সত্যিকার কিছু করা হত, আমি বুঝি। নিজেকে বড় তুচ্ছ মনে হয়, বড় অপদার্থ মনে হয়।

 

ছ র পড়া শেষ হলে আজকের দুটো পত্রিকা ছ আমাকে পড়তে দেন। ৩০শে জুন হরতাল সফল করার আহবান জানানো হচ্ছে দেশের সমস্ত অঞ্চল থেকে। হরতালের কথা প্রথম তুলেছিল ইয়ং মুসলিম সোসাইটি, এরপর হরতালের প্রস্তাবটি খাচ্ছে দেশের সব মৌলবাদী রাজনৈতিক অরাজনৈতিক দল। দেশের সর্বত্র সভা মিছিল চলছে হরতাল সফল করার দাবিতে। মসজিদের নিরাপদ আঙিনা ছেড়ে মৌলবাদীরা এখন সভা করছে তাদের দাপট নেই এমন এলাকাতেও। ঢাকার গেণ্ডারিয়ায় গতকালের সভায় মুফতী আমিনী বলেছেন, মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পাবার জন্য তসলিমা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। স্পীকারের কাছে লেখা আমার চিঠি সম্পর্কে বলেছেন যে আমি কোরান সংশোধনের কথা এখন অস্বীকার করছি, ভয়ে করছি। বলেছেন, সামান্য অপরাধের কারণে সরকার যদি আসামীদের গ্রেফতার করার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করতে পারে, তবে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ পবিত্রতম গ্রন্থ সম্পর্কে ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি করার অপরাধে তসলিমাকে গ্রেফতারে পুরস্কার ঘোষণার বাধা কোথায়? ২৫শে জুন সকাল ১১ টায় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয় মুফতীর দল থেকে। বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র পরিষদের সভায় বলা হয়েছে, কুখ্যাত লেখিকা মুরতাদ তসলিমা নাসরিনকে রহস্যজনক ভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। পরিস্থিতি বেশিদূর অগ্রসর হতে না দিয়ে এখনও সময় আছে তাকে গ্রেফতার করে বিচার করা হোক। তসলিমার ফাঁসির দাবিতে আগামীকাল সংসদ ভবন ঘেরাও করার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইদের তিনি আহবান জানিয়েছেন। সচেতন মুসলিম যুব ফোরাম, মান্দারপুর ইসলামি পাঠাগার, পাঞ্জেরী পাঠাগার হরতাল সমর্থনের বিবৃতি দিয়েছে। পাঠাগারের লোক পর্যন্ত সংগঠিত হচ্ছে। পাড়ায় পাড়ায় উত্তেজনা এখন। এ কিসের লক্ষণ! আরও একটি বিবৃতি আমাকে কাঁপিয়ে দেয়। ১০১ জন আইনজীবী তসলিমার গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেছে। ইত্তেফাকের খবরটি এরকম, বাংলাদেশে সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের ১০১ জন আইনজীবী গতকাল সোমবার এক যুক্ত বিবৃতিতে ইসলামের শষনুদের মদদ যোগাইতে পবিত্র কোরান শরীফ সম্পর্কে তসলিমা নাসরিনের অবমাননাকর উক্তিতে মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনায় চরম আঘাত ও সমাজকে


Rx Munna

446 Blog indlæg

Kommentarer