অতলে অন্তরীণ – ১৬

উনিশ জুন, রবিবার

শামসুর রাহমান কলাম লিখেছেন ভোরের কাগজে, নইলে বড় বেশি দেরি হয়ে যাবে। শুরুতে বলেছেন জ্ঞআমরা

উনিশ জুন, রবিবার

 

শামসুর রাহমান কলাম লিখেছেন ভোরের কাগজে, নইলে বড় বেশি দেরি হয়ে যাবে। শুরুতে বলেছেন জ্ঞআমরা যারা লেখক শিল্পী এবং সাংবাদিক তারা আজ অত্যন্ত উদ্বিগ্ন এবং বিপন্ন। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষে আমরা স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। পথে নেমেছি, বহু ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করেছি আমরা। .. স্বৈরশাসককে হটিয়ে আমরা উল্লসিত হয়েছিলাম, তিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়িত হবে ভেবে আশান্বিত হয়েছিলাম। .. জনগণের রায়ে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হল। বহুদিন পর গণতন্ত্রের উজ্জ্বল মুখ দেখার আশায় উদগ্রীব হয়ে রইলাম। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতাসীন হয়েই বেমালুম ভুলে গেল তিন জোটের রূপরেখার কথা। গণতন্ত্রের লেবাসের আড়ালে স্বৈরাচারই বহাল রয়েছে। বর্তমান সরকারের ক্রিয়া কলাপে আজ গণতন্ত্র সঙ্কটাপন্ন। গণতন্ত্রের একটি প্রধান শর্ত বাক স্বাধীনতা। প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বাক স্বাধীনতা খর্ব করার কোনও অবকাশ নেই। যত মত তত পথ। প্রত্যেকেরই নিজের মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। ঈশ্বরে বিশ্বাসী কোনও ব্যক্তি যেমন নিজের মত প্রকাশ করতে পারবেন, তেমনি একজন নিরীশ্বরবাদীও স্বমত প্রকাশ করতে পারবেন। নিজ নিজ মত প্রকাশের জন্যে কেউ নিগৃহীত, উৎপীড়িত হবেন না — এটাই গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত। জাতিধর্ম নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবেন। আস্তিক এবং নাস্তিকের অধিকার অভিন্ন থাকবে। ফরাসি লেখক ভলতেয়ার বলেছেন, তোমার মতের সঙ্গে আমি একমত নই, কিন্তু তুমি যাতে অকুণ্ঠচিত্তে নিজের মত প্রকাশ করতে পারো, সেজন্যে আমি আমার রক্তের শেষ বিন্দু দিয়ে লড়ব। ভলতেয়ারের এই অমর উচ্চারণ প্রকৃত গণতন্ত্রেরই বাণী। কিন্তু আমাদের দেশে কী হচ্ছে? সত্যিকার গণতন্ত্রচর্চা কি হচ্ছে এখানে? সখেদে বলতে হচ্ছে, না। মত প্রকাশের জন্য খণ্ডিত হচ্ছেন লেখক ও সাংবাদিক। মসিজীবীদের ওপর সবসময় খাঁড়া ঝুলছে। কবে কার গর্দান যাবে, কেউ বলতে পারে না। যে লেখক যা বলেননি তা লেখকটির ওপর আরোপ করে তাঁকে দণ্ড দেওয়া হচ্ছে। এখানে স্বাভাবিকভাবে তসলিমা নাসরিনের কথা এসে পড়ে। . .’ এরপর আমার প্রসঙ্গে কিছুক্ষণ বলে সাংবাদিকদের প্রসঙ্গে আসেন, আহমদ শরীফের বাড়িতে হামলার প্রসঙ্গ টানেন। তারপর বলেন, ‘বিএনপি সরকার দেশটিকে ফতোয়াবাজ ও মৌলবাদী দলগুলোর কাছে বন্ধক দিতে আদা জল খেয়ে লেগেছেন। যারা বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের বিরুদ্ধে ছিল আগাগোড়া, যাদের নেতা (গোলাম আযম) বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও বিদেশে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করেছে, যারা একাত্তরে ভুল করিনি সগর্বে বলে বেড়ায়, তারাই যখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ব্যক্তিদের দেশদ্রোহী আখ্যা দেয়, তখন তাদের কী আখ্যা দেওয়া যায় তা জনসাধারণের উপরই রইল।’ এরপর, আগাগোড়া নাস্তিক শামসুর রাহমানকে খানিকটা ডিপ্লোমেট হতে হয়, তিনি বলেন, ‘ইসলাম, আমরা জানি, শান্তির ধর্ম। ইসলামের নামে যারা অশান্তির সৃষ্টি করে, ক্ষমতা দখলের জন্যে ধর্মান্ধতার আশ্রয় নেয়, ধর্মকে ব্যবহার করে সওদাগরের মত তখন কি আমরা মারহাবা মারহাবা বলে উল্লাসে ফেটে পড়ব? ইসলাম বিপন্ন, এ কথা সেই শৈশবকাল থেকে শুনে আসছি। যারা প্রকৃত আলেম এবং ধার্মিক, তাঁরা বোঝেন ইসলাম রক্ষার সর্বশক্তি আল্লাহতালার আছে। ইসলামের বিপন্নতা ঘোচানোর অজুহাতে কারো ইসলামের রাখওয়ালা সেজে অন্যদের শান্তি নষ্ট করার, দাঙ্গা ফ্যাসাদ করার কোনও প্রয়োজন নেই। যাকে তাকে মুরতাদ বলে গলাবাজি করাও নিরর্থক। যারা কোনও লেখকের মাথার বিনিময়ে লক্ষ টাকা ঘোষণা করে প্রকাশ্য জনসভায়, সর্বক্ষণ সরলমতি মানুষকে প্ররোচিত করে নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার জন্যে, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের আবর্জনা বলার ঔদ্ধত্য দেখায়, হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে, সেসব ফ্যাসিবাদীদের বিরুদ্ধে সরকার কেন গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেন না? কাউকে হত্যা করতে উৎসাহ দান কি দণ্ডনীয় অপরাধ নয়? সরকারের কাছে আমাদের আরেকটি প্রশ্ন, আপনারা হরতাল বিরোধী, হরতাল হলে আপনাদের উন্নয়নের জোয়ারে ভাটা পড়ে, এমন কথা জোরে শোরে বলে থাকেন। কিন্তু ৩০ জুন যে তথাকথিত হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে আপনারা নিশ্চুপ কেন? এই হরতাল সফল করতেই যেন নীরবে সমর্থন জানাচ্ছেন তাদের প্রতি। ..’


Rx Munna

446 Blog Postagens

Comentários