অতলে অন্তরীণ – ২০

তেইশ জুন, বৃহস্পতিবার

সকাল এগারোটার দিকে দরজার তল দিয়ে দুটো পত্রিকা আর একটি থালা

তেইশ জুন, বৃহস্পতিবার

 

সকাল এগারোটার দিকে দরজার তল দিয়ে দুটো পত্রিকা আর একটি থালা চলে এল। থালায় দুটি রুটি আর একটি ডিমভাজা। বুঝি যে ঝ বাড়ির সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে নিজের নাস্তার অবশিষ্ট আমাকে দিতে পেরেছেন কিন্তু এ ঘরে ঢোকার সুযোগ করতে পারেননি। কিন্তু ঝ র তো আপিসে যাওয়ার কথা, তিনি কি আপিসে যাননি! আমার জানা হয় না কিছু। রুটি ডিম খেতে খেতে পত্রিকা পড়ি। আজও সেই একই খবর। হরতাল সফল আর প্রতিরোধ করার আহবান। হরতাল সফল করার জন্য সভা সমাবেশ আর মিছিল হচ্ছে। হরতালের বিপক্ষে কেবল বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে। হরতাল প্রতিরোধের আহবান জানিয়ে ১০৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি বিবৃতি দিয়েছেন। ধর্মের নামে লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের ওপর মৌলবাদী চক্র যাতে আর কোনও ফ্যাসিবাদী হামলা চালাতে না পারে, সেজন্য দেশের সচেতন মানুষকে গ্রাম শহর পাড়া মহল্লাসহ সর্বস্তরে প্রতিরোধ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানানো হচ্ছে। সই করেছেন সমাজের মান্যগণ্য লোকেরা, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক হুমায়ূন আজাদ, ডঃ হায়াৎ মামুদ, মুনতাসির মামুন, মোহাম্মদ রফিক, অধ্যাপক নরেন বিশ্বাস, মেঘনা গুহ ঠাকুরতা, হরিপদ ভট্টাচার্য, আবুল হাসানাত, ডঃ দুর্গাদাস ভট্টাচার্য, অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক এরকম অনেকে। একটি বিবৃতি অন্যরকম। এটি মৌলবীদের দেওয়া বিবৃতি, বিবৃতিটি মৌলবাদীদের বিপক্ষে। এর হোতার সঙ্গে আমার সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপ আছে। সে কথা পরে বলছি। খবরটি এরকম, ৩০ জুনের হরতালের সঙ্গে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কোনও সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশে ইসলামী বিপ্লবী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ গতকাল এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, তসলিমা নাসরিনের ফাঁসি এবং দৈনিক জনকণ্ঠ নিষিদ্ধের দাবিতে আগামী ৩০ জুনের হরতালের সঙ্গে ক্ষুধা ও দারিদ্রে নিষ্পেষিত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কোনও সম্পর্ক নেই। ইসলামী বিপ্লবী আন্দোলনের মহাসচিব হাফেজ জিয়াউল হাসান বলেন, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোরান ও ইসলামী শিক্ষাকে অপমান করলে নিঃসন্দেহে সে আল্লাহর কাছে অপরাধী। কিন্তু এই অপরাধের জন্য শাস্তি দেয়া বা ক্ষমা করার অধিকার কিংবা দায়িত্ব আল্লাহ কোনও মানুষকে দেননি। কারণ এ অপরাধ এতই বিরাট ও জঘন্য যে মানুষ এর প্রতিকার করার ক্ষমতা রাখে না। তাই আল্লাহ এ কাজটি নিজের দায়িত্বে নিয়েছেন। ইসলাম যুক্তি ও সৌহার্দের ধর্ম, উত্তম চরিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে মানুষের মন জয় করার ধর্ম। কোরানের বিধান অনুসারে সঠিক যুক্তি ও উত্তর প্রদান না করে কথায় কথায় হত্যা ও ফাঁসির ফতোয়া ছড়ানো ন্যায়সঙ্গত নয়। তাছাড়া হুমকি দিয়ে সস্তা আন্দোলনের নেতা হওয়া যায়, কিন্তু ইসলামের খাঁটি সেবক হওয়া যায় না। প্রকৃত আলেমের দায়িত্ব হচ্ছে দেশবাসীর সামনে কোরানের সুন্দর শিক্ষাকে ভালভাবে তুলে ধরা। কিন্তু তা না করে কেউ কেউ ইসলামের নামে অনৈসলামিক ফাঁসির ফতোয়া দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। ইসলামের জন্য মায়াকান্নাকারী এসব লোক ৭১ সালে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে হত্যা ও দুই লাখ মা বোনের ইজ্জত লুণ্ঠনকারী মওদুদীবাদী জামাত শিবির চক্রের ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করে। বরং এরা বর্তমানে একাত্তরের নরঘাতক গোলাম আযমকে রক্ষা করার জন্য তসলিমার ফাঁসি ও জনকণ্ঠ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছে। এই আন্দোলনে এমন অনেক নেতা আছেন তাঁরা যে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সেখানে আমাদের জাতীয় পতাকা ওঠানো হয় না, জাতীয় সঙ্গীতও পাঠ করা হয় না, যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার নামান্তর। জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননাকারী এবং অনৈসলামিক ফতোয়া দিয়ে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা নষ্টকারী ফতোয়াবাজদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

 

জিয়াউল হাসান বলেছেন। জিয়াউল হাসানের সঙ্গে আমার আলাপ না থাকলে ধরে নিতাম মৌলবী সেজে এটি হয়ত অমৌলবী, অমৌলবাদী কারও কাজ; এ সময় দেশকে বাঁচাতে যে কেউ যে কোনও কিছুই সাজতে পারে। নাস্তিকদেরই যদি বলতে হয়, আমরা কোরআনের পক্ষ শক্তি, তখন আধা নাস্তিকরাই মৌলবী হয়ে মৌলবাদীদের যুক্তি খণ্ডন করতে নিশ্চয়ই পারে। কিন্তু ঘটনা তা নয়। জিয়াউল হাসান লোকটি আসলেই জোব্বা পরা, টুপি দাড়িঅলা, আপাদমস্তক মৌলবী। তাণ্ডবের সময়ে লোকটি আমার সঙ্গে বহু চেষ্টা করেছেন দেখা করতে। আমি রাজি হইনি। কিন্তু আহমদ শরীফের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত জিয়াউল হাসানকে ঘরে ঢুকতে দিই, বসতে দিই, কথা বলতে দিই। যথা সম্ভব দূরত্ব রেখে বসেছিলাম। মিলনকে, মোতালেবকে, কায়সারকে পাশে বসিয়ে তবে বসেছিলাম। জিয়াউল হাসান যা বলতে চান তা শোনাই ছিল আমার উদ্দেশ্য। লোকটি আমার চেয়েও কম বয়সী, এর মধ্যে কোরানের হাফেজ হয়েছেন, কোরান পুরোটাই মুখস্ত বলতে পারেন। আমার ঘরে বসে এই হাফেজ মৌলবী দম নিয়ে নিয়ে বলে গেলেন যে তিনি মৌলবাদী নন। মৌলবাদীদের


Rx Munna

446 Blogg inlägg

Kommentarer