অতলে অন্তরীণ – ১৯

বাইশ জুন, বুধবার

সকাল হয়। পাখির, মানুষের, যানবাহনের শব্দ শুনে বুঝি সকাল। বন্ধ

বাইশ জুন, বুধবার

 

সকাল হয়। পাখির, মানুষের, যানবাহনের শব্দ শুনে বুঝি সকাল। বন্ধ জানালাটির ফাঁকে আটকে থাকা টুকরো টুকরো সাদা আলো দেখে বুঝি যে বাইরে সকাল। শুয়ে থাকতে ভাল লাগে না। বসে থাকি। একটানা বসে থাকতেও আর কতক্ষণ ভাল লাগে! একসময় দাঁড়াই। দাঁড়িয়ে থাকি। কতক্ষণ আর ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা যায়। হাঁটি। খুব আস্তে পা ফেলে এক পা দু পা। কিন্তু মনে হতে থাকে পা ফেলার শব্দ খুব জোরে হচ্ছে। নিচতলায় শুনতে পাচ্ছে কেউ। অগত্যা বসে থাকি। সকাল দুপুরের দিকে হেলে পড়ে, আমি হেলে পড়ি মেঝেয়। ঝিমঝিম করে মাথা। শরীর অবশ অবশ লাগে।

 

যখন ঝ ঢুকলেন ঘরে, তখন বিকেল। ঝ আপিস থেকে ফিরে ফাঁক খুঁজছিলেন এ ঘরে আসার। ছেলে ঘুমিয়ে গেলে, ওদিকে কাজের মানুষগুলো একটু জিরোতে গেলে ঝ তাঁর নিজের ভাতের থালাটি নিয়ে উঠে এলেন এ ঘরে। ঝর ভাগের ভাতে আমার ভাগ বসাতে হয়। যে থালাটি ঢাকনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, সেটির মধ্যে আমার জন্য ভাত তুলে দেন ঝ। তরকারি, মাছ সমান সমান ভাগ করেন। এই অর্ধেকে না হবে আমার, না হবে ঝর। কিন্তু এ ছাড়া আর করার কিছু নেই। এবাড়ির দক্ষ রাঁধুনি যখন পাঁচজনের জন্য রাঁধেন, তখন পাঁচজনের জায়গায় ছ সাতজনও খেতে পারে, কিন্তু বাড়তি খাবার কি করে এ ঘরে পাচার করবেন ঝ! কোনও উপায় নেই। অন্তত ঝ কোনও উপায় দেখছেন না। পাচার করলে জানাজানি হবেই। হলে বাড়ির সকলের সন্দেহ হবে যে ওপরতলায় কোনও প্রাণী নিশ্চয়ই বাস করছে। প্রাণীটি কে, তা জানার জন্য তারা কৌতূহলী হবে। এটি ঝর বাড়ি হলেও, কাজের মানুষগুলো ঝর প্রতিটি আদেশ উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেও ঝ এখন কাউকে বলতে পারছেন না যে এ বাড়িতে তাঁর একজন অতিথি আছে। অতিথির জন্য ঝর এ বাড়িতে যা ইচ্ছে তা করার অধিকার থাকলেও আমার জন্য একটি আলাদা থালায় ভাত বেড়ে আনতে পারেন না তিনি, ঝকে হাত গুটিয়ে রাখতে হয়। হাতের পায়ে পায়ে আশঙ্কা, কেউ জেনে যেতে পারে অতিথির পরিচয় এবং জানিয়ে দিতে পারে আশেপাশের কাউকে। তারপর এক কান থেকে একশ কান। এইসব ঝামেলার চেয়ে ঝ মনে করেন তাঁর নিজের খাবার থেকে আমাকে ভাগ দেওয়াটাই নিরাপদ। ঝর জন্য কষ্ট হয়। আপিস করে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আধপেট খাচ্ছেন। নিজের ভাগে আমি কৌশলে কম খাবার নিতে চেষ্টা করি।

 

খেয়ে ঝ একটি সিগারেট ধরান। মেঝেতেই আধশোয়া হয়ে সিগারেট ফোঁকেন। গলা চেপে, প্রায় শব্দহীন স্বরে বললেন যে আপিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে তিনি বিশাল এক মিছিল দেখেছেন মোল্লাদের। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, হরতাল যদি করে ফেলতে পারে মোল্লারা তবে সব্বনাশ হয়ে যাবে। এটা এখন বড় একটা চ্যালেঞ্জ আমাদের জন্য। মোল্লারা ডাকলেই যে হরতাল হয় না এ দেশে, তা আমাদের প্রমাণ করতেই হবে।

 

ঝর হাতে তাঁর তারহীন ফোনটি। তার কণ্ঠস্বর যদি কারও কানে যায়, ভেবে নেবে বুঝি ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলছেন তিনি। ঝর কাছে সরে এসে ঘরের বাইরে শব্দ না যায়, এমন স্বরে বলি,আপনার কি মনে হয় হরতাল বন্ধ করা সম্ভব হবে?

 

–এখনও বুঝতে পাচ্ছি না


Rx Munna

446 Blog Mesajları

Yorumlar

📲 Download our app for a better experience!