জুন, শনিবার
ধর্মব্যবসায়ী ফতোয়াবাজরা দেশ জাতি মানবতা ও ইসলামের শত্রু
এদের প্রতিহত করুন
ইসলাম শান্তি, ন্যায় ও মানবতার ধর্ম। এ ধর্ম মানুষে মানুষে হানাহানি, সংঘাত, কলহ ওদ্বন্দ্বকে সমর্থন করে না। ধর্মকে নিয়ে বাড়াবাড়ি ও জবরদস্তি ইসলামী আদর্শের পরিপন্থী।বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ধর্মপ্রাণ ও শান্তিপ্রিয়। যুগযুগ ধরে এদেশের মানুষ ধর্ম বর্ণগোত্র নির্বিশেষে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে আসছে। চেতনাগতভাবে তারা অসাম্প্রদায়িকএবং একে অন্যের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে চিহ্নিত একটিস্বার্থা−ন্বষী মহল তাদের জঘন্য রাজনৈতিক ও গোষ্ঠীস্বার্থে ধর্ম ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকেব্যবহার করে আসছে এবং সুকৌশলে এদেশের সরলমতি মানুষকে আত্মঘাতী সংঘাতেরদিকে ঠেলে দেওয়ার অব্যাহত অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এই মহলটিই ১৯৭১ সালে, আমাদেরমহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসলাম রক্ষার অজুহাতে লক্ষ লক্ষনিরপরাধ মানুষকে হত্যা, নারীধর্ষণ ও লুণ্ঠনসহ সমগ্র জাতির বিরুদ্ধে নজিরবিহীন এক ধ্বংসযজ্ঞে লিপ্ত হয়েছিল। সেদিনেরসেই বর্বরতার স্মৃতি কোনওদিন এ দেশের মানুষের মন থেকে মুছে যাবে না। বলার অপেক্ষারাখে না এরা ইসলামের কলঙ্ক, জাতির কলঙ্ক এবং মানবতার কলঙ্ক।
ইসলাম ও মানবতার এই চিহ্নিত দুষমনরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মনগড়া ফতোয়াবাজির মাধ্যমে একাত্তরের মতই এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে তারা আবারও একটি আত্মঘাতি সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়ার চক্রান্তে মেতে উঠেছে। এই স্বঘোষিত ধর্মরক্ষক শ্রেণী তথাকথিত ধর্ম অবমাননার শাস্তির দাবিতে লেখক, সাংবাদিক, কর্মজীবী নারী, এনজিও এবং দারিদ্র বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ জাতীয় উন্নয়নে নিয়োজিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, কুৎসা রটনা ও বোমাবাজি সহ নানাবিধ ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। নিরীহ নারী সমাজের ওপর যথেচ্ছ নির্যাতন এবং বিভিন্ন ব্যক্তির ফাঁসির দাবির পাশাপাশি যাকে ইচ্ছে তাকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে এবং মুরতাদ কাফের ফতোয়া দিয়ে জনজীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে। ধর্ম রক্ষার অজুহাতে তথাকথিত জেহাদী চেতনার ধুয়া তুলে সমাজে একটি অন্ধ উন্মাদনা ছড়িয়ে দেওয়াই এদের লক্ষ। এরা ধর্মের নামে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রায়ণের প্রক্রিয়াকে নেতিবাচক ধারায় ঠেলে দিতে চাচ্ছে। এরাই একদা বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ইমাম গাজ্জালী, মাওলানা রুমী এবং আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামকে কাফের ফতোয়া দিয়ে কোতল করার আহবান জানিয়েছিল।
অথচ ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতা। কারও মতের বা ধর্মের সঙ্গে অমিল হলেই তাকে হত্যা করতে হবে এমন কথা ইসলামে নেই। বরং পবিত্র কোরান মানুষকে যে কোনও ধর্ম গ্রহণ এবং বর্জন করার স্বাধীনতা প্রদান করেছে। যেমন ধর্মের ব্যাপারে কোনও প্রকার জোর জবরদস্তি নাই(সুরা বাকারা), যার ইচ্ছা হয় বিশ্বাস করুক আর যার ইচ্ছা হয় অস্বীকার করুক (সুরা কাহাফ), উপদেশ গ্রহণ করে যে চায় সে তার প্রভুর পথে চলতে পারে(সুরা দহর), ঈমান আনার জন্য কাউকে বাধ্য করা যায় না(সুরা ইউনুস)। এরকম আরও অজস্র দৃষ্টান্ত হাদীস শরীফে এবং মহানবীর (সাঃ) জীবনাদর্শে খুঁজে পাওয়া যাবে। পবিত্র মককা বিজয়ের পর মহানবী ইসলামের কট্টর শত্রুদেরও হত্যা কিংবা কোনওধরনের নির্যাতন করার অনুমতি দেননি। বরং তিনি সকল ধর্মের ও মতের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন সেদিন। আর বিদায় হজ্বের সেই মহামূল্যবান সতর্কবাণী তো সকলেরই জানা। আমাদের প্রিয় নবী স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, তোমরা ধর্ম লইয়া বাড়াবাড়ি করিও না। ধর্ম লইয়া বাড়াবাড়ি অনেক জাতির ধ্বংসের কারণ হইয়াছে।
ধর্ম বিশ্বাস থেকে বিচ্যূত হওয়া বা ধর্মের বিরুদ্ধাচরণের জন্য মহানবী (সাঃ) কখনই কোনও ব্যক্তিকে হত্যা বা অন্য কোনওরূপ শাস্তির আদেশ দেন নি। ধর্মের অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে কোনওরূপ জাগতিক শাস্তির বিধান থাকলে মহানবী (সাঃ) অবশ্যই তা পালন করতেন। কেননা ইসলামের সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার ক্ষেষেন নবী করীম (সাঃ) ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। তিনি যে পন্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা এবং তা রক্ষা করেছেন সে পদ্ধতি বাদ দিয়ে অশান্তি ও অরাজকতা সৃষ্টিকারী সমস্ত কার্যকলাপপ্রকৃত মুসলমানদের কাছে কখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ইসলাম রক্ষা অবশ্যই ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শের ভিত্তিতেই করতে হবে। তা না হলে এটা ইসলামের জন্য শুধু দুর্নামই বয়ে আনবে না, বরং সমূহ ক্ষতিরও কারণ হবে। আমরা যেন ভুলে না যাই যে আল্লাহর প্রবর্তিত ধর্মের, জাতির এবং মানবতার প্রধান শত্রু হচ্ছে প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী চক্র। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে এই মৌলবাদীদের অবস্থান বহু দূরে। ইসলামের দোহাই তুলে এরা তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে তৎপর – যা তারা ১৯৭১ এ হাসিল করতে পারেনি। এই অপশক্তি আবারও একটি গণহত্যাযজ্ঞের ষড়যন্ত্রে মেতেছে। অতএব, এই ভণ্ড, নরঘাতক, ধর্ম ব্যবসায়ী, ধর্মের অপব্যাখ্যাকারী এবং ফতোয়াবাজ চক্রকে এখনই প্রতিহত করা প্রতিটি দেশপ্রেমিক ও ধর্মপ্রাণ নাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি।
সচেতন লেখক, শিল্পী ও নাগরিক সমাজ।
ঝ আপিস থেকে ফিরে কয়েকটি লিফলেট দিলেন আমাকে। শহরে বিলি হচ্ছে লিফলেট, তাঁর হাতেও পড়েছে। সচেতন লেখক, শিল্পী ও নাগরিক সমাজের এই লিফলেটটি কারা ছেপেছে ঝ কিছু জানেন কি না জিজ্ঞেস করেছিলাম। ঝ জানেন না। আরেকটি লিফলেট সর্বহারা পার্টির। দেশে একটিই আণ্ডারগ্রাউণ্ড দল আছে, সেটি এই সর্বহারা পার্টি। শামীম সিকদারের ভাই সিরাজ সিকদার ছিলেন সর্বহারা পার্টির নেতা, তাঁকে খুন হতে হয়েছে ৭৪ সালে। সর্বহারা পার্টির লিফলেটটি আর সব লিফলেট থেকে অন্যরকম। এখানে ধর্মের ভাল ভাল কথা ব্যবহার করে ধর্মীয় মৌলবাদীদের দমন করার কোনও চেষ্টা নেই। আণ্ডারগ্রাউণ্ড বলেই বোধহয় সম্ভব হয়েছে ওদের পক্ষে এই অবস্থান নেওয়া। লিফলেটটির শিরোনাম ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ নিপাত যাক! সাম্রাজ্যবাদ ও বড় বু−র্জায়া নিপাত যাক। এরপর ম্যালা কথা। ধর্মীয় ফ্যাসিস্টরা কি করছে দেশে, তার বর্ণনা। এরপর বলা হচ্ছে, ধর্মীয় ফ্যাসিবাদীরা কোনও বিচ্ছিত শক্তি নয়, তারা এই প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্রযন্ত্র ও শাসকশ্রেণীরই অংশ। ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের পরিণতি কী হতে পারে তা দেখা যায় সারা পৃথিবী জুড়ে। এই উপমহাদেশে গত ৫০ বছরে এর বলি হয়েছেন লক্ষ লক্ষ হিন্দু মুসলিম সাধারণ জনগণ। ভারত, আফগানিস্তান