অতলে অন্তরীণ – ২৭

তিরিশ জুন, বৃহস্পতিবার

আজ সারাদিন ঝ বাড়িতে। খুব তাঁর ইচ্ছে ছিল বাইরে মিছিলে

তিরিশ জুন, বৃহস্পতিবার

 

আজ সারাদিন ঝ বাড়িতে। খুব তাঁর ইচ্ছে ছিল বাইরে মিছিলে যাবেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বের হননি। সকলে বলছে দু দলের সঙ্ঘর্ষে অনেকে মরবে। সারাদিন থেকে থেকে মিছিলের স্লোগানের শব্দ শুনেছি, রাস্তা থেকে ভেসে এসেছে স্লোগানের শব্দ, তসলিমার ফাঁসি চাই। কেবলই মনে হয়েছে, এ বাড়িতে বুঝি ঢুকে যাচ্ছে সশস্ত্র এক দল লোক। এ ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকে যাচ্ছে ওরা। ঢুকে যাচ্ছে। ঢুকে গেল। গেল। সারাদিন গা কেঁপে কেঁপে উঠেছে। সারাদিন শ্বাস নিতে গিয়ে দেখি শ্বাস থেমে থেমে যাচ্ছে।

 

ঝ দুবার ঘরে এসেছেন খাবার নিয়ে, দুবারই দেখেছেন গায়ে চাদর মুড়ি দিয়ে হাতপা গুটিয়ে শুয়ে আছি। দুবারই আমাকে তুলতে চেষ্টা করেছেন খাওয়াতে। দুবারই আমি বলেছি খাবো না। সারাদিন ধরে ঝ তাঁর পরিচিতদের ফোন করে জেনেছেন হরতালের খবর। হরতাল হয়েছে সারাদেশে। কোনও গাড়িঘোড়া চলেনি, দোকানপাট খোলেনি। হরতালের প্রতিপক্ষ সারাদিনই রাস্তায় ছিল। দু দলের সঙ্ঘর্ষে আর পুলিশি আক্রমণে পাঁচশ লোক আহত হয়েছে। বেশ কিছু পুলিশও আহত। আহতরা হাসপাতালে। অনেককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিশোরগঞ্জে পুলিশের গুলিতে আরমান নামের একটি চৌদ্দ বছর বয়সের ছেলে মারা গেছে, গুলি খেয়েছে অনেকে, ময়মনসিংহের হাসপাতালে ভর্তি তারা। একশ দশটি ইশকুল পুড়িয়ে দিয়েছে মৌলবাদীরা, হাসপাতাল পুড়িয়েছে। ঢাকায় প্রেসক্লাব এলাকা ছিল মৌলবাদবিরোধী ছাত্রজনতার দখলে। শহরের বাকি এলাকা ছিল মৌলবাদীদের দখলে।

 

মধ্যরাতে ঝ আমাকে প্রায় টেনে তুললেন। ভাত খেতে দিয়ে পাশে বসে সিগারেট ফোঁকেন আর ভয়াবহ এই হরতালের কাহিনী বর্ণনা করেন। এখানে সেখানে বোমা ফেটেছে অনেক। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছে, লাঠিচার্জ করেছে, গুলি ছুঁড়েছে, অনেকের গায়ে গুলি লেগেছে, সচিবালয়ের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। হাজার হাজার পুলিশ নেমেছে রাস্তায়। আশঙ্কা করা হয়েছিল প্রচুর লোক মারা যাবে সঙ্ঘর্ষে। কিন্তু তা হয়নি। হয়নি বলে ঝ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।

 

–হরতালে আসলে জয় কাদের হয়েছে? প্রশ্ন করি।

 

ঝ অনেকক্ষণ ভেবে বলেন, সত্যি কথা বলব?

 

–নিশ্চয়ই।

 

–যদিও এই সত্যটি শুনতে ভাল লাগবে না, তবু সত্য এই যে হরতালে জয় হয়েছে মৌলবাদীদের।

 

–কেন, মৌলবাদবিরোধীরাও তো হরতাল ডেকেছে?

 

–তোমাকে তো আগেই বলেছি একথা। ছাত্ররা তা পরে হরতাল ডেকেছে না পারতে। ওদের ঠেকাতে পারবে না বলে ডেকেছে। ওদের হরতাল সিম্পলি হাইজ্যাক করেছে ছাত্ররা। সারা দেশে হরতাল পিকেটার কারা ছিল রাস্তায়? মৌলবাদীরা। কারা বড় বড় সমাবেশ করেছে? মৌলবাদীরা। মিছিল করেছে শহরের সব রাস্তায় কারা? মৌলবাদীরা। অল্প কিছু জায়গায় মৌলবাদবিরোধীরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিয়েছে শুধু। প্রমাণ করতে চেয়েছে যে তাদের ডাকা হরতালে হরতাল হচ্ছে। কিন্তু জনগণ তো জানে কাদের ডাকা হরতাল এটি। একদিকে ভালই হয়েছে, বিপক্ষ দল যে প্রথম ঘোষণা দিয়েছিল যে হরতাল প্রতিরোধ করবে যে কোনও মূল্যে। আজকে তা করতে গেলে অনেককে মরতে হত।

 

ঘুমোতে যাবার আগে ঝ বলেন, তসলিমা পক্ষ সংগঠনটি থেকে কিছু ছেলে মেয়ে ব্যানার নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে এসেছিল সমাবেশে। মৌলবাদ বিরোধী ছাত্রনেতারা তসলিমা পক্ষের ব্যানার, প্ল্যাকার্ড এসব কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেছে, ছিঁড়ে ফেলেছে, বলে দিয়েছে আমরা এখানে তসলিমার পক্ষে সমাবেশ করছি না, মৌলবাদবিরোধী আন্দোলনে নামা মানে তসলিমার পক্ষে নামা নয়।


Rx Munna

446 Блог сообщений

Комментарии

📲 Download our app for a better experience!