অতলে অন্তরীণ – ৩৩

জুলাই, বুধবার

সকালে ট বাইরে থেকে পাউরুটি আর ডিম কিনে এনে রুটি গরম

জুলাই, বুধবার

 

সকালে ট বাইরে থেকে পাউরুটি আর ডিম কিনে এনে রুটি গরম করে আর ডিম ভেজে আমাকে ডাকলেন খেতে। খাবার ঘরটির চারদিকে জানালা, পর্দাহীন জানালা। আমি দাঁড়াতেই এক ঝাঁক আলো আমার চোখ ধাঁধিয়ে দিল। অনেকদিন আলো দেখে অভ্যস্ত নই আমি। ট হঠাৎ লক্ষ করলেন জানালায় পর্দা নেই। আশেপাশের বাড়ি থেকে কেউ তাকালেই আমাকে দেখে ফেলতে পারে। রান্নাঘরে যাবার আমার কোনও উপায় নেই, ও ঘরের জানালাতেও কোনও পর্দা নেই। ট মুশকিলে পড়লেন। অগত্যা আমাকে নাস্তা খেতে হল বৈঠক ঘরে বসে।

 

আমি যে ঘরে শুয়েছি সে ঘরে বিছানার কাছে একটি টেলিফোন রাখা। টেলিফোনটি তালা দেওয়া। টকে বলেছিলাম যে আমি একটি ফোন করব, খুব জরুরি ফোন, চাবিটি যেন তিনি দেন আমাকে। ট নিরস মুখে বললেন, চাবি ছিল তার কাছে, এখন হারিয়ে গেছে। আমি ঠিক বুঝি, এটি কঞ্চর শিখিয়ে দেওয়া। আমি যেন কোথাও কোনও ফোন করতে না পারি, সে ব্যবস্থা আমি এ বাড়িতে আসার আগেই তিনি করে রেখেছেন।

 

ট বেরিয়ে গেলেন। আমার কাছে দরজার চাবি দিয়ে গেছেন। বলে গেছেন, ক বা কর পাঠানো কেউ যদি আসে তবে যেন দরজার তল দিয়ে চাবিটি দিই তাকে। দরজায় ছিদ্র আছে বাইরে দাঁড়ানো মানুষকে দেখার। সে ছিদ্র দিয়ে আগে যেন দেখে নিই কে এসেছে।

 

ট অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পর বাড়িটিতে একা আমি। কি রকম যেন ভয় ভয় লাগে। কেউ যদি জানে যে এ বাড়িতে আমি আছি। মিছিল করে এসে যদি মৌলবাদীর দল দরজা ভেঙে ঢোকে! দুর্ভাবনা থেকে মন ফেরাতে টর বৈঠকঘরের বইগুলো দেখতে থাকি। সবই ইংরেজি বই। বড় বড় বিদেশী সাহিত্যিকদের লেখা বই। সালমান রুশদির দ্য স্যাটানিক ভার্সেস বইটি তুলে নিই তাক থেকে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে বইটির অনেকগুলো পৃষ্ঠা পড়ে ফেলি। পড়ে ফেলি, কিন্তু বুঝেছি কি! না কিছুই বুঝিনি। অনেক শব্দের অর্থই জানি না। পাশে ইংরেজি থেকে বাংলা অভিধান নিয়ে না বসলে ্‌এই বই পড়ে কিছুই বোঝা আমার হবে না। বইটি রেখে দিই যেখানে ছিল,সেখানে। বাড়িটিতে কোনও দামি আসবাব নেই। কিন্তু বাড়িভর্তি দামি বই। সত্যিকার শিল্পীর বাড়ি এটি। অগোছালো, উদাসীন। দেয়ালের ছবিগুলো বড় বড় শিল্পীর। দুস্প্রাপ্য কিছু শিল্পকর্ম এখানে ওখানে। টর বান্ধবীর একটি ছবিও চোখে পড়ে। জানি না বান্ধবী কি না, তবে অনুমান করি বান্ধবীই। টর ছবিও পাশে। ট আর টর বান্ধবী দুজনই খুব সুন্দর।

 

দুপুরে জ আসেন খাবার নিয়ে। জকে দেখে খুশি লাগে খুব। ট গিয়ে তাঁকে আজ সকালে খবর দিয়েছেন এখানে আসার জন্য। ইঙ্গিতে কথা হয়েছে তাঁদের। জ-কে, আমি জানি না কেন, আমার খুব আপন মনে হয়। যতক্ষণ তিনি থাকেন আমার কাছে, মনে হয় নিজের বাড়িতে বুঝি আছি আমি। জর অসম্ভব ক্ষমতা আছে মানুষকে আপন করে নেওয়ার। এত সহজ সরল উদার এবং মুক্ত মনের মানুষ সংসারে খুব একটা নেই। জকে নিয়ে আমি একটি গল্প লিখেছিলাম, ছাপাও হয়েছে সে গল্প আমার একটি বইয়ে। জর চোখে জল চলে এসেছিল সে গল্পটি পড়ে। জ-কে নিয়ে একটি উপন্যাস লিখতে


Rx Munna

446 Blog posts

Comments