জুলাই, বুধবার
১. তসলিমা নাসরিন চাইলে জার্মানি তাকে আশ্রয় দেবে, এই হল বিবিসির খবর। জার্মানির পররাষ্ট্র দপ্তরে গতকাল বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহমুদ আলীকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লাউস কিনকেল রাষ্ট্রদূতকে বলেন যে তসলিমাকে জার্মানি বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের যে কোনও দেশে সাদরে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তসলিমা যদি ভিসা চায়, তবে তাকে ভিসা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে জার্মানির দূতাবাসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্লাউস কিনকেল তসলিমার ব্যাপারে নিজ দেশের এবং ইউরোপীয়দের গভীর উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেন। বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যেন তসলিমাকে রক্ষা করেন এবং তিনি ইচ্ছে করলে তাঁকে দেশ ত্যাগের অনুমতি দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
২. ব্রাসেলসে ইওরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতরা তসলিমাকে সব রকম সহযোগিতা করবেন।
আমার বিশ্বাস হয় না খবরগুলো। আমি এখন ইউরোপের যে কোনও দেশেই যেতে পারব! থাকতে পারব! চাইলেই আমাকে যে কোনও দেশের ভিসা দেওয়া হবে! মাত্র দু তিন মাস আগেও ফ্রান্সের ভিসা পেতে আমার অনুরোধ কাজে লাগেনি, আমার কাছে আসা আমন্ত্রণ পত্রও কাজে লাগেনি। ফ্রান্স থেকে জিল গনজালেজকে নিজে আসতে হয়েছিল তদবির করতে। এমন যখন কঠিন পশ্চিম ইউরোপের ভিসা পাওয়া, সেখানে আমাকে সেধে দিতে চাইছে ভিসা! গরীব দেশের মানুষ বলে কাউকে পারতপক্ষে ধনী দেশগুলোয় ভ্রমণ করার জন্য ভিসা দেওয়া হয় না। মুক্ত পৃথিবী, বিশ্বায়ন ইত্যাদি কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তোলা হচ্ছে, কিন্তু সত্যিকার বিশ্বায়নের তো কিছুই হয়নি। মুক্ত পৃথিবীতে বিচরণের অধিকার কজনের আছে। বিশ্বায়ন কোনও দরিদ্রের জন্য নয়। বিশ্বায়ন ব্যাপারটিই এখন ধনীদের। ধনীরা তাদের মাল সারা পৃথিবীতে অবাধে বিক্রি করে আরও অর্থ কামাতে চাইছে। পৃথিবীর দরিদ্রতম একটি দেশে যেখানে বছর বছর বন্যায় হাজার হাজার মানুষ মরে যাচ্ছে, দুর্ঘটনায়, সন্ত্রাসে শত শত মানুষ মরছে, যে দেশে আর যা কিছুর মূল্য থাক, মানুষের জীবনের মূল্য নেই, সেই দেশের এক লেখককে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে, তা নিয়ে আজ কেন এত উদ্বিগ্ন ধনী দেশগুলো! মানবাধিকার সংস্থাগুলো চেঁচাচ্ছে বলে! লেখক সংগঠনগুলো তাগাদা দিচ্ছে বলে! নাকি পশ্চিমের পত্রিকায় খবরগুলো কিছু কিছু ছাপা হচ্ছে বলে পশ্চিমের গণতান্ত্রিক সরকার নিজেরাই মানবাধিকার রক্ষাকারী হিসেবে নাম কামাবার জন্য আমাকে রক্ষা করার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন! এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনও ধারণা নেই আমার। আমার মন চাইছে না কোনও দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে। মন চাইছে দেশে থাকতে। দেশের মৌলবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে। মন যে কত কিছু চায়। মাঝে মাঝে অভিমানে বলে উঠি একেবারে সাধারণ মানুষের মত জীবন যাপন করব। আবার এও মনে হয় যে না, যেমন ছিলাম তেমন থাকব, মৌলবাদের শেকড় বাকড় উপড়ে ফেলে সমাজটিকে সুস্থ আর সুন্দর করব।
মনের কথা আমি কাকে বলি!
আজ প্রায় সব পত্রিকাগুলোয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের খবরটি শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন শিরোনামে, তসলিমার নিরাপত্তার জন্য জার্মানীসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের পরামর্শ। ইনকিলাব। তসলিমা নাসরিন চাইলে জার্মানী তাকে আশ্রয় দেবে। সংবাদ। তসলিমার নিরাপত্তার ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বেগ। ইত্তেফাক। ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা তসলিমাকে আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। ভোরের কাগজ। ইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অনুরোধ, তসলিমা নাসরিনকে দেশ ত্যাগে সুযোগ দিন। আজকের কাগজ।
এই সব খবরের মধ্যে একটি