অতলে অন্তরীণ – ৫৩

ছাব্বিশ জুলাই, মঙ্গলবার

কি ছিল তসলিমার লেখায়, আর কেনই বা ক্ষেপলো মৌলবাদীরা

ছাব্বিশ জুলাই, মঙ্গলবার

 

কি ছিল তসলিমার লেখায়, আর কেনই বা ক্ষেপলো মৌলবাদীরা?

 

আজকের কাগজ এই শিরোনাম দিয়ে ভূমিকা লিখে আমার কলামগুলো ছাপার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেখে অবাক হই, যেখানে নাম উল্লেখটিই হত না, সেখানে নাম উল্লেখ তো বটেই, একেবারে কলাম ছাপার সিদ্ধান্ত। আসলে একটি কথা মনে হয়ে বুঝে গেছে যে তসলিমার নামটিই যেহেতু মৌলবাদীরা উচ্চারণ করছে, সুতরাং এই নামটি উল্লেখ না করে অন্য নাম উল্লেখ করে বেশিদিন কাজ চলে না। জনকণ্ঠের সাংবাদিকরা বহু আগেই ছাড়া পেয়ে গেছে, তাদের নাম উল্লেখ করার আর দরকার পড়ছে না। বুদ্ধিজীবীদের ফতোয়া দিচ্ছে এই অভিযোগ করে বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকাও দিতে পারছে না, অতএব, শেষ পর্যন্ত তসলিমা নামটি না চাইলেও উচ্চারণ করতেই হল। ভূমিকাটি এরকম, ‘নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন নারী স্বাধীনতা, ধর্মের কুসংস্কার, গোঁড়ামি, পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীদের দুর্ভোগ ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন সময় সাপ্তাহিক খবরের কাগজ, আজকের কাগজসহ প্রগতিশীল পত্রিকায় লেখালেখি করেছেন। তাঁর এই রচনাগুলো কুসংস্কারাচ্ছত মৌলবাদীদের ভাল লাগেনি। তারা প্রথম প্রথম এ ব্যাপারে হালকাভাবে তসলিমার লেখার প্রতিবাদ করেছিল। কয়েকটি মৌলবাদী পত্রিকার সহযোগিতায় তাদের সেই ক্ষোভ রোষ উস্কে ওঠে এবং এভাবেই বর্তমান অবস্থায় পৌঁছোয়। নারী শিক্ষা, নারী মুক্তি, নারী প্রগতি এবং মেয়েরা যখন সমাজের বন্দী অবস্থা ছিন্ন করে কর্মজীবনে প্রবেশ করছিল তখনই ধর্মান্ধ মোল্লারা শুরু করেছে নাসরিন বিরোধী প্রচারণা। আজ মৌলবাদীরা কেবল নাসরিনের বিরুদ্ধেই ফাঁসির দাবি জানাচ্ছে না, প্রকৃতপক্ষে নারীমুক্তির বিরুদ্ধেই তারা সোচ্চার হতে চাইছে। সরকারও যখন নারীদের শিক্ষা ও দারিদ্র মুক্তির কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে তখনই মৌলবাদীরা মাঠে নেমেছে কোমর বেঁধে। আমরা আজকের কাগজের পাঠকদের জন্য সেই প্রগতিবাদী কলামগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য অংশবিশেষ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছি। আজ তার প্রথম অংশ প্রকাশ করা হল।’

 

আগেও যে কথা ভাবছিলাম যে আজকের কাগজসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল পত্রিকা এখন মিশন হিসেবেই নিয়েছে মৌলবাদবিরোধী সব খবর প্রকাশ করার, কলাম ছাপার, সম্পাদকীয় লেখার। মৌলবাদীদের কোনও খবরই এসব পত্রিকায় ছাপা হয় না। ওদের বিশাল বিশাল মিছিলের ছবি ছাপা হয় না। একইরকম মৌলবাদীদের পত্রিকায় তাদের খবরগুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। কেবল একদলের পত্রিকা পড়লে দেশের প্রকৃত অবস্থা বোঝার উপায় নেই, বুঝতে হলে দুদলের পত্রিকা পড়তে হয়।

 

 

 

ইনকিলাব পত্রিকায় লং মার্চের জন্য বিরাট বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, সারাদেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে লং মার্চ। লং মার্চের পর মহাসমাবেশ। বিজ্ঞাপনে তসলিমা নাসরিনের ফাঁসির দাবির কথা বলা হয়েছে, যেটি নাকি ৩০শে জুনের হরতালের গণরায়। এখন ঝর প্রশ্ন, ২৮ জুন তারিখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে বলা হল যে কোনও ব্যক্তির জীবন নাশের হুমকি প্রদান করা আইনের চোখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এখন এই বিজ্ঞাপনকে কিভাবে নেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়? কী ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রতিদিনের মিছিলগুলোয়, সভাগুলোয় ফাঁসির জন্য চিৎকার করা মোল্লাগুলোর বিরুদ্ধে? ঝর প্রশ্নের কোনও উত্তর আমার কাছে নেই। আমার একটি প্রশ্ন, এ সময় আওয়ামী লীগ কী করছে? ঝ বললেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টি আর জামাতের সঙ্গে আঁতাত করেছে, এখন আওয়ামী লীগের কাছে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করাই মূল বিষয়। জামাতের বিপক্ষে গেলে জামাত আওয়ামী লীগের দাবিকে সমর্থন জানাবে না, না জানালে আওয়ামী লীগের সম্ভব হবে না আন্দোলন জোরদার করার। সুতরাং আওয়ামী লীগ এখন মরে গেলেও জামাতের বিপক্ষে একটি শব্দও উচ্চারণ করবে না। যে দুচারজন বলছে জামাতের বিপক্ষে তারা নিজ দায়িত্বে বলছে, দল থেকে নয়। মূলত ছাত্ররাই যা করার করছে। তারা দলের সিদ্ধান্তের পরোয়া করছে না। বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট আজ সাম্প্রদায়িকতা, ফতোয়াবাজ ও মৌলবাদ বিরোধী


Rx Munna

446 Blog Mensajes

Comentarios