অতলে অন্তরীণ – ৫৮

একত্রিশ জুলাই, রবিবার

আজও সকালে তৈরি হয়ে থাকি। দুপুরের পর ঙ জানিয়ে দেন যে আজ হচ্ছে না। গতকা

একত্রিশ জুলাই, রবিবার

 

আজও সকালে তৈরি হয়ে থাকি। দুপুরের পর ঙ জানিয়ে দেন যে আজ হচ্ছে না। গতকালের পত্রিকায় একটি খবরের শিরোনাম ছিল তসলিমা নাসরিন প্রসঙ্গে নরওয়ে, জার্মানি এবং ইউরোপীয় কমিশনের বক্তব্য। খবরটি এরকম, জার্মান দূতাবাসের কাউন্সিলার বলেছেন, ১৬ জাতির ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে তসলিমা নাসরিনকে দেশত্যাগের অনুমতি প্রদানের জন্য সরকারের কাছে ফরমাল অনুরোধ জানানো হয়েছে কিন্তু এখনও কোনও জবাব তাঁরা পান নি। এদিকে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, এরকম খবর তাঁরা পত্রিকায় পড়েছেন, কিন্তু সরকারিভাবে কিছু জানেন না। ইউরোপীয় কমিশনের চেয়ারম্যান একজন জার্মান। জার্মান দূতাবাসে জানতে চাওয়া হয়, তসলিমাকে দেশত্যাগের অনুমতিদানের জন্য চাপ সৃষ্টি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হন্তক্ষেপের সামিল বলে তিনি মনে করেন কি না। দূতাবাস থেকে বলা হয়, চাপ সৃষ্টির কোনও প্রশ্নই আসে না। ইউরোপীয় কমিশনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা কেবল নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেছেন এবং তা বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়েছে, তা সরকারের ওপর কোনও চাপ সৃষ্টি নয় এবং তা গ্রহণ করা বা না করা সম্পূর্ণ সরকারের একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমন অনুরোধ করে বাংলাদেশের আইনকে নিষিক্রয় করতে সহায়তা করছে কি না এবং তা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলছে কি না জানতে চাওয়া হলে দূতাবাসের মুখপাত্র বলেন, ইউরোপীয় কমিশনের মতামত বা অনুরোধ সরকারকে জানানো ছাড়া বিষয়টির ওপর কোনও মতামত দেওয়া তাঁর দায়িত্ব নয়। ইউরোপীয় কমিশন কেন একজন মহিলার পক্ষে এমন অবস্থান নিচ্ছে যে মহিলা দেশের আপামর জনসাধারণের ধর্ম বিশ্বাসকে আঘাত করেছে এই প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, সমগ্র বিষয়টি ব্যাখ্যার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করছে এবং ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে কি ঘটছে তার ওপর নজর রেখেই দেখতে হবে। ইউরোপীয় কমিশন মানুষের বাক স্বাধীনতাকে মূল্য দেয় এবং এই বিষয়টিকে এই দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখতে হবে। ঢাকার নরওয়ের মিশন প্রধানকে বিষয়টির ওপর মন্তব্য করতে বলা হলে তিনি বলেন, বাক স্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্য থেকেই নরওয়ে সরকার বিষয়টি দেখছেন। মিশন প্রধান সরেজমিনে সব দেখছেন এবং নরওয়ে সরকারের কাছে নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠাচ্ছেন। নরওয়ের পত্রিকায় বাংলাদেশের নারীদের ওপর নির্যাতন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওপর প্রতিদিন খবর ছাপা হচ্ছে, জনগণের বিশাল একটি অংশ তসলিমা নাসরিনের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য নরওয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। নরওয়ের সরকারকে নরওয়েবাসীদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েই কাজ করতে হয়। বাক স্বাধীনতার নামে উগ্র মতামত বলা ও ছাপানো একটি সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মবিশ্বাস ও অনুভূতিকে পদদলিত করা কতটুকু সমর্থনযোগ্য, এই প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান। বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তাই বলে বাংলাদেশের মানুষকে কেন মৌলবাদী বলা হচ্ছে, জিজ্ঞেস করা হলে মিশন প্রধান বলেন যে কিছুসংখ্যক উগ্রপন্থী ছাড়া বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ শান্তিপ্রিয় ও সহনশীল। এরপর বেশ কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্নের জবাব নরওয়ের মিশন প্রধান দেননি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মিশন প্রধান বলেছেন, তসলিমা নাসরিনকে নরওয়ের একটি সেমিনারে যোগ দেয়ার নিমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে, তবে তিনি যেতে পারবেন কি না তা একমাত্র বাংলাদেশ সরকারই বলতে পারবে। বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থান হচ্ছে কি না জানতে চাওয়া হলে মিশন প্রধান বলেন, তিনি কেবল পত্র পত্রিকায় যা প্রকাশ হচ্ছে সে সম্পর্কেই জানেন, বেশি জানেন না। ব্লাসফেমি আইন সম্পর্কে বলেন, বর্তমান বিশ্বে এটি অচল এবং এটি মানবাধিকারের পরিপন্থী।

 

কূটনীতি ব্যাপারটি অদ্ভুত। এটি আমি বুঝি কম। কী কথা বলতে হবে, কী কথা বলতে হবে না তা আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। কূটনীতিকরা জানেন কতটুকু বলতে হয়, কোথায় থামতে হয়। কি কথার কি উত্তর দিতে হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং নরওয়ে বাংলাদেশকে সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন আমাকে দেশত্যাগের অনুমতি দিতে। সরকার এটিকে চাপ হিসেবে বা সুযোগ হিসেবে নিয়েছে কি না তা জানি না। কি ঘটছে সরকারে এবং বিদেশি দূতাবাসে, তা এ বাড়ি ও বাড়ির অন্ধকার কোণে লুকিয়ে থেকে আমার বোঝা সম্ভব নয়। তবে এটা ঠিক বিদেশি সরকারগুলোর কোনও দায় পড়েনি আমাকে বিপদমুক্ত করতে, বিদেশি লেখকগোষ্ঠী আর মানবাধিকার সংস্থাগুলোই কেবল মাথা ঘামাচ্ছে, তারা যে কোনও রাজনীতির ঊর্ধ্বে বলেই ঘামাচ্ছে, তারা ব্যক্তি স্বাধীনতা, লেখকের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারে বিশ্বাস করে বলেই ঘামাচ্ছে। তারা মাথা না ঘামালে বিদেশি কোনও সরকার আজ আমাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসতো না, কারণ আমি তাদের কোনও স্বার্থরক্ষার কাজে লাগব না।

 

ঠকে যখন মনের কথা জানালাম, তিনি বললেন —তোমার খবরটি হোল ওয়ার্ল্ডের মিডিয়াতে গেছে। এখন ইউরোপের দেশগুলো ক্রেডিট নিতে চাইবে তোমাকে বাঁচানোর। সুতরাং বিদেশি সরকারগুলো যে করেই হোক ঝাঁপিয়ে পড়বেই তোমার জন্য কিছু করতে। বলে তো বেড়ানো যাবে যে আমরা মানবাধিকারের পক্ষে এই কাজটি করেছি। এটিই


Rx Munna

446 Blog posting

Komentar