সংসারধর্ম

সংসারধর্ম

১.

ওঠো ওঠো।

ওঠো ওঠো বেলা অনেক।

সারারাত ঘুম হয়নি তার, ভোরের দিকে ক্লান্তিতে চোখ বুজে এস?

সংসারধর্ম

 

১.

 

ওঠো ওঠো।

 

ওঠো ওঠো বেলা অনেক।

 

সারারাত ঘুম হয়নি তার, ভোরের দিকে ক্লান্তিতে চোখ বুজে এসেছিল। ডাক শুনে সে ধড়ফড়িয়ে ওঠে, এ কোথায় নীলা, এ তার কলকাতার ঘর নয়, এ তার বিছানা বালিশ নয়। কিষানের দিকে চোখ পড়তে, কিষানের মোটা কালো মোচে, হোঁদল কুতকুতে চোখে, বসন্তের দাগ বসা গালে, তার চেতন ফেরে, এ তার স্বামীর ঘর, স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে সে এখানে, এই রু দ্য ফুবো সানদানিতে, এই ছ’তলায়, এই প্যারিসে, ধবধবে সাদা বিছানা বালিশে। কিষান কোমরে তোয়ালে পেঁচিয়ে স্নানঘরের দিকে যেতে যেতে বলে, দেখো তো কাল রাতের বাসনপত্র ওভাবেই পড়ে আছে।

 

ওসব যে পড়ে আছে, নীলা রাতেই দেখেছে। বাসনপত্র কলকাতার বাড়িতে এরকম পড়ে থাকলে কোনওদিন সে ফিরে তাকায়নি। বাসন সরিয়ে নেবার, ধোবার, গুছিয়ে তুলবার লোক আছে। কিষান স্মরণ করিয়ে দেয়, কলকাতায় রাজার হালে বাস করা গেলেও প্যারিসে যায় না। এখানে মেথরের কাজও নিজের হাতে করতে হয়। কলকাতায় হলে নীলা অনেকক্ষণ বিছানায় শুয়েই কাটাত। চিত্রা চা আর খবরের কাগজ দিয়ে গেলে চা খেয়ে কাগজ পড়ে তবে বিছানা ছাড়ত। বিছানা ছেড়ে আরেক দফা চা। এ বাড়িতে চিত্রার বংশও নেই। নীলাকেই উঠতে হবে। উঠে কাল রাতের এঁটো বাসনপত্রের ঝামেলাও নীলাকেই ঘোচাতে হবে। ওঠে সে।

 

সুতি একটি শাড়ি গায়ে জড়িয়ে, চা চড়াতে রান্নাঘরে ঢুকে আঁতিপাতি করে খুঁজেও চা পাতা না পেয়ে, স্নানঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, চা পাতা কোথায় রেখেছ?

 

কিষান স্নান সেরে দাড়ি কামাচ্ছিল, অর্ধেক গাল ফেনায় সাদা, অর্ধেক কামানো। আয়না থেকে মুখ ফিরিয়ে, চোখে বিস্ময়ের ফেনা তুলে বলে, চা কে খাবে, চা তো আমি খাই না!

 

বলো কী! চা খাও না তুমি?

 

নীলার নেত্ৰমলে সংশয়। কৈশোর পার হয়েছে, অথচ চা পান করে না, ভারতবর্ষে এমন লোক নীলা কখনও দেখেনি।

 

নাহ।

 

আবার আয়না। ফেনার গাল টান করে ধরা। ফেনার গালে ধারালো ব্লেড।

 

আমার চা না হলে চলে না, সকালে অন্তত দু কাপ আমার লাগেই। নীলা দরজায় দাঁড়িয়ে আঙুলে চোখের পিঁচুটি মুছতে মুছতে বলে।


Rx Munna

446 Blogg inlägg

Kommentarer

📲 Download our app for a better experience!