নতুন জীবন

নতুন জীবন

জীবনের কী মূল্য আছে, জীবন যদি যে কোনও সময় ফুরিয়ে যায়, যে কোনও মুহূর্তে মলিনার মতো ফুরিয়ে যায়??

নতুন জীবন

 

জীবনের কী মূল্য আছে, জীবন যদি যে কোনও সময় ফুরিয়ে যায়, যে কোনও মুহূর্তে মলিনার মতো ফুরিয়ে যায়।

 

.

 

নীলা জানে জীবনের কোনও অর্থ নেই। জেনেও সে হাবিতাত থেকে, ফন্যাক, বি এইচ ভি থেকে, গ্যালারি লাফায়েত থেকে ঘর সাজাবার জিনিস কেনে। প্রয়োজনের তো বটেও, প্রয়োজনের বাইরেও অনেক। টাকা থাকলেও বাড়ি ভাড়া হয়তো পাওয়া যায় না, কিন্তু বাড়ি সাজাবার যা কিছু আছে, সবই পাওয়া যায়। বালিগঞ্জের বাড়িটি মলিনা কখনও পছন্দ মতো সাজাতে পারেননি। সোফা কোথায় বসবে, বিছানাগুলো জানালার কাছে না কি দেয়ালের কাছে, কোন আলমারি কোনদিকে, খাবার টেবিল এদিকে না কি ওদিকে, এসব সিদ্ধান্ত সব অনির্বাণই নিতেন। এমনকী রান্নঘরের সিদ্ধান্তও। আজ খিচুড়ি হবে নাকি সাদা ভাত হবে, মাংস হবেনা মাছ হবে, মাছ হলে মাছের সঙ্গে কি আলু যাবে না পটল, তাও। মলিনা ছিলেন আদেশ পালন করার জন্য। অনির্বাণ বুঝিয়ে দিতেন, এ বাড়ি মলিনার নয়, বাড়ি অনির্বাণের, সুতরাং অনির্বাণ যেভাবে ইচ্ছে করেন, সেভাবেই এ বাড়ির প্রতিটি প্রাণী, বাড়ির প্রতিটি কীটপতঙ্গ, ইটপাথর, গাছপাতা, লতাগুল্ম অব্দি সে ভাবে চলবে। চলেছেও সেভাবে। ততদিন পর্যন্ত চলেছে, যতদিন না নীলা দেশ ছাড়ল আর মলিনা জগৎ।

 

বিকেলে দোকানের লোকেরা এসে বাড়িতে জিনিসপত্র রেখে যায়, নীলা যেভাবে যেখানে চেয়েছে রাখতে, ঠিক সেখানেই। আরও দুদিন যায় তার বাড়ি পুরো সাজাতে। বারান্দায় নানা রঙের ফুলের টব বসিয়ে দেয়। খাবার টেবিলের ওপর অর্কিড, সোফা-টেবিলের ওপর লিলি আর যে টেবিলটিতে কম্পিউটার রেখেছে, বেনোয়ার কখনও যদি প্রয়োজন হয় কম্পিউটার, সে টেবিলের ফুলদানিতে রাখে দশটি তাজা লাল গোলাপ।

 

বাড়ি সাজিয়ে নীলা নিজেই ঘরে ঘরে হাঁটে আর মুগ্ধ হয়। একটি শোবার, একটি বসার, একটি লেখাপড়া করার, আর একটি অতিথির শোবার। এরপর কী নীলা? সব তো হল! নীলা নিজেকেই বলে। নিজেকেই উত্তর দেয়, সব কই হল। একা লাগছে তো!

 

.

 

স্নান সেরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাস্তার লোক দেখতে দেখতে নীলা ভাবে কাকে তার চাই। কে হলে তার এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ভাল লাগবে। এরকম যদি হত, দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ, দরজা খুলে সে দেখবে মলিনা দাঁড়িয়ে আছেন! প্যারিসে কেমন আছে নীলা, মলিনা দেখতে এসেছেন। মলিনাকে জড়িয়ে ধরে, নীলা বলবে, তোমাকে আমি ভালবাসি মা, যা কোনওদিনই তার বলা হয়নি। মলিনাকে বিছানায় শুইয়ে নিজেও সে শোবে পাশে, তারপর জগতের নিষ্ঠুরতার কথা সে বলবে, সব বলবে মলিনাকে। আর কাউকে তো বলা হয় না, নিজের ভেতর জমিয়ে রাখতে রাখতে, মাঝে মাঝে তার বুক এমন ভারী হয়ে থাকে যেন নিতে কষ্ট হয়।

 

সব আয়োজন শেষে, স্নান শেষে, ক্লান্ত নীলা মলিনার সঙ্গে মনে মনে কথা বলে। ভুলে যায় বেনোয়ার জন্য তার অধীর ব্যাকুলতার কথা। দিন পার হয় ভুলে থেকে, আর রাত যখন শকুনি শরীরে করে ঝুপঝুপ অন্ধকার নিয়ে আসতে থাকে, এ ঘর ও ঘর একা একা হাঁটে নীলা আর নিজের ছায়াটিই দীর্ঘ হতে হতে যখন তার দিকেই এগোতে থাকে, বেনোয়াকে সে তার নতুন জীবনের নতুন ঠিকানা জানায়।

 

তুমি কী করছ না করছ, আমাকে জানাবে না, আমি কি তোমার কেউ হই না নাকি?

 

 বেনোয়ার অভিযোগের


Rx Munna

446 Blog posts

Comments