০১ঘ.
সুধাময় ঢাকা এসে তাঁতিবাজারে উঠেছিলেন। তাঁর মামাতো দাদার বাড়ি ছিল তাঁতিবাজার। অসিত রঞ্জনই ছোট একটি বাড়ি দেখে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন—সুধাময়, তুমি বড়লোকের ছেলে। তুমি কি থাকতে পারবে ভাড়া বাড়িতে?
সুধাময় বলেছিলেন—কেন পারব না? আর মানুষ থাকছে না?
—তা থাকছে। কিন্তু তুমি তো জন্ম থেকে কোনও অভাব দেখনি। আর নিজের বাড়ি বিক্রি করলেই বা কেন? মায়া ছোট মানুষ। ও তো আর যুবতী মেয়ে ছিল না। নিশ্চয়ই সে ধরনের কোনও ঘটনা ঘটত না। আমাদের উৎপলাকে তো পাঠিয়েই দিলাম কলকাতায়। ও তো কলেজে যেতে পারত না। ওকে তুলে নেবে, ধরে নেবে এসব বলত পাড়ার ছেলেরাই। ভয়ে পাঠিয়ে দিলাম। এখন তিলজলায় ওর মামার বাড়িতে আছে। মেয়ে বড় হলে বড় দুশ্চিন্তা হয় দাদা।
অসিত রঞ্জনের কথাকে উড়িয়ে দিতে পারেন না। সুধাময়। হ্যাঁ দুশ্চিন্তা হয় বৈকি। তিনি ভাবতে চান মুসলমানের মেয়ে বড় হলেও তো দুশ্চিন্তা হয়। সুধাময়ের এক ছাত্রীকে রাস্তায় ফেলে শাড়ি টেনে খুলেছিল একদল যুবক, মেয়েটি তো হিন্দু ছিল না, ছিল মুসলমান। যুবকরাও মুসলমান ছিল, তবে? সুধাময় নিজেকে সান্ত্বনা দেন আসলে হিন্দু মুসলমান নয়, দুর্বল পেলে সবলেরা অত্যাচার কিছু করবেই। নারী দুর্বল বলে সবল পুরুষেরা অত্যাচার করছে। অসিত রঞ্জন তাঁর দুই মেয়েকেই কলকাতায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। টাকাপয়সা ভাল রোজগার করেন, সোনার দোকান আছে ইসলামপুরে, নিজেদের দোতলা একটি বাড়ি আছে পুরনো, এটির সংস্কারও করেননি তিনি। নতুন বাড়ি করবেন, তাতে উৎসাহ নেই কোনও। সুধাময়কে একদিন বললেন—টাকাপয়সা খরচ কোর না। দাদা। জমাও। বাড়ি বিক্রির টাকা পারো তো পাঠিয়ে দাও, আমার আত্মীয়রা আছে ওখানে, জমি-টমি রেখে দেবে।
সুধাময় জিজ্ঞেস করেছেন–ওখানে মানে?
অসিত রঞ্জন গলা খাটো করে বলেছেন—কলকাতায়। আমিও কিনে রেখেছি।
সুধাময় গলা উঁচু করে বলেছেন—তুমি এখানে টাকা কামাবে। আর খরচা করবে গিয়ে ওদেশে? রীতিমত দেশদ্রোহী বলা যায় তোমাকে।
অসিত রঞ্জন অবাক হতেন। সুধাময়ের কথায়। ভাবতেন কোনও হিন্দুর মুখে এ ধরনের কথা তিনি তো শোনেননি। বরং টাকা পয়সা এখানে যথেচ্ছ খরচ না করে জমিয়ে রাখবার পক্ষপাতী সকলে। কখন কী হয় বলা তো যায় না। এখানে গেড়ে বসব,