লজ্জা (১২) সুরঞ্জন বিছানা ছাড়ে

সুরঞ্জন বিছানা ছাড়ে। সকাল দশটায়। সে দাঁত মাজছিল বারান্দায় দাঁড়িয়ে। শুনতে

সুরঞ্জন বিছানা ছাড়ে। সকাল দশটায়। সে দাঁত মাজছিল বারান্দায় দাঁড়িয়ে। শুনতে পায় খাদেম আলীর ছেলে আশরাফ কিরণময়ীকে বলছে-মাসিম, আমাদের বাড়ির পুটু কাল সন্ধের দিকে মায়ার মত এক মেয়েকে গেণ্ডারিয়া লোহার পুলের নীচে ভেসে থাকতে দেখেছে।

 

রঞ্জনের টুথব্রাশ ধরা হাতটি হঠাৎ পাথর হয়ে যায়। সারা শরীরে ইলেকট্রিক কারেন্ট বইলে যেমন লাগে, তেমন লাগে তার শরীরে। ভেতর থেকে কোনও কান্নার শব্দ আসে না। স্তব্ধ হয়ে আছে বাড়িটি। যেন কথা বললেই গমগম করে বাতাসে প্রতিধ্বনি হবে। যেন সে ছাড়া হাজার বছর ধরে এ বাড়িতে কেউ ছিল না। বাইরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সুরঞ্জন বোঝে, গতরাতের বিজয় উৎসবের পর শহরের ঘুম এখনও ভাল করে ভাঙেনি। টুথব্রাশ হাতে নিয়েই সে দাঁড়িয়ে ছিল, হায়দার জার্সি পরে রাস্তায় হাঁটছিল, তাকে দেখে থামে, চোখ পড়েছে বলেই ভদ্রতা করে থামে সে, ধীর পায়ে সামনে আসে, জিজ্ঞেস করে–কেমন আছ?

 

সুরঞ্জন হেসে বলে—ভাল।

 

এর পরই মায়ার প্রসঙ্গ উঠবার কথা কিন্তু হায়দার সে প্রসঙ্গ তোলে না। সে রেলিং-এ হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। কলে–গতকাল শিবিরের লোকেরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলে যে গণকবরের স্মৃতিফলক ছিল তা ভেঙে দিয়েছে।

 

সুরঞ্জন থুক করে একদলা পেস্ট ফেলে মাটিতে, বলে— গণকবর মানে?

 

— গণকবর মানে তুমি জানো না? হায়দার বিস্মিত চোখে তাকায় সুরঞ্জনের দিকে।

 

মাথা নাড়ে সুরঞ্জন, সে জানে না। অপমানে হায়দারের মুখ নীল হয়ে ওঠে। সে বুঝতে পারে না। সুরঞ্জন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ কেন্দ্রের নেতা হয়েও গণকবর মানে জানে না বলছে কেন। শিবিরের লোকেরা গণকবরের স্মৃতিফলক ভেঙে দিয়েছে, ভেঙে দিক। ওদের হাতে অস্ত্ৰ এখন, অস্ত্ৰ ওরা কাজে লাগাচ্ছে, কে বাধা দেবে ওদের! ধীরে ধীরে ওরা ভেঙে ফেলবে অপরাজেয় বাংলা, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা, ভেঙে ফেলবে সাবাস বাংলাদেশ, জয়দেবপুরের মুক্তিযোদ্ধা। এত বাধা দেবে কে? দু-একটা মিছিল মিটিং হবে। জামাত শিবির যুব কমান্ডের রাজনীতি বন্ধ হোক’ বলে কিছু প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল চিৎকার করবে-এই তো! এতে কি হবে, সুরঞ্জন মনে মনে বলে কচু হবে।

 

হায়দার মাথা নীচু করে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবার পর বলে–শুনেছি তো, পারভিন এখন এখানে। ওর ডিভোর্স হয়ে গেছে।

 

সুরঞ্জন শোনে, বিনিময়ে কিছু বলে না। পারভিনের ডিভোর্স হওয়াতে তার কোনও কষ্ট হয় না। বরং মনে হয় বেশ হয়েছে। মজা হয়েছে। হিন্দুর কাছে বিয়ে দাওনি, মুসলমানের কাছে দিয়েছিলে, এখন কেমন? পারভিনকে সে মনে মনে একবার রেপ করে। এই সকলে দাঁত মাজা অবস্থায় রেপ তেমন স্বাদের হয় না, তবু মনে মনের রেপ-এ স্বাদ থাকে।


Rx Munna

446 Blog Postagens

Comentários

📲 Download our app for a better experience!